হাওর ডেস্ক::
তারুণ্যের ভেলায় ভেসে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছিল অনেকদিন ধরে। কিন্তু প্রত্যাশিত গতি মিলছিল না। শেষ পর্যন্ত তাই পুরোনো আশ্রয়েই ফিরে যেতে হলো। এশিয়া কাপের বাংলাদেশ দলে ফেরানো হলো অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ ও পেসার জাহানারা আলমকে। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন উইমেন’স প্রিমিয়ার লিগে ভালো পারফরম্যান্সের পুরস্কার পেলেন দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
পুরোনো এই দুই সেনানীর সঙ্গে এশিয়া কাপের বাংলাদেশ দলে জায়গা পেয়েছেন উঠতি দুই প্রতিভাও। দলে জায়গা পেয়েছেন ওপেনার ইশমা তানজিম ও বাঁহাতি স্পিনার সাবিকুর নাহার জেসমিন।
দল ঘোষণার পর রোববার বিসিবির ভিডিও বার্তায় নারী দলের নির্বাচক সাবেক ক্রিকেটার সাজ্জাদ আহমেদ বলেন, আগামী অক্টোবরে দেশের মাঠে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকিয়েই পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে।
“অনেক দিন ধরেই আমরা একটা দল নিয়ে খেলার চেষ্টা করেছি। খুব বেশি পরিবর্তনের দিকে যাইনি। তবে সামনে যখন আমাদের দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এর আগে আমাদের একটিই মাত্র প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট আছে, এই এশিয়া কাপ। এজন্যই আমরা কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। যেসব জায়গায় দলকে আরেকটু শক্তিশালী করা যায়, তা চেষ্টা করেছি।”
৫০ ওয়ানডে ও ৮৪ টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞ রুমানা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবশেষ খেলেছেন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ৫২ ওয়ানডে ও ৭৮ টি-টোয়েন্টি খেলা পেসার জাহানারা দেশের জার্সিতে সবশেষ খেলেছেন গত বছরের মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তাদের ফিটনেস ও পারফরম্যান্সে পড়তির ছাপ ছিল। গত এক বছর ধরেই তাদেরকে বাইরে রেখে চেষ্টা করা হয় অন্যদের।
তবে এবারের প্রিমিয়ার লিগে ভালো পারফর্ম করেন দুজনই। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে মোহামেডানের শিরোপা জয়ে অবদান রাখেন রুমানা। ৬ ইনিংসে ৪৮.২০ গড়ে ২৪১ রান করেন তিনি, ওভারপ্রতি স্রেফ ১.৭৯ রান দিয়ে ১৭টি উইকেট শিকার করেন ৮.৪৭ গড়ে। আবাহনীর হয়ে ৯ ম্যাচে ২৫ উইকেট শিকার করে জাহানারা ছিলেন লিগের সফলতম বোলার।
তাদেরকে ফেরানোর পেছনে অভিজ্ঞতার পাশাপাশি লিগের পারফরম্যান্সের কথাও তুলে ধরলেন নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ।
“রুমানা ও জাহানারা প্রায় এক বছর দেশের বাইরে ছিল। আমাদের দেশে মেয়েদের ক্রিকেটে অনুশীলনের জায়গা খুব কম, ঢাকা ছাড়া। তার পরও ওরা যে এই পর্যায়ে ফিটনেস ধরে রেখেছে এবং প্রিমিয়ার লিগে পারফর্ম করেছে, এটা দারুণ এবং সত্যিকার অর্থে বিশাল ব্যাপার ওদের দুজনের জন্য ও আমাদের জন্যও। ওদের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে বাড়তি সুবিধা দেবে। আমরা চেষ্টা করেছি অভিজ্ঞতা, প্রতিভা ও তারুণ্য মিলিয়ে ব্যালান্সড ও সুন্দর একটি দল গড়ার।”
গত কয়েকটি সিরিজে বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডারে দুর্বলতা ফুটে উঠেছে প্রকট হয়ে। রুমানার অন্তর্ভুক্তি সেখানে ভরসা জোগাতে পারে। তার কার্যকর লেগ স্পিন তো আছেই। পেস বোলিংয়ে দলকে বলতে গেলে একাই টেনে নিচ্ছিলেন তরুণ মারুফা আক্তার। জাহানারা সেখানে অভিজ্ঞতার আলো নিয়ে আসতে পারেন।
এশিয়া কাপ যদিও হবে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে, প্রিমিয়ার লিগে হয়েছে ৫০ ওভারের ক্রিকেট, তবু আর কোনো ঘরোয়া আসর এখন নেই বলে এই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সকেই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে দল গঠনে।
টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ধুঁকছে অনেক দিন ধরেই। অসুস্থতার কারণে এখনও দলের বাইরে অভিজ্ঞ শামীমা সুলতানা। আরেক অভিজ্ঞ ফারজানা হককে এই সংস্করণে রাখা হয় না বেশ কিছু দিন ধরেই। নতুন আশা নিয়ে দলে নেওয়া হয়েছে ইশমা তানজিমকে। এবারের প্রিমিয়ার লিগে তার খেলা নজর কেড়েছে নির্বাচক সাজ্জাদের।
“ইশমা তানজিম খুব সাবলীল ওপেনিং ব্যাটার। তার হাতে দারুণ কিছু শট আছে এবং টেকনিক্যালি খুব আঁটসাঁট। এবার প্রিমিয়ার লিগে ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছে। কিছু ভালো ম্যাচে ও রান করেছে। এটা আমাকে প্রলুব্ধ করেছে ওকে দলে নেওয়ার জন্য।”
এবারের লিগে ৯ ইনিংসে ৩৭.৬৮ গড়ে ২৬৫ রান করেছেন ইশমা। স্ট্রাইক রেট ছিল ঠিক ১০০।
এই লিগেই ৭ ইনিংসে ১৪ উইকেট নিয়েছেন সাবিকুন নাহার জেসমনি। তাকে দলের নেওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করলেন নির্বাচক।
“সাবেকুন নাহার জেসমিন বাঁহাতি স্পিনার। আমার মনে হয়েছে, নাহিদার সঙ্গে আমার আরেকজন বাঁহাতি স্পিনার দরকার, যার গতি, বৈচিত্র ও নিশানা নাহিদার ওপর চাপ কমিয়ে দেবে। আমার মনে হয়, জেসমিনের খুব ভালো ভবিষ্যৎ আছে।”
দলে জায়গা হারিয়েছেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ফাহিমা খাতুন ও ব্যাটার সোবহানা মোস্তারি। অনেক সুযোগ দেওয়ার পরও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি সোবহানা। ব্যাটে-বলে ফাহিমার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স একদমই যাচ্ছেতাই।
এই দুজনকে অবশ্য স্ট্যান্ড-বাই তালিকায় রাখা হয়েছে। চোটাক্রান্ত পেসার ফারিহা তৃষ্ণা নেই দলে।
আগামী ১৯ থেকে ২৮ জুলাই শ্রীলঙ্কার ডাম্বুলায় হবে উইমেন’স এশিয়া কাপের নবম আসর। ২০১৮ আসরের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপে খেলবে শ্রীলঙ্কা, মালেয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। ‘এ’ গ্রুপে ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গী নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২০ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
বাংলাদেশ দল: নিগার সুলতানা (অধিনায়ক), নাহিদা আক্তার (সহ-অধিনায়ক), মুর্শিদা খাতুন, দিলারা আক্তার, জাহানারা আলম, রুমানা আহমেদ, রিতু মনি, মারুফা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার, রাবেয়া খান, সুলতানা খাতুন, রুবাইয়া হায়দার, শরিফা খাতুন, ইশমা তানজিম, সাবিকুন নাহার জেসমিন।
স্ট্যান্ড-বাই: সোবহানা মোস্তারি, ফাহিমা খাতুন, তাজ নাহার, পুজা চক্রবর্তী।