বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বন্যার সময় পানিপ্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য নানা কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া কালভার্ট, সেতুর মুখ খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী। শুক্রবার তিনি দিনব্যাপী হাওরাঞ্চলে বন্যায় বিধ্বস্ত সড়ক সেতু পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিকেলে মতবিনিময়সভায় এই নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি হাওরে সড়ক-সেতু কালভার্টসহ অন্যান্য অবকাঠামোর প্রকল্প গ্রহণের আগে স্থানীয় ভুক্তভোগী ও অভিজ্ঞ মানুষদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের মতামত নিয়ে নক্সা করার নির্দেশনা দেন। বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে এখন থেকেই সতর্ক হয়ে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি। সুনামগঞ্জ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও সওজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সিলেট সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রব্বে, সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম, সাংবাদিক লতিফুর রহমান রাজু, শামস শামীম, হিমাদ্রী শেখর ভদ্র মিঠু, দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী প্রমুখ।
সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বন্যার সময়ই সওজের কর্মকর্তাদের বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতার কারণে কোথায় কোথায় কোন কোন পয়েন্টে সড়ক ভাংচে সেগুলো চিহ্নিত করে নোট রাখার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, বৃটিশ আমলে বৃটিশ শাসকের কর্মকর্তারা বন্যা উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণ করতেন। এখন তাদের কাছেই ফিরে যেতে হবে আমাদের। তারা বন্যা মোকাবেলায় যেসব পরিকল্প ও অবকাঠামো করেছিলেন সেইগুলোর দিকে আমাদের নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, আজ ঘুরে দেখলাম সড়কের পানি নিষ্কাশনের জন্য যেসব সেতু কালভার্ট করা হয়েছে সেগুলোর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে সেগুলো আগামী বর্ষার আগেই খুলে দিতে হবে। ব্রীজের পানি নিষ্কাশনের পথের জায়গা যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন হয় তাহলে তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ দিয়েও পানি নিষ্কাশনের পথ খোলা রাখতে হবে। ২০২২ সালের বন্যায় সরকার সিলেট ও সুনামগঞ্জে সড়ক ও সেতু সংস্কারে প্রায় ২৭ শ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যা এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রাং জানান, চলতি মাসের বন্যায় জেলার ৯৫.৫৬ কিলোমিটার সড়কের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এ সড়ক স্বল্প মেয়াদী মেরামতের জন্য ১৯.৮০ কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে দীর্ঘ মেয়াদী মেরামতের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় হবে ২৪৯.৯৬ কোটি টাকা। বন্যার পানি পুরোপুরি কমে গেলে পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ২০২২ সালের বন্যার পর বন্যার পানি নিষ্কাশনের কথা চিন্তা করে দিরাই-শাল্লা-আজমিরি-জলসুখা সড়ক প্রকল্পের কাজের নক্সা পরিবর্তন করা হচ্ছে জানিয়ে সিলেট সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রব্বে বলেন, বন্যার পানি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় হাওরের এই সড়কটির নক্সা পরিবর্তন করা হয়েছে। এখনো এই কাজ চলছে। পানিনিষ্কাশনের জন্য আরো সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। যাতে বন্যা মোকাবেলা সহজ হয়।