হাওর ডেস্ক::
রিস টপলির ফুল লেংথ ডেলিভারি কব্জির দারুণ ব্যবহারে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারলেন ভিরাট কোহলি। বলের ঠিকানা সীমানার ওপারে। বারবাডোজের মাঠে যেন ফিরে এল তার সেরা সময়। কিন্তু না! এক বল পরই খানিক টেনে দেওয়া ডেলিভারি আবারও মিড উইকেট দিয়ে খেলার চেষ্টায় পরাস্ত ভারতের ব্যাটিং জিনিয়াস। বোল্ড হয়ে আরও একবার মাথা নিচু করে একরাশ হতাশা নিয়ে তিনি ধরলেন ড্রেসিং রুমের পথ।
চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোহলির নিয়মিত চিত্রই এটি। সাত ম্যাচে পার্থক্য গড়ার মতো একটি ইনিংসও খেলতে পারেননি তিনি। তার মতো একসঙ্গে সঙ্গে বড্ড বেমানানই বটে। বিশ্বমঞ্চে তিনি বরারবর সফল হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। তার ওপর অবশ্য আস্থার কমতি নেই রোহিত শার্মার। ভারতীয় অধিনায়কের আশা, ফাইনাল ম্যাচেই হয়তো সেরাটা পাওয়া যাবে কোহলির।
ব্যাট হাতে সাফল্যে ভরা আইপিএল কাটিয়ে এবারের বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলেন কোহলি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ১৫ ইনিংসে ৫ ফিফটি ও ১ সেঞ্চুরিতে আসরের সর্বোচ্চ ৭৪১ রান করেন তিনি। স্ট্রাইক রেট (১৫৪.৬৯) আর গড়ও (৬১.৫০) ছিল দুর্দান্ত। টুর্নামেন্টে বেঙ্গালুরুর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে কোহলিই ছিলেন বড় নায়ক।
সেই ছন্দ বিশ্বকাপে টেনে আনতে পারেননি ৩৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। এর আগের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপগুলোতে সবসময়ই অসাধারণ পারফর্ম করা কোহলি এবার পুরোপুরি ভিন্ন চেহারায়। সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ বলে ৯ রান করে ফেরেন তিনি। আগের ৬ ইনিংসে আরও চারবার তিনি থামেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই।
সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৭ ইনিংসে ১০.৭১ গড় ও ১০০ স্ট্রাইক রেটে কোহলির সংগ্রহ মাত্র ৭৫ রান। অথচ গত বিশ্বকাপে শুধু শেষ দুই ইনিংসেই তিনি করেছিলেন ৭৬ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১ চার ও ৩ ছক্কায় তার ২৮ বলে ৩৭ রান তার এবারের সেরা। এছাড়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুধু ছুঁতে পারেন দুই অঙ্ক (২৪ বলে ২৪)।
অথচ এবারের আগে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরে কোহলির পরিসংখ্যান ছিল অবিশ্বাস্য। ২৫ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৪টিতেই পঞ্চাশ স্পর্শ করেন তিনি। সব মিলিয়ে ৮১.৫০ গড়ে তিনি করেন ১ হাজার ১৪১ রান। মেলবোর্নে ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৮২, মোহালিতে ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ৮২ রানে স্মরণীয় ইনিংসসহ নিয়মিতই দাপুটে ইনিংস খেলেছেন তিনি।
আগের চার বিশ্বকাপে দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে আউট হন মাত্র দুবার। এবার সাত ইনিংসেই পাঁচবার থেমেছেন দশ রানের আগে। এর ধাক্কা লেগেছে সামগ্রিক পরিসংখ্যানেও। গড় কমে হয়েছে ৫৭.৯০। তবু টুর্নামেন্টে অন্তত ৫০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র তার গড়ই পঞ্চাশের বেশি। আর কেউ ৪৫-ও ছুঁতে পারেননি।
কোহলির সামর্থ্য বা চেষ্টা নিয়ে তাই রোহিতের কোনো সংশয় নেই। সেমি-ফাইনাল জেতার পর তিনি বললেন, এখন পর্যন্ত ব্যর্থতায় ঘেরা বিশ্বকাপের শেষটাই হয়তো সাফল্যে রাঙাবেন ভারতের অনেক সাফল্যের এই নায়ক।
“দেখুন, সে একজন উঁচু মানের ক্রিকেটার। যেকোনো সময় এই অবস্থার (ছন্দহীনতা) মধ্যে যেতে পারে যে কেউ। আমরা তার জাতটা জানি এবং বড় ম্যাচে তার গুরুত্বটাও বুঝি। ১৫ বছর ক্রিকেট খেলার পর ফর্ম কখনও ক্রিকেটারের পরিচায়ক নয়। তাকে দেখে ভালো মনে হচ্ছে। (তার ব্যাটিংয়ে) তাড়নাটা আছে। সম্ভবত ফাইনালের জন্য নিজেকে জমিয়ে রেখেছে।”
কোহলি শেষটা ভালো করার সুযোগ পাবেন শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে। বারবাডোজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচটি শুরু শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায়।