হাওর ডেস্ক::
মাদারীপুরের শিবচরে একটি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিজের নামে নামকরণ করতে দেখে তা থামিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার নতুন অর্থবছরের প্রথম মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি আইন-২০২৪’ এর খসড়া প্রস্তাব আসে। তখন প্রধানমন্ত্রী নামকরণের বিষয়টি নাকচ করে দেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন যে, এটি উনার নামে হবে না। উনার নাম বাদ দিয়ে ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনলজি আইন-২০২৪ এই নামে অনুমোদিত হয়েছে। উনি উনার নামটা গ্রহণ করেন নাই। শুধু ‘ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি আইন-২০২৪’ হিসেবে খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”
এর আগেও নিজের নামে প্রতিষ্ঠান করতে প্রধানমন্ত্রী বারণ করেছেন জানিয়ে সচিব বলেন, “আগেও উনি উনার নাম বাদ দিয়েছিলেন। যেহেতু এটি এই ক্যাটাগরির প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠান সেজন্য মন্ত্রিসভা থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু উনি নিজের নামে প্রতিষ্ঠান করতে সম্মত হননি। উনি উনার নামে প্রতিষ্ঠান না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।”
নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২০ বছরের অধিক সময় ধরে সরকার পরিচালনা করছেন। এ সময়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, জামালপুরের ইসলামপুরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনলজি রয়েছে।
এর বাইরে নৌবাহিনীর একটি নৌ ঘাঁটি, দুটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, একাধিক বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, একাধিক মেডিকেল কলেজ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১০টি ছাত্রাবাস রয়েছে তার নামে। যদিও বিভিন্ন সময়ে নামকরণ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির মূল কাজ হবে আইসিটি সংক্রান্ত গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ইত্যাদি। এ প্রতিষ্ঠানে বিশেষায়িত গবেষণা করা হবে, প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কাজ করা হবে, বিশেষ ক্ষেত্রে ডিগ্রিও দেবে। আন্তর্জাতিক বাজারকে লক্ষ্য করে খুবই উচ্চমানের পড়াশোনা হবে এখানে। এই প্রতিষ্ঠানের কাজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আধুনিকতম ল্যাবরেটরি থাকবে।
জাতির পিতার পরিবারের কারও নামে কোনো প্রতিষ্ঠান করতে হলে আগে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সম্মতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রেও সম্মতি নেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, ”এই তথ্য সাধারণত উল্লেখ থাকে। তারপরও উনি বলেছেন, ট্রাস্টের অনুমতি থাকুক আর না থাকুক উনি সম্মতি দেবেন না।”
মাদারীপুর জেলার শিবচরে হবে এ প্রতিষ্ঠান। একটি গভর্নিং বডি দ্বারা পরিচালিত হবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক। বোর্ড অব গভর্নরের প্রধান হবেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী।
রপ্তানি নীতি ২০২৪-২০২৭ অনুমোদন
গত মে মাসে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটিতে অনুমোদনের পর এবার মন্ত্রিসভা কমিটি থেকে রপ্তানি নীতি ২০২৪-২০২৭ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিন বছরের জন্য এ নীতি প্রণয়ন করে সরকার। গত ৩০ জুন পুরোনো রপ্তানি নীতির মেয়াদ শেষ হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, আগের নীতিগুলো সঙ্গে নতুন কিছু নীতি যোগ করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা কমবে। সেগুলো মাথায় রেখে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা যেন বাড়ে, রপ্তানিকারকরা যেন উৎসাহিত হয় সেগুলো রাখা হয়েছে।
”এতদিন সফটওয়্যার রপ্তানির ওপর প্রণোদনা ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস রপ্তানির ওপরও যেন বিশেষ উৎসাহ দেওয়া হয় সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। শাক সবজি রপ্তানিতে আরও মনযোগী হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। কোয়ালিটি নিশ্চিত করা, কোনো বিষয়ে আপত্তি আসলে তখন নিজস্ব ডিসপুট মেকানিজমের একটি ব্যবস্থা করতে বলেছেন।“
তিনি বলেন, এর আগে যে তিন অর্থবছরব্যাপী রপ্তানি নীতিমালা নেওয়া হয়েছিল সেখানে, মেয়াদ শেষে ৮০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের রপ্তানির লক্ষ্য ছিল। গত অর্থবছরে প্রায় ৬৩ বিলিয়ন রপ্তানি আয় হয়েছিল। এই বছরের হিসাব এখনও শেষ হয়নি। আশা করা যাচ্ছে প্রায় ৭০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। তিন বছরের পরিকল্পনায় আছে যে, ২০২৭ সালে যে অর্থবছরে শেষ হবে তখন ১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হবে।“
নতুন নীতিতে নারী উদ্যোক্তা বা রপ্তানিকারকদের বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন বাজারের সঙ্গে যেন রপ্তানিকারকদের সংযোগ ঘটানো যায় সেজন্য পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সীমিত শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি পণ্যের যে তালিকা ছিল সেখানে পণ্যের নাম ছিল কিন্তু এইচএস কোড ছিল না। এখন এইচএস কোড যুক্ত করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু কোম্পানি গঠন
পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের জন্য একটি কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন এই কোম্পানি অথরাইজড ক্যাপিটাল হবে এক হাজার কোটি টাকা।
নতুন কোম্পানির নাম হবে পদ্মা ব্রিজ অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেইন্যান্স কোম্পানি পিএলসি।
মন্ত্রিপরিষদ বলেন, এই কোম্পানিতে ১৪ জনের একটা পর্ষদ থাকবে। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। বোর্ড অন্যান্য লোক বা জনবল কাঠামো ঠিক করবে। এখন একটা বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে পদ্মা সেতু পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে চুক্তি শেষে এই কোম্পানি দায়িত্ব নেবে।
২০২২ সালে পদ্মা সেতুর ও সংশ্লিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার দুটি কোম্পানিকে পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।