হাওর ডেস্ক::
ঐতিহ্য, সাফল্যের গল্প এক পাশে রেখে শুধু বর্তমানকে বিবেচনায় নিলে দুই দলের অবস্থান দুই রকম। টানা ২৫ ম্যাচ অজেয় থেকে দুর্বার গতিতে ছুটছে কলম্বিয়া। অন্যদিকে হারানো ছন্দ, আধিপত্য খুঁজে ফিরছে ব্রাজিল। কোপা আমেরিকায় এই দুই দল এবার মুখোমুখি। ফর্মের তুঙ্গে থাকা কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি তাই মলিনতার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার প্রাণান্ত চেষ্টা করা ব্রাজিলের জন্য কঠিন এক পরীক্ষাই।
‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে নর্থ ক্যালিফোর্নিয়ায় বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টায় মুখোমুখি হবে দুই দল। এ মুহূর্তে টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে শীর্ষে কলম্বিয়া। ড্রয়ের হতাশা দিয়ে গ্রুপ পর্ব শুরু করা ব্রাজিল প্যারাগুয়েকে উড়িয়ে দেওয়ার পর ৪ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে। দুই দলের এবারের দ্বৈরথ তাই কলম্বিয়ার জন্য শীর্ষস্থান ধরে রাখার, ব্রাজিলের জন্য শীর্ষে ওঠার।
চাওয়া পূরণের পথটা দরিভাল জুনিয়রের দলের জন্য সহজ নয় মোটেও। তর্কসাপেক্ষে এবারের আসরে তুঙ্গস্পর্শী আত্মবিশ্বাস নিয়ে সবচেয়ে তেতে থাকা দলগুলোর একটি কলম্বিয়া। টানা ১০ ম্যাচ জিতেছে তারা; পরিসংখ্যানে আরেকটু পেছনে গেলে, টানা ২৫ ম্যাচ অপরাজিত কোপা আমেরিকার ২০০১ সালের চ্যাম্পিয়নরা।
সবশেষ কলম্বিয়া হারের তেতো স্বাদ পেয়েছিল দুই বছরেরও বেশি সময় আগে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১-০ গোলের সেই হারে তাদের ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাই পেরুনোর আশা কার্যত হয়ে গিয়েছিল শেষ। এরপরই, দলটির আড়মোড়া ভেঙে নতুন করে জেগে ওঠার শুরু।
সেসময়কার কোচ রেইনালদো রুদাকে ছাঁটাই করে ফিরিয়ে আনা হয় নেস্তোর লরেন্সোকে। হোসে পেকারম্যান কলম্বিয়ার কোচ থাকাকালীন কয়েক বছর তার সহকারী কোচ ছিলেন এই আর্জেন্টাইন। লরেন্সোর হাত ধরে খোলনলচে পাল্টাতে থাকল কলম্বিয়ার।
হামেস রদ্রিগেস, ইয়োহান করদোবা, ইয়োহান মোজিকা- এই অভিজ্ঞদের নিয়ে অনেকের ধারণা ছিল, সেরা সময় পেরিয়ে এসেছেন তারা। তবে লরেন্সো তাদের দিকে তাকালেন ভিন্ন দৃষ্টিতে। এই বয়সীদের মধ্যে সঞ্চার করলেন নতুন প্রাণশক্তির; নিংড়ে বের করে আনলেন রদ্রিগেস-করদোবাদের সেরাটা।
এরপর রিকার্দো রিওস, ইয়োজন আরিয়াস এবং জেফারসন লারমারা দলে এনে দিলেন প্রয়োজনীয় ভারসাম্য। দুর্বার গতিতে ছোটা শুরু কলম্বিয়ার। স্পেন, জার্মানিকে হারাল; পিছিয়ে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে ‘অন্য স্বাদের’ জয়ও তুলে নিল ব্রাজিলের বিপক্ষে।
গত নভেম্বরে ব্রাজিলের বিপক্ষে সেই ম্যাচের আগে অপহরণের শিকার হয়েছিলেন লুইস দিয়াসের বাবা। কলম্বিয়ার গেরিলারা তাকে উদ্ধারের পর মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। পিছিয়া পড়া কলম্বিয়াকে জোড়া গোলে ২-১ ব্যবধানে জয় এনে দেন দিয়াস।
এই কলম্বিয়া বিরামহীন গতি আর শারীরিক শক্তিমত্তার কার্যকরী ব্যবহারে খেলছে আক্রমণাত্মক ও আকর্ষণীয় ফুটবল। প্যারাগুয়েকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকা শুরুর পর কোস্টা রিকাকে তারা উড়িয়ে দেয় ৩-০ ব্যবধানে। রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে তাই বার্তা দিয়ে রাখলেন লরেন্সো।
“আমি জানি, আমাদের সমর্থকরা ব্রাজিল ম্যাচ নিয়ে শিহরিত এবং মানুষের আবেগ নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার আমি কে? আমরাও শিহরিত, চলুন, ম্যাচটা উপভোগ করি।”
ব্রাজিলের জন্য ম্যাচটা যতটা উপভোগের, তার চেয়েও বেশি স্বরূপে ফেরার উপলক্ষ। ২০২২ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হেরে কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়ার পর আরও যেন পেছনের দিকে ছুটছিল সেলেসাওরা। হতাশায় মোড়া সেই অধ্যায়ের পর এই বছরের শুরুতে হাল ধরেন দরিভাল।
কিন্তু কোপা আমেরিকায় শুরু ভালো হয়নি মোটেও। কোস্টা রিকার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ে ভুলে যাওয়া অতীত ফিরিয়ে আনে ব্রাজিল; প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে টানা পাঁচ ম্যাচ জয়হীন; ২৩ বছরের মধ্যে যা তাদের সবচেয়ে বাজে পরিসংখ্যান!
প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ৪-১ গোলে জিতে যাচ্ছেতাই পথচলার ইতি অবশ্য টানতে পেরেছে ব্রাজিল। রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতে ব্যালন দ’র জয়ের জোরাল দাবি জানানো ভিনিসিউস জুনিয়র লাস ভেগাসের ওই ম্যাচে ছড়িয়েছেন জোড়া গোলের আলো; দিয়েছেন ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার আভাস। কিন্তু, কলম্বিয়া ম্যাচ দলের পাশাপাশি তার জন্যও অপেক্ষা করছে চ্যালেঞ্জ নিয়ে।
ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ব্রুনো গিমারেস রোববারের সংবাদ সম্মেলনে বললেন, কলম্বিয়া ম্যাচ তাদের জন্য ‘কঠিন পরীক্ষা’। তবে, ব্রাজিলের জার্সিতে জয় ভিন্ন অন্য কিছু পাওয়ার সুযোগ যে একেবারেই নেই, তাও মনে করিয়ে দিলেন সতীর্থদের।
“আমাদের পথচলায় সমস্যা সৃষ্টি করে চলা একটা দল কলম্বিয়া; পরের ম্যাচে যে বাধা আমরা সরানোর চেষ্টা করব। তাদের অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা একাই ম্যাচের নির্ণায়ক হয়ে উঠকে পারে। খুবই শারীরিক শক্তিনির্ভর দল, তাদের বিপক্ষে খেলাটা দারুণ হবে। তবে, এটা ব্রাজিলের জাতীয় দল, যা নিয়ে আমরা কথা বলছি।”
“ম্যাচটা আমাদের জন্য দারুণ এক পরীক্ষা, দারুণ এক লড়াই হতে যাচ্ছে, যেটা আমরা জিতে, গ্রুপের শীর্ষে উঠে শেষ করতে চাই। ব্রাজিলের জার্সি গায়ে সবসময় এটিই একমাত্র চাওয়া থাকে।”