হাওর ডেস্ক::
রিকশায় ব্যাটারি সংযোজনে পরিশ্রম কমে চালকের, বাড়ে গতি, সেই সঙ্গে বাড়ে আয়; তবে এগুলো নিয়ে প্রশ্নেরও শেষ নেই। ফলে এই বাহনগুলো চলতে দেওয়া উচিত কি না, এ নিয়ে জনমত বিভক্ত।
বাস্তবতা হচ্ছে দেশজুড়ে এ বাহন অনেক এলাকার যোগাযোগকে সহজ করেছে। একইসঙ্গে অন্তত ৫০ লাখ পরিবার এই রিকশাগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পরিবারপ্রতি ৬ জন মানুষ ধরলেও নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা তিন কোটির মত। এত বড় জনগোষ্ঠীর রুটি রুজির প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেওয়াও কঠিন, যে কারণে সরকার ‘চলবে না’ ঘোষণা দেওয়ার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ‘চলবে’ জানানো হয়েছে।
এ নিয়ে হুলুস্থুলের পর সরকারের পক্ষ থেকে নীতিমালা করার কথা বলা হয়েছে। অবশ্য নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তিন বছর আগেই। কিন্তু এতদিন তা চাপা পড়ে ছিল। এখন আবার নতুন করে তা নিয়ে বসার কথা বলছেন কর্মকর্তারা।
সরকার চাইছে রিকশাগুলোর ওজন বাড়িয়ে নকশায় পরিবর্তন এনে মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই একটি মান ঠিক করে দিক। সরকারি মান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি কাজও শুরু করেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশার কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন এনে সড়কে প্রয়োজন অনুযায়ী কঠোর শৃঙ্খলায় চলতে দেওয়া যায়।”
এমন রিকশা চলাচল করতে দেওয়ার পক্ষে বললেও যেখানে সেখানে অবারিত চলাচলের পক্ষে নন এই বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, “শহরে বাস সবচেয়ে ভালো গণপরিবহন হলেও ছোট রাস্তা, অলিগলিতে বাস ঢুকতে পারবে না। বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলেও বাস চলবে না। সেসব জায়গায় বিকল্প হিসেবে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতেই পারে। কিন্তু এগুলো চলাচলের অনুমতি দিতে হবে সড়কের সক্ষমতার ভিত্তিতে। নইলে সড়কে জঞ্জাল বাড়বে।”
অবশ্য একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান খান বলেছেন, প্যাডালচালিত যেসব রিকশায় মোটর লাগানো হয়েছে, সেগুলো মেরামত করা যাবে না। সেগুলো ধীরে ধীরে তুলে দিতে হবে।
দুই পক্ষেই যুক্তি ‘প্রবল’
রিকশাগুলোকে চলতে দেওয়ার পক্ষে যারা যুক্তি দেখান, তারা বলেন, এগুলো কায়িক পরিশ্রম থেকে চালকদের মুক্তি দিয়েছে। সারা দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ এসব রিকশা চালিয়ে আয় করেন। মফস্বলে এবং ঢাকা শহরেরও অলি গলি বা শহরতলীতে গণপরিবহনের বিকল্প হয়ে উঠেছে সেগুলো। পায়ে টানা রিকশার তুলনায় এগুলোর চালকরা ভাড়াও তুলনামূলক কম হাঁকেন বলেই জানাচ্ছেন যাত্রীরা।
ঢাকার দক্ষিণখানের বাসিন্দা তায়েব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রযুক্তির বিবর্তনে রিকশাও অন্তর্ভুক্ত। ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকের কায়িক শ্রম কমায়। এটি রিকশাচালকদের জন্য আরও বেশি সহায়ক।
“মানুষ মানুষকে শ্রম নয়, যন্ত্র দিয়ে টেনে নেবে, এটাই সভ্যতার সুফল। ব্যাটারিচালিত রিকশায় যান্ত্রিক ঘাটতি থাকলে সেটাও নিশ্চয়ই উৎরাতে পারবেন প্রযুক্তিবিদরা।”
বুয়েটের অধ্যাপক হাদিউজ্জামানও একই কথা বলেছেন। তিনিও বলেন, “এই যুগেও মানুষ মানুষকে টেনে নেবে এটা হয় নাকি!”
রিকশা, ব্যাটারি রিকশা, ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশাও ইলেকট্রিক যান। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ইলেকট্রিক বাহনের দিকে যাচ্ছে সবাই। আমরা সব সময় নতুন প্রযুক্তিকে ওয়েলকাম করব। কিন্তু কোনোকিছুই নীতিমালার বাইরে যাওয়া উচিত হবে না। বিষয়টি নিয়ে আমাদেরও কিছু প্রস্তাব আছে। আমরাও চাই এগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে চলুক।”
গত মে মাসে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের ঘোষণার পর ঢাকায় রিকশা ভাড়াতেও প্রভাব পড়ে। সংবাদকর্মী আমিম এহসান বলেন, মালিবাগের গুলবাগ থেকে মৌচাক পর্যন্ত রিকশা ভাড়া এখন ২০ টাকা। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হওয়ার পর প্যাডালচালিত রিকশা চালকেরা কয়দিন ৪০ থেকে ৫০ টাকাও চেয়েছে।
আবু সুফিয়ান নামে জুরাইনের এক বাসিন্দা বলেন, “জুরাইন বিক্রমপুর প্লাজার সামনে থেকে শনির আখড়া এলাকা পর্যন্ত ৪০ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা নেওয়া হয় কয়েক দিন।”
অন্যদিকে যারা এসব রিকশার বিপক্ষে, তারা বলেন, চালকদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই, যান্ত্রিক যান হলেও এগুলোকে কোনো লাইসেন্সের শর্তের মধ্য দিয়ে যেতে হয় না, বাহনগুলোর ব্রেক সিস্টেমও ভালো না।
মিরপুর ভাসানটেকের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির হিমু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশার কাঠামো দুর্বল। চালকরাও পেশাদার না। সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ এসব রিকশা।
“এদের ব্রেক সিস্টেম ভালো না। তারা বড় গাড়ির সঙ্গেও পাল্লা দিতে চায়। আবার উল্টোপথেও চলে। এই রিকশা কখনও আমাদের এই শহরের জন্য ফিজিবল না। এজন্য এসব রিকশা তুলে দিয়ে গণপরিবহন আরও বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।”
অবশ্য বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট গবেষণায় দেখেছে, সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা আছে অন্তত ৩০ ধরনের। দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়, তার সব মিলিয়ে ১০ শতাংশে জড়িয়ে এই রিকশাগুলো। কিন্তু মোটরসাইকেল এখন সড়কে মৃত্যুর ৪০ শতাংশের কারণ হয়ে উঠেছে।
“তাহলে আপনি কি মোটরসাইকেল বন্ধ করে দেবেন?”-বলেন এই ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক হাদিউজ্জামান।
আবার এগুলো চার্জ করতে যে বিদ্যুৎ খরচ হয়, তার বিল সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে কি না, তা নিয়েও আছে প্রশ্ন।
যেসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ হয়, সেগুলো নিবন্ধিত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অবৈধ সংযোগে বিদ্যুৎ ব্যবহারের মূল্য সরকার পায় না। আবার অনেকে বাড়িতে চার্জ দেয়। তখন বাণিজ্যিক হারের বদলে আবাসিক হারে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয়।
ঢাকার গোড়ানের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “গত এক দশকে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এগুলোর কোনো লাইসেন্স না থাকলেও অবাধে অলিগলিতে চলছে। কোনো নিয়মশৃঙ্খলা মানে না, ফলে যানজট তৈরি হচ্ছে, ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজট। রাস্তার বিশৃঙ্খলা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
রিকশায় যেভাবে যুক্ত হল ব্যাটারি
কুমিল্লা শহরে ২০০৪ সালে প্রথম ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল শুরু হয়। প্রথম দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি করে।
পরে চীন থেকে আমদানি শুরু হয়, এগুলোকে বলা হয় ইজিবাইক। বর্তমানে ইজিবাইকের পাশাপাশি পায়ে চালিত রিকশায় মোটর বসিয়ে চালানো হচ্ছে।
আগে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও রিকশার যন্ত্রাংশ ছিল আমদানিনির্ভর। বর্তমানে দেশেই তৈরি হচ্ছে তিন চাকার এই বাহন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরসহ সারাদেশে ৬০ থেকে ৭০টি কারখানায় তৈরি হচ্ছে এসব রিকশা। ব্যাটারিও তৈরি হয় দেশেই। পাশাপাশি কিছু ইজিবাইক এখনও চীন থেকে আসে।
ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার বড় বাজার ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম। পাশাপাশি নবাবপুর, বংশাল, উত্তরা ও ঢাকার মিরপুরে অটোরিকশার বাজার আছে। এসব বাহনে তৈরির যে যন্ত্রাংশ প্রয়োজন তার বড় বাজার ঢাকার নবাবপুর এলাকা।
এ খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন (এরা কারা), সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও এ ধরনের যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এই খাতে জড়িত আছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে চালক ৫০ লাখ; মালিক, মেকানিক, গ্যারেজ মালিক, চার্জিংয়ে জড়িত ব্যক্তি, ব্যাটারি ও পার্টস ব্যবসায়ী মিলিয়ে আরও ১০ লাখ। সারাদেশে প্রায় ৩ কোটি মানুষ এই খাতের ওপর নির্ভরশীল।
মান নির্ধারণ চায় সরকার
দেশে লাখ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছেও এর মান নির্ধারিত নয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা সরকারি মাননিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট-বিএসটিআইকে এই মান নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ২০ মে বিএসটিআইয়ের এক আলোচনায় তিনি বলেন, “সারাদেশে প্রায় ২০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে। এখন আমরা কি এদের রুটি-রোজগারকে প্রতিহত করব? সেটি আমাদের উদ্দেশ্য নয় কিন্তু। এটার একটা স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে দেওয়া যেতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রীরও এমনই ইচ্ছা জানিয়ে সেদিন তিনি বলেন, “এটার উপরে অনেকের জীবন-জীবিকা নির্ভর করছে। ক্লিয়ারলি ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দিলে হয়ত তারা সেই ইনস্ট্রাকশন মেনে চলবে।”
বিএসটিআই কী ভাবছে- এই প্রশ্নে সংস্থাটির পরিচালক (মান) মো. সাইদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একক পণ্য হিসেবে ব্যাটারি, চাকার মান নির্ধারণ করা আছে। এখন কম্বাইন্ড ইলেকট্রিক যান হিসেবে ব্যাটারিচালিত রিকশার একটা স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ করার কাজ আমরা হাতে নিয়েছি।”
সংস্থাটির মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, “আমাদের আওতায় কী কী পড়ে সেগুলোর আমরা একটা তালিকা তৈরি করে বলে দেব আমরা এই এই বিষয়ের মান নির্ধারণ করে দিতে পারি। বাকি অংশটা বিআরটিএ করবে।
“একটা মান তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। অনেক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসতে হয়, অনেকগুলো কমিটি আছে তাদের সঙ্গে কাজ করতে হয়। এগুলো করতে গেলে পাঁচ-ছয় মাস লেগে যায়।”
নিরাপদ করা সম্ভব?
বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান এই প্রশ্নে বলেন, “খুবই সম্ভব।”
তার যুক্তি, বর্তমানের ব্যাটারি রিকশাগুলো ‘ইউ’ ব্রেকে চলে। এতে দুটো ব্রেক-প্যাড থাকে যারা চাকার রিম চেপে ধরে। এই ব্রেক রিকশা বা সাইকেলের জন্য প্রযোজ্য। ব্যাটারি সংযোজন করার পর রিকশাগুলো ৩০-৩৫ কিলোমিটার গতিতে চলে।
“রিকশার গতির সঙ্গে এই ব্রেকিং সিস্টেম খুব একটা কার্যকর নয়। এগুলোকে হাইড্রোলিক ব্রেকিংয়ে পরিবর্তন করতে হবে।”
অটোরিকশা মোটরের সাহায্যে চলে, ব্রেক চাপার পরও মোটর ঘুরতে থাকে। এতে রিকশাটিও চলতে থাকে। ‘পাওয়ার কাট’ সুইচ সংযোজন করে এই সমস্যার সমাধান করা যায় বলে জানান এ বিশেষজ্ঞ।
“ব্রেক করলেই যেন মোটর বন্ধ হয়ে যায়। আবার এক্সিলারেটর চাপলে মোটর চালু হবে। এগুলোতে ক্লাচ বসানো যাবে না কারণ এটা ইঞ্জিনচালিত নয়, মোটরচালিত যান।”
কম ওজন এবং বেশি উঁচু হওয়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রায়ই উল্টে যায়। এ সমস্যারও সমাধান দিয়েছেন হাদিউজ্জামান।
তিনি বলেন, “এগুলোর সেন্টার অব গ্র্যাভিটি ওপরের দিকে থাকে। দ্রুতগতিতে চালিয়ে যখন মোড় নিতে যায় সে সময় ভারসাম্য রাখতে পারে না, উল্টে যায়। এজন্য চেসিসটা আরেকটু ভারী করতে হবে। গবেষণা করে ওজন বাড়ানো সম্ভব।”
রিকশাগুলোর ব্যাটারি ব্যবস্থাপনাতেও মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ দেন হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, রিকশাগুলোতে সোলার প্যানেল সংযোজন করা যায়। তাতে কার্বন নিঃসরণ কমবে, বিদ্যুৎ খরচ কমার পাশাপাশি রিকশাচালকের আয় বাড়বে।
অবশ্য বুয়েটেরই ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান খান বলেন, “ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের নকশায় কিছু পরিবর্তন করে চালানো সম্ভব। কিন্তু রিকশায় মোটর বসিয়ে যেগুলো চালানো হচ্ছে, সেগুলো তুলে দিতে হবে।”
বিদ্যুৎচালিত যান নিয়ে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের একটি প্রকল্পে কাজ করেছেন এই বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, “ইজিবাইকের নকশায় কিছু সমস্যা আছে। এগুলোর ব্রেক সিস্টেম ভালো না, দরজা নাই তাই যাত্রীরা পা বের করে বসে থাকে। ব্রেক সিস্টেম আরও উন্নত করা, দরজা লাগানো, সিটিং ক্যাপাসিটি নির্ধারণ করে কিছুটা নিরাপদ করা যায়।
“প্যাডাল রিকশায় ব্যাটারি এবং মোটর বসিয়ে যেটা বানানো হয়েছে, ওই রিকশাকে নিরাপদ করা অসম্ভব। কারিগরিভাবে এটা করা সম্ভব না। একটা নির্দিষ্ট সময় পর এগুলো তুলে দেওয়া উচিত।”
নীতিমালার উদ্যোগ আটকা তিন বছর
দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশার আইনগত বৈধতা কখনো ছিল না। এই রিকশাগুলো সড়কে নামলে প্রতিদিনের হিসেবে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আর গোপন কিছু নেই। ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক সংগঠনের নামে এই চাঁদা তোলা হয়। পুলিশেরও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও পুরনো। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনো এই অভিযোগ স্বীকার করে না।
গত ১৫ মে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় গত ২০ মে মিরপুরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায় রিকশা চালকেরা। পরের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানান, এই রিকশাগুলো চলবে। তিনি কোন কোন সড়কে চলবে, সেটির বিষয়ে নীতিমালা করে দেওয়ার কথা বলেন।
কী আছে নীতিমালার খসড়ায়
ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ অননুমোদিত তিন চাকার যান নিয়ন্ত্রণে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর ‘থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালার খসড়া তৈরি করা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। ওই নীতিমালা এখনও অনুমোদন পায়নি।
ওই খসড়া নীতিমালায় অটোরিকশা, অটো টেম্পো, ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার, স্থানীয়ভাবে তৈরি নছিমন, করিমন, ভটভটি ও আলমসাধুকে থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান বলা হয়েছে।
নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, শুধু উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের স্থানীয় রুটে অনুমোদন নিয়ে ইজিবাইক চলতে পারবে। তবে রুটের কোনো অংশ মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়কের অংশ হতে পারবে না। রুট নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপজেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটির মতামতের ভিত্তিতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি রুট পারমিট দেবে। আরটিসির নির্ধারিত সিলিং অনুযায়ী বিআরটিএ ইজিবাইকের নিবন্ধন দেবে।