হাওর ডেস্ক::
মুহুর্মুহু আক্রমণ করল আর্জেন্টিনা। প্রবল প্রতিরোধের দেয়াল তুলল চিলি। মেসি-আলভারেসদের একের পর এক আক্রমণ সে দেয়ালের সামনে মুখ থুবড়ে পড়তে থাকল, পথ আগলে দাঁড়াল পোস্টও। অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে শেষ দিকে কাঙ্ক্ষিত গোল এনে দিলেন লাউতারো মার্তিনেস। সবার আগে কোপা আমেরিকার শেষ আটে জায়গা করে নিল শিরোপাধারী আর্জেন্টিনা।
নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালের ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছে লিওনেল স্কালোনির দল। ২০১৫ ও ২০১৬ আসরের ফাইনালিস্টদের লড়াইয়ে বদলি নেমে ব্যবধান গড়ে দেন মার্তিনেস।
স্কোর লাইন যা বলছে, মাঠের লড়াইয়ে পার্থক্য ছিল এর চেয়ে অনেক বড়। ৬১ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ২২ শট নেয় আর্জেন্টিনা, এর নয়টি ছিল লক্ষ্যে। এর বিপরীতে চিলি শট নিতে পারে কেবল তিনটি, অবশ্য তিনটিতে চমৎকার সেভ করেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
আর্জেন্টিনা গোলরক্ষকের চেয়ে অনেক ব্যস্ত সময় কাটে ক্লাওদিয়ো ব্রাভোর। নয়টি দারুণ সেভ করেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি চিলি গোলরক্ষক।
যুক্তরাষ্ট্রের এই মাঠেই ২০১৬ আসরের ফাইনালে ট্রাইবেকারে চিলির কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। সেই মাঠেই জিতে, মধুর প্রতিশোধ নিয়ে, গ্রুপ সেরা হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল প্রতিযোগিতার ১৫বারের চ্যাম্পিয়নরা।
টানা ২ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে স্কালোনির দল। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে কানাডা। ১ পয়েন্ট করে নিয়ে পরের দুটি স্থানে চিলি ও পেরু।
বরাবরেই মতোই আক্রমণাত্মক শুরু করে আর্জেন্টিনা। তবে রক্ষণে বাড়তি মনোযোগ দিয়ে তাদের দারুণভাবে ঠেকিয়ে রাখে চিলি।
ডি বক্সের আশেপাশে অনেক খেলোয়াড়ের ভিড়ে নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করতে ভুগছিল আর্জেন্টিনা। ২২তম মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগ পায় তারা। নিকো গনসালেসের ক্রসে হুলিয়ান আলভারেসের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান চিলি গোলরক্ষক ব্রাভো।
ম্যাচে লক্ষ্যে এটাই প্রথম শট।
৩০তম মিনিটে দুর্বল হেডে দারুণ একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন আনহেল দি মারিয়ার জায়গায় শুরুর একাদশে ফেরা গনসালেস।
ছয় মিনিট পর ডি বক্সের বাইরে থেকে গতিময় শটে গোলের চেষ্টা করেন মেসি। হাল ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্রাভো। ভাগ্য ভালো তার, বল পোস্টের বাইরের দিকে লেগে বেরিয়ে যায়।
৩৮তম মিনিটে ফের একটুর জন্য বেঁচে যায় চিলি। নাহুয়েল মলিনার ক্রস বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো নিজেদের জালেই পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন এরিক পুলগার। বল বেরিয়ে যায় পোস্ট ঘেঁষে!
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শটে চেষ্টা করেন আলভারেস। কিন্তু একটুর জন্য লক্ষ্যে রাখতে পারেননি।
৬২ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে বিরতির আগে ১৩ শট নেয় আর্জেন্টিনা, এর তিনটি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে চিলি গোলের জন্য কোনো শট নিতে পারেননি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও ধারাল হয় আর্জেন্টিনার আক্রমণ। ৫০তম মিনিটে তারা তৈরি করে দারুণ সুযোগ। মেসির বাড়ানো বলে খুব কাছ থেকে জোরাল শট নেন মলিনা। চমৎকার রিফ্লেক্সে কাছের পোস্টে এই ডিফেন্ডারের শট ঠেকিয়ে দেন ব্রাভো।
৭ মিনিট পর মেসির চমৎকার ফ্রি কিকে সুযোগ পেয়েছিলেন আলেক্সিস মাক আলিস্তের। কিন্তু ঠিক মতো পা ছোঁয়াতে পারেননি, নিয়ন্ত্রণে নেন চিলি গোলরক্ষক।
৬১তম মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিলেন গনসালেস। বাম দিক থেকে ভেতরে ঢুকে বুলেট গতির শট নেন এই ফরোয়ার্ড। আবারও দুর্ভাগ্য পথ আগলে দাঁড়ায়! ব্রাভোর গ্লাভস ছুঁয়ে ক্রসবার কাঁপিয়ে ফেরে বল!
৭২তম মিনিটে খেলার ধারার বিপরীতে ডি বক্সের বাইরে থেকে আচমকা শটে এমিলিয়ানো মার্তিনেসের পরীক্ষা নেন মাওরোসিও ইসলা। গোলের জন্য এটাই চিলির প্রথম শট। তবে মার্তিনেসের গ্লাভস জোড়াকে ফাঁকি দিতে পারেনি বল।
চার মিনিট পর ডি বক্সের ভেতর থেকে রদ্রিগো এচেভেরিয়ার বুলেট গতির শট দ্বিতীয় চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে নেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক। একটু পরে মার্সেলিনো নুনেসের শটও ঠেকান তিনি।
৮২তম মিনিটে দি মারিয়ার ফ্রি কিকে সবার চেয়ে উঁচুতে লাফিয়ে হেড করলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি নিকোলাস তাগলিয়াফিকো। এর পাঁচ মিনিট পর ‘অলিম্পিক গোল’ প্রায় পেয়েই যাচ্ছিলেন মেসি। কিন্তু দারুণ তৎপরতায় ব্রাভো ত্রাতা কর্নারের বিনিময়ে সে আক্রমণ রুখে দিয়ে। তবে এই কর্নার থেকেই ম্যাচের ‘ডেডলক’ খুলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
মেসির কর্নারের পর প্রায় গোললাইন থেকে শট নেন জিওভানি লো সেলসো। সেটি ঠেকিয়ে দেন চিলি গোলরক্ষক। বল পেয়ে যান ফাঁকায় দাঁড়ানো মার্তিনেস। ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে পাঠান ছন্দে থাকা ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার।
যোগ করা সময়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন মার্তিনেস। শট নিতে পারতেন দি মারিয়াও। নিজে শট না নিয়ে অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ড খুঁজে নেন মার্তিনেসকে। কিন্তু তাড়াহুড়ায় ঠিক মতো শট নিতে পারেননি, আরেকটি দারুণ সেভ করেন ব্রাভো। তাতে ব্যবধান দ্বিগুণ না হলেও আর্জেন্টিনা মেতে ওঠে শেষ আটে ওঠার উৎসবে।