হাওর ডেস্ক::
বাংলাদেশের যে মোট বাণিজ্য ঘাটতি, তার চেয়ে বেশি ঘাটতি থাকছে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে।
রোববার সংসদ প্রশ্নোত্তরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বিশ্বের ২১০ টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন রয়েছে। এর মধ্যে ৮২টি দেশের সঙ্গে ঘাটতিতে আছে দেশ।
২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫২৩ কোটি ৯৫ লাখ বা ১৫ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। একক দেশ হিসেবে চীনের সঙ্গেই ঘাটতি ১ হাজার ৭১৪ কোটি ৯২ লাখ বা ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ডলার।
অর্থাৎ সামগ্রিক ঘাটতির চেয়ে দুই বিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি ঘাটতি এশিয়ার এই দেশটির সঙ্গে।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্ন ও উত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
সংরক্ষিত আসনের শাম্মী আহমেদের প্রশ্নে জানানো হয়, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৭১৬ কোটি ৮ লাখ ডলার।
বর্তমানে তামাক ও মদ জাতীয় পণ্য ছাড়া সকল পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ায় ভারতের সঙ্গে ঘাটতি কমছে এবং ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ প্রথমবারের মত দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
নাটোর-১ আসনের আবুল কালামের প্রশ্নে টিটু জানান, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ ছাড়া অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যে বাংলাদেশ ঘাটতিতে আছে।
সার্কভুক্ত দেশগুলোরে সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যও বাড়ছে।
২০১১-১২ অর্থবছরে এসব দেশে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৭ কোটি ৩ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ২৩৬ কোটি ২১ লাখ ডলারের বেশি।
গত অর্থবছরে ভারতে প্রথমবারের মত ২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করলেও বাণিজ্য ঘাটতি ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
একই সময়ে এসব দেশগুলো থেকে আমদানি ৫৩৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ১ কোটি ৩ লাখ ডলার।
ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে মে পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ২৭ লাখ ডলার। এ সময়ে সেবাখাতের রপ্তানি আয় ছিল ৫৮৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।
তৈরি পোশাক খাতের কর্মী এখন ৫০ লাখ
ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, দেশে তৈরি পোশাকখাতে ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক রয়েছে।
এই শ্রমিকদের মধ্যে বিজিএমইএর নিয়ন্ত্রণাধীন কারখানার শ্রমিকের সংখ্যা ৩৩ লাখের বেশি। এই শ্রমিকদের মধ্যে ৫২ শতাংশের কিছু বেশি নারী।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর হিসাব অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতের কর্মী সংখ্যা এখন ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে।
পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের আরেক সমিতি বিকেএমইএ নিয়ন্ত্রিত নিট সেক্টরে শ্রমিকের সংখ্যা ১৭ লাখের কিছু বেশি। এই খাতে নারী শ্রমিক ৬২ শতাংশ।
দুই খাত মিলিয়ে নারী শ্রমিকের হার ৫৫.৫৭ শতাংশ বা প্রায় ২৮ লাখ।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৪৬.৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি রয়েছে। প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০.২৭ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে সময়ে রপ্তানি আয় রয়েছে ৪৩.৮৫ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
কোভিড-১৯ এর প্রভাব, বৈশ্বিক মহামারী, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং আমেরিকা ও ইউরোপে মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানি আয়ে শ্লথ গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংরক্ষিত আসনের পারভীন জামানের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের ১১ জুন পর্যন্ত ১৫ বছরে বিদেশে ১১ লাখ ১৪ হাজার ৩১২ জন নারী কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী কাজ করতে গেছেন সৌদি আরবে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কাজ করতে গেছেন ১১ লাখের বেশি নারী শ্রমিক, যাদের বেশিরভাগ গেছেন সৌদি আরবে।
এক যুগের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি
সরকারি দলের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.০২ শতাংশ যা গত এক যুগের সর্বোচ্চ।
রেমালে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি
সাতক্ষীরা-৪ আসনের এস এম আতাউল হকের প্রশ্নের জবাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৮১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
ঘূর্ণিঝড় মেরালের তাণ্ডবে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে হিসাব করেছে সরকার।
চট্টগ্রাম-১ আসনের মাহবুব উর রহমানের প্রশ্নে তিনি জানান, এই ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত লোক সংখ্যা ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮১৭ জন।
দুর্যোগ মোকাবিলায় নগদ ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, সাড়ে ৫ হাজার টন চাল, ১১ হাজার ৫০০ ব্যাগ শুকনো খাবার, ২ কোটি ৪৫ হাজার টাকার শিশু খাদ্য, ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার গো-খাদ্য, ৩০০ বান্ডেল ঢেউটিন ও গৃহ মঞ্জুরি বাবদ ৯ লাখ টাকা দিয়েছে।