হাওর ডেস্ক::
সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সামসুদ্দোহা খান মজলিশের স্ত্রী সেলিমা খান হত্যায় জড়িত সন্দেহে তার মেয়েসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
১৩ বছর আগের ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের ভাষ্য, মেয়ের প্রেমিকের হাতেই ‘খুন হয়েছিলেন’ সেলিমা খান।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- প্রয়াত এমপির মেয়ে শামীমা খান মজলিশ পপি (৫৭), তার ‘প্রেমিক’ ইলেকট্রিক মিস্ত্রী সুবল কুমার রায়ক (৫০) এবং এমপির বাসার গৃহকর্মী আরতি সরকার (৫৮)।
সুবল ইতোমধ্যে অপরাধ ‘স্বীকার করেছেন’ জানিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই ইমরান আহমেদ মঙ্গলবার বলেন, আরতির দেওয়া তথ্যে রোববার সাভার থেকে বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১১ সালের ১৪ জুন ভোরবেলা সেলিমা খানকে সাভারে তার নিজের বাসায় গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই ঘটনার চারদিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান সেলিমা খান মারা যান।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সেলিমা খান মারা যাওয়ার পর তার ভাই সফিউর রহমান একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির ওপর।
সিআইডি তদন্ত করে এ ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বিবেচনা করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। আদালত তা গ্রহণ করে মামলা নিষ্পত্তিও করে।
মামলার বাদী সাফিউর রহমান খান তখন তদন্তভার পিবিআইকে দেওয়ার আবেদন জানিয়েও ব্যর্থ হন। পরে পিবিআই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নিতে আদালতে পৃথক আবেদন করে। ২০২০ সালে আদালত পিবিআইকে এ মামলা তদন্তের নির্দেশ দেয়।
এরপর গত চার বছর তদন্ত করে পিবিআই মামলার কিনারা করেছে জানিয়ে পিবিআই প্রধান বলেন, “এমপি সাহেবের বাসায় মাঝেমধ্যেই কাজের সূত্রে মহল্লার ইলেকট্রিক মিস্ত্রী সুবলের ডাক পড়ত। ওই আসা-যাওয়া করতে করতেই এমপি সাহেবের বিধবা মেয়ে পপির সঙ্গে সুবলের সম্পর্ক তৈরি হয়।”
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই বাসায় সুবলের যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায় জানিয়ে বনজ কুমার বলেন, “ঘটনার কয়েকদিন আগে সুবলকে বাসার কাছ দেখতে পেয়ে এমপি সাহেবের স্ত্রী সেলিমা খান রাগারাগিও করেছিলেন। এরপরে পপির সহায়তায় সুবল ঘটনার দিন বাসায় ঢুকে ফল কাটার চাকু দিয়ে সেলিমার ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এবং সেলিমা খানের মৃত্যু নিশ্চিত করতে বাসার রান্নাঘরের সুইচ বোর্ড ভেঙে সেখান থেকে তার বের করে উনাকে ইলেকট্রিক শকও দেয়।”
সিআইডি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রায় ৫ বছর পর দায়িত্ব পেয়ে নথিপত্র খুঁজতে গিয়ে সেগুলো আর ‘পাওয়া যায়নি’ বলেন জানান পিবিআই প্রধান।
তিনি বলেন, “পরে কিছু তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এবং সাবেক এমপির অন্য সন্তানের দেওয়া তথ্য নথিভুক্ত করা হয়। এছাড়া ঘটনার সময় বাসার ভেতর কে কী দেখেছে, সে বিষয় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একজন আমাদের জানান যে ঘটনার সময় রান্নাঘরের সুইচ বোর্ড ভাঙা ছিল। ওই ভাঙা সুইচ বোর্ডের সূত্র ধরে সুবলকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দায় স্বীকার করেন।”