হাওর ডেস্ক::
মাঝ আষাঢ়ে টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ফুলে ফেঁপে উঠছে নদী; ফলে এক মাসে দুই দফা বন্যার পর আবারও ডুবছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা।
এসব এলাকার প্রধান নদীগুলোর পানি সমতলে সামগ্রিকভাবে বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বেড়ে বেশ কিছু পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
মঙ্গলবার বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে। স্থিতিশীল থাকবে মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি।
“উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি সমতল সময় বিশেষ বৃদ্ধি পেয়ে কিছু পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি সমতল বেড়ে কিছু পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।”
এবার জুনের শুরুতে প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। কয়েক দিন পর পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গত ১৭ জুন কোরবানির ঈদের আগের দুদিন থেকে টানা বৃষ্টিতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণাসহ আশেপাশের জেলার অনেক এলাকা ডুবে যায়।
বন্যায় শুধু সিলেটেই কৃষি, মাছ ও রাস্তার ক্ষতি ৭৭৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য দেয় সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন। সেই ক্ষত পুরোপুরি সেরে ওঠার আগেই ফের ওই এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানিও সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে।
“এসব এলাকার পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে।”
টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ইতোমধ্যে শেরপুরের চেল্লাখালী, মহারশি, সোমেশ্বরী ও ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে।
নেত্রকোণায় লোকালয়েও পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ির কাচালং নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে; পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মঙ্গলবার বিকাল ৩টার তথ্যে দেখা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
কুশিয়ারার অমলশীদে ৮৩ সেন্টিমিটার, শেওলায় ২৪ সেন্টিমিটার, শেরপুর-সিলেটে ১৫ সেন্টিমিটার ও মারকুলি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া মানু নদীর মৌলভীবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার, খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে ১২৫ সেন্টিমিটার, সোমেশ্বরী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার, ভুগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার এবং মুহুরী নদীর পরশুরাম পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
ভারি বৃষ্টির আভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে গেল ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২৯৪ মিলিমিটার, নেত্রকোণায় ২১৫ মিলিমিটার, ফেনীতে ২০৮ মিলিমিটার, খাগড়াছড়িতে ১৯৯ মিলিমিটার, বান্দরবানে ১১৫ মিলিমিটার, নীলফামারীতে ১১২ মিলিমিটার, নোয়াখালীতে ১০৯ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ১০৭ মিলিমিটার এবং রাঙামাটিতে ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চলমান বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর হয়ত রোদের দেখা মিলবে।”
আবহাওয়া সংস্থার তথ্যে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টির আভাস রয়েছে।
বর্ধিত পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সময়ের শেষদিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমবে।