হাওর ডেস্ক ::
সবশেষ ম্যাচে প্রবল চাপকে জয় করে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে গ্রুপের সেরা হয়ে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। তবে রোহিত শার্মা তাকাচ্ছেন সুপার এইটে আরেকটি ম্যাচ পেছনে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই ম্যাচে দলের পারফরম্যান্স নিখুঁত ছিল বলেই মনে করেন ভারতীয় অধিনায়ক। সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও দলকে একই চেহারায় দেখতে চান তিনি।
রোহিতের এই ভালো খেলার রেসিপি হলো, ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা এবং দল হিসেবে খেলা। কোনো একজন অসাধারণ কিছু করতে পারলে ভালো, কিন্তু তা জরুরি নয়। তার কাছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দলে নিজের ভূমিকা পালন করা ও ছোট ছোট অবদান রাখা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের আগের দিন দলকে সেই বার্তাই দিয়ে রাখলেন ভারতীয় অধিনায়ক।
“ভয়ডর ছাড়া খেলা গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরে সেই আবহ আমরা দলে গড়ে তুলেছি… এই সংস্করণই এখন এমন। ব্যক্তিগত স্কোর ও প্রতিভা খুব বেশি পাত্তা পায় না। কেউ যদি এমন কিছু করতে পারে, তাহলে খুবই ভালো। তবে কারও ভাবনায় এটা থাকা যাবে না যে ৭০ রান করব বা ৯০ রান কিংবা সেঞ্চুরি।”
“আমার মনে হয়, বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল আমাদের জন্য ‘পারফেক্ট।’ এটা বলছি কারণ, ওই ম্যাচে স্রেফ একজন ৫০ রান করেছিল। বাকি সবাই ২০-৩০ রান করে করেছে এবং তার পরও আমরা ১৯৮ রান (১৯৬) তুলেছি, যা খুব ভালো স্কোর। এটির কারণ, প্রত্যেক ক্রিকেটারকে যে ভূমিকা দেওয়া হয়েছিল, নিজের পালায় সবাই তা পালন করেছে। এজন্যই ওই স্কোরে আমরা পৌঁছতে পেরেছি। এটাই আমার দলের দরকার-আমরা যদি ৮ জন ব্যাটসম্যান খেলাই, সবাই নিজের ভূমিকা পালন করলে আমরা কাঙ্ক্ষিত স্কোর পেয়ে যাব।”
ছোট ছোট অবদান কিংবা নিজের ভূমিকা পালনের ব্যাপারটি শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, বোলিংয়েও তাদের পরিকল্পনা একই।
“বোলিংয়েই এমন কিছুই আশা করি। কোনো একজনের ব্যক্তিগত ভালো দিনের ব্যাপার এখানে নয়। চার ওভার বোলিং কেউ না-ই পেতে পারে, দুই-এক ওভার পেতে পারে। সবার সঙ্গে এটা নিয়ে ক্রমাগত কথা বলে চলেছি আমি যে, ‘তোমার কাছ থেকে কার্যকর দুই-এক ওভার চাই। আঁটসাঁট দুই-এক ওভার। তুমি এখানে চাপ তৈরি করতে পারছো মানে, অন্য প্রান্ত থেকে আরেক বোলার এসে উইকেট পেতে পারে।”
“এরকম ছোট ছোট ব্যাপার, এসব নিয়ে আমরা দলে কথা বলতেই থাকি। দলের প্রতি বার্তাটা পরিষ্কার। ব্যক্তিগত স্কোরে নয়, আমাদের মনোযোগ ব্যক্তিগত ভূমিকায়, কে কীভাবে তা পালন করতে পারে।”
সময় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় গায়ানায় শুরু হবে এই ম্যাচ। এবারের আসরে ভারত-ইংল্যান্ড দুই দলের জন্যই এই মাঠে প্রথম ম্যাচ এটি। তাই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন রোহিত।
এই বিশ্বকাপে তিনি বারবারই তুলে ধরেছেন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার গুরুত্ব। সেমি-ফাইনালের আগেও তার কণ্ঠে একই কথা।
“জানি, কন্ডিশন নিয়ে বারবার কথা বলছি শুনে বিরক্তিকর লাগবে পারে অনেকের। কিন্তু এটা গুরুত্বপূর্ণ। নিউ ইয়র্কে আমরা দেখেছি, জয়ের মতো স্কোর কেমন ছিল। আমরা তাই স্মার্ট ক্রিকেট দল হতে চাই। স্রেফ একমুখী হতে চাই না, মাঠে নেমে ইচ্ছেমতো ব্যাট চালাতে চাই না।”
“কোন কন্ডিশন আমাদের সামনে আছে এবং সেখানে কী করতে হবে, এটা বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ। দলের ভেতর আমরা অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছি। সব ক্রিকেটারের অভিজ্ঞতার ওপর আমরা নির্ভর করতে চাই, মাঠে নেমে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে, সেটা রিভার্স সুইপ খেলার ক্ষেত্রে হোক, ইয়র্কার করার ক্ষেক্রে হোক বা বাউন্সার করতে। এসব ক্ষেত্রে সবার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করতে চাই আমরা।”
সেমি-ফাইনাল ম্যাচের একটা বাড়তি ওজন ও চাপ থাকে সবসময়ই। তবে চাপকে দূরে রাখতে চান রোহিত। ম্যাচটিকে তিনি ফাইনালে ওঠার লড়াই হিসেবে দেখতেই চান না।
“দেখুন, এই টুর্নামেন্টে খেলা অন্য সব ম্যাচের মতো করেই এই ম্যাচকে নিতে চাই আমরা। সামনে কী অপেক্ষায়, এই ম্যাচের মাহাত্ম্য কেমন বা এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না। সবারই মনের কোণে এটা আছেই যে ম্যাচটি সেমি-ফাইনাল। তবে এটা নিয়ে আমরা বারবার কথা বলতে চাই না। অতীতে যা হয়েছে, সেসবও ভাবনায় আনতে চাই না।”
“আমার মনে হয়, আমরা সবাই খুব ভালো মানসিক অবস্থায় আছি। দল হিসেবে খেলছি আমরা, পরস্পরের সঙ্গ ও সাফল্য উপভোগ করছি। হ্যাঁ, কিছু ম্যাচে আমরা প্রবল চাপে পড়েছি এই টুর্নামেন্টে, কিন্তু সেসময় খুব ভালোভাবে সাড়া দিয়েছি। সেটির কারণ, আমরা খুব বেশি সামনে তাকাইনি।”
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ১০ উইকেটে বিধ্বস্ত হয়েছিল ভারত। ইংলিশদের সেই একাদশের ৮ ক্রিকেটার আছেন এবারও। যদিও এবার কন্ডিশন থেকে শুরু করে অনেক বাস্তবতাই ভিন্ন। রোহিত শার্মাও সেই ম্যাচে না তাকিয়ে থাকতে চান বর্তমানে।
সেমি-ফাইনাল ভাবনায় দলকে জর্জরিত না হয়ে খোলা মন নিয়ে মাঠে দেখতে চান তিনি।
“আমরা ভাবতে চাই যে, কত ভালো আমরা খেলতে পারি ও দল হিসেবে কত ভালো করতে পারি, যাতে কাঙ্ক্ষিত ফল আমরা অর্জন করতে পারি। কখনও কখনও কিছু নিয়ে খুব বেশি ভাবলে মাঠে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এজন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যা চাই, তা নিয়ে স্বচ্ছ থেকে মাঠে নামা।”
“ক্রিকেটারদের সঙ্গে যথেষ্ট আলোচনা আমাদের করা হয়েছে, কার কাছ থেকে কোনটি প্রত্যাশিত। এখন তাই পুরোপুরিই সবার সহজাত প্রবৃত্তির ওপর নির্ভর করার ব্যাপার এবং এরপর খেলাটিকে সেখান থেকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে।”