1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

সুনামগঞ্জে ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহ গণনা: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে

  • আপডেট টাইম :: শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪, ১.০৮ পিএম
  • ৪১ বার পড়া হয়েছে

শামস শামীম::
সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জেও প্রথম ডিজিটাল জনশুমারী ও গৃহগণনা ২০২২’র জেলা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বৃহষ্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচন করেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ। প্রকাশিত রিপোর্টে সংখ্যার দিক দিয়ে নারীরা এগিয়ে থাকলেও শিক্ষায় তারা পিছিয়ে। মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও নারীদের অবস্থান পিছনে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল ব্যাংকিয়ংয়েও নারীদের অবস্থান অনেক পিছনে। এছাড়াও পরিসংখ্যানে এখনো ঝূলন্ত পায়খানা ব্যবহার, নদী, হাওর ও পুকুরের পানি পান, বিদ্যুৎহীন লোকজনও রয়েছে বলে তথ্য উপস্থাপন করা হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিসংখ্যান আশাব্যাঞ্জক। গত এক দশকে জনসংখ্যার হার ২.০২ থেকে এবারের জরিপে ০.৭৮ ভাগে এসে পৌঁছেছে। অন্যদিকে জেলায় জনসংখ্যার দিক এগিয়ে ছাতক উপজেলা ও পিছিয়ে মধ্যনগর উপজেলা। ছাতক উপজেলায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৭ জন এবং মধ্যনগরে ৯৬ হাজার ২৩৭জন লোক বসবাস করেন।
জেলা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় জেলায় মোট জনসংখ্যা প্রতিবেদনে দেখা যায় জেলায় মোট জনসংখ্যা ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১১ লক্ষ ২৫ হাজার ৪১১জন। ১৫ বছরের উর্ধে ৭৭.৬০ ভাগ পুরুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। আর বিপরিতে ৪৮.০৮ ভাগ নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। একই বয়সী ৩৭.২১ ভাগ পুরুষ ও ১৭.৪৯ ভাগ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সংখ্যায় বেশি থাকলেও প্রযুক্তি ব্যবহারে নারীদের চেয়ে পুরুষরা এগিয়ে আছেন। এভাবে শিক্ষা দীক্ষায়ও নারীরা পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। পুরুষের স্বাক্ষরতার হার ৬৬.১৪ ভাগ এবং নারী ৬৩.৭৬ ভাগ। জেলায় গড় শিক্ষার হার ৬৪.৯২ ভাগ।
রিপোর্টে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে জানানো হয় জেলার ৯৮. ৭২ ভাগ লোক বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে। ১.২৮ ভাগ লোক বিদ্যুৎহীন আছেন। জেলার ১৬.৭০ ভাগ লোকজন এখনো ঝুলন্ত পায়খানা ব্যবহার করছে, ১.৩৬ ভাগ পুকুর, নদী, খাল ও লেকের পানি ব্যবহার করছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও আবাসন সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে দেখানো হয় জেলার ৭৩.৯৬ ভাগ মানুষ কাঁচা ঘরবাড়ি, ১০.৪৫ ভাগ পাকা ঘরবাড়ি, ১৪.৫৬ ভাগ মানুষ সেমিপাকা এবং ১.০২ ভাগ ঝূপড়ি ঘর ব্যবহার করেন।
প্রবাসীদের পরিসংখ্যান বিষয়ে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী ছাতকে ও জগন্নাথপুরে। সবচেয়ে কম মধ্যনগর ও শাল্লা উপজেলায়। ছাতকে ২৮.৮৩ এবং জগন্নাথপুরে ২০.৩৫ ভাগ লোকজন বিদেশে বসবাস করেন। শাল্লায় মাত্র ৯৫১ জন বা ০.৯৬ ভাগ এবং মধ্যনগরে ৫৪৮ জন বা ০.৫৫ ভাগ লোক প্রবাসে বসবাস করেন। তবে এই প্রবাসীরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রবাসে আছেন।
বসবাসের দিক দিয়ে জনসংখ্যার ঘনত্ব বাড়ছে বলে উল্লেখ করে বলা হয় জেলায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৭১৯জন লোক বসবাস করে। ২০১১ সালের জরিপে এই হার ছিল প্রতি বর্গকিলোতে ৬৫৯ জন। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার হারের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে সাধারণ শিক্ষায় ৮৮.৮৯ ভাগ, কারিগরি শিক্ষায় মাত্র ০.৩৫ ভাগ, ধর্মীয় শিক্ষায় ৭.৩৫ ভাগ এবং অন্যান্য শিক্ষায় ৩.৪১ ভাগ শিক্ষার ক্ষেত্র হার। কাজকর্মের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয় জেলায় কাজের দিক দিয়ে কৃষিই এগিয়ে। কৃষিতে জেলার ৬৩.২৭ ভাগ, সেবায় ২৯.৩৭ ভাগ এবং শিল্পায়নে ৭.৩৬ ভাগ মানুষ কাজ করেন।
বৈবাহিক অবস্থার রিপোর্টে (১০ বছর ও তদুর্ধ্ব) প্রকাশ করা হয় জেলার ৩১.৪৩ ভাগ নারী অবিবাহিত, ৪৪.৩৯ ভাগ পুরুষ অবিবাহিত, ৫৭.১৯ ভাগ নারী বিবাহিত ও ৫৪.৪১ ভাগ পুরুষ বিবাহিত। এর মধ্যে ১০.৩৬ ভাগ নারী বিধবা, ০.৮৭ ভাগ নারী বিপতœীক, ০.৫২ ভাগ নারী তালাকপ্রাপ্ত, ০.৫০ ভাগ নারী দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। ১৪-২৪ বছর বয়সী নারীরা যারা জরিপকালে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছিলেন না, কর্মে নিয়োজিত ছিলেন না বা বৃত্তিমূলক কোনও কাজে ছিলেন না এই হার জেলায় ৪০.৯১ ভাগ। এর মধ্যে নারীদের অবস্থান ৫৭.৯০ এবং পুরুষ ২১.৯৩ ভাগ।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাবের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে জেলায় ১৫ ও তদুর্ধ জনসাধারণের ব্যাংক একাউন্ট আছে ১২.৫৮ ভাগ লোকের। এর মধ্যে ৮.৮৭ ভাগ নারী এবং ১৬.৫৯ ভাগ পুরুষের ব্যাংক একাউন্ট আছে। এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টধারীর সংখ্যা জেলায় ২৬.৪৩ ভাগ। এর মধ্যে ১৫.১৬ ভাগ নারী এবং ৩৮.৬৬ ভাগ পুরুষ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন। রেমিটেন্স গ্রহণকারী জেলায় খানা ১২.০৩ ভাগ। এর মধ্যে পল্লীর ১২.৩৫ ভাগ এবং শহরে ১০.২৬ ভাগ খানা রেমিটেন্স সুবিধা ভোগ করেন।
জেলায় মোট খানা ও বাসগৃহের সংখ্যার তথ্যও উপস্থাপন করা হয়। খানার সংখ্যা ৫ লাখ ২৮ হাজার ৫৫০টি। এর মধ্যে শহরে ৮১ হাজার ৭৭১ এবং গ্রামে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৯টি। প্রতিটি খানার আকার ৫.০৯। বাসগৃহের সংখ্যা জেলায় ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩৮টি। এর মধ্যে শহরে ৬৫ হাজার ৪২৮ এবং গ্রামে ৪ লাখ ১ হাজার ১০টি। জেলায় ১০.৪৫ ভাগ মানুষ পাকা ঘরবাড়িতে, ১৪.৫৬ ভাগ মানুষ সেমিপাকা ঘরবাড়িতে এবং ৭৩.৯৬ ভাগ মানুষ কাঁচা ঘরবাড়িতে অবস্থান করে। এছাড়াও ১.০২ ভাগ মানুষ ঝূঁপড়িতে বসবাস করেন।
খাবার পানির পরিসংখ্যানে জানানো হয়, ৯৬.৮৭ ভাগ মানুষ গভীর/অগভীর নলকূপ, পুকুর-নদী- লেকের ১.৩৬ ভাগ, কূপ কোয়ার পানি ০.৮৬ ভাগ, সাপ্লাইর পানি ০.৬৮ ভাগ পানি ব্যবহার করেন। এছাড়াও পয়োনিষ্কাশনের তথ্যে জানানো হয় জেলার ২৮.২২ ভাগ মানুষ ফ্লাস ঢেলে পায়খানা ব্যবহার, অনিরাপদ নিষ্কাশন ১৯.০৬ ভাগ, স্ল্যাবসহ বিট লেট্রিন ১৯.৮০ ভাগ, ষ্যাব ছাড়া পিট ল্যান্ট্রিন ১২.৬৫ ভাগ, কাচা/খোলা, উন্মুক্ত ১২.৬৫ ভাগ এবং খোলা জায়গায় ৩.৫৭ ভাগ লোক টয়লেট ব্যবহার করেন। বৈদ্যুতিক সংযোগ বিষয়ে বলা হয় জেলার ৯৮. ৭২ ভাগ লোক বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তবে এখনো ১.২৮ ভাগ লোক এই সুবিধার বাইরে আছে।
রান্নার জ্বালানীর উৎসের পরিসংখ্যানে বলা হয় কাঠ, লাকড়ি ৬৫.৯৪ ভাগ, গোবর/চারকোল ১৮.৬৭ ভাগ, এলপি গ্যাস ৭.৩০ ভাগ, খড়/পাতা/ভূষি ৫.১৫ ভাগ, সাপ্লাই গ্যাস ২.৭০ ভাগ লোক ব্যবহার করেন।
তবে রিপোর্টের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশনার সময় এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুধীজন। তারা জানিয়েছেন জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা নীতি এই পরিসংখ্যানের আলোকেই নেওয়া হয়। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই গণনা সতর্কতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে করা উচিত।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত শান্তিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাদাত মান্নান অভি বলেন, পরিসংখ্যান রিপোর্ট জাতীয় ও স্থানীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এই জরিপের আলোকেই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। উপস্থাপিত কিছু বিষয় মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার বিপরিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপস্থিত সুধীজনের মধ্যে এডভোকেট শামসুল আবেদিন বলেন, প্রতিবন্ধী, হিজড়া, প্রবাসীসহ একাধিক পরিসংখ্যানের তথ্য নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। রিপোর্টের চিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, পৌর মেয়র নাদের বখত, শান্তিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাদাত মান্নান অভি, জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন, দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর পত্রিকার সম্পাদক পঙ্কজ দে, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জেলা সমাজসেবা অফিসার সুচিত্রা রায়, জেলা প্রতিবন্ধী কর্মকর্তা ডা. তানজিল হক, সাংবাদিক শামস শামীম প্রমুখ।

 

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!