হাওর ডেস্ক::
ক্লান্তিকর ১২০ মিনিটের ফুটবল শেষে ম্যাচের ভাগ্য গড়াল টাইব্রেকারে। শেষ ষোলোয় অবিশ্বাস্য তিন সেভে পর্তুগালের নায়ক হয়ে ওঠা গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তা এবার আর পারলেন না। উল্টো পোস্টে মেরে বসলেন তার সতীর্থ জোয়াও ফেলিক্স। ওই ব্যবধান ধরে রেখে, পাঁচ শটের পাঁচটিই জালে জড়িয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনালে উঠল ফ্রান্স।
হামবুর্গে শুক্রবার রাতে কোয়ার্টার-ফাইনালে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য সমতায় শেষ হয়। পরে টাইব্রেকারে ৫-৩ ব্যবধানে জিতে পরের ধাপে ওঠে ফরাসিরা।
প্রথম ঘণ্টার সাদামাটা ফুটবলের পর, অল্প সময়ের জন্য হলেও খেলায় প্রাণ ফেরে। ভালো কয়েকটি সুযোগও পায় দুই দল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মতো অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও নির্ধারক হয়ে উঠতে পারেনি কেউ। শেষে গিয়ে পর্তুগালের জন্য কান্না হয়ে আসে টাইব্রেকারে ফেলিক্সের ওই মিস শট।
এরই সঙ্গে শেষ হয়ে গেল ইউরোয় ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর যাত্রা। এবারের আসর দিয়ে ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতাটিতে নিজের পথচলা শেষের কথা আগেই জানান ৩৯ বছর বয়সী পর্তুগিজ মহাতারকা।
বড় মঞ্চের বাড়তি উত্তেজনা, সঙ্গে নিজেদের সেরা রূপে মেলে ধরার চাপ-সবকিছুর প্রভাবই যেন পড়ে দল দুটির ওপর। শুরু থেকে তাদের খেলায় গতির ঘাটতি খুব বেশি না থাকলেও, আক্রমণগুলো ঠিক গোছানো ছিল না।
২০তম মিনিটে গিয়ে লক্ষ্যে প্রথম শটের দেখা মেলে। দূর থেকে বুলেট গতির শট নেন থিও এরনঁদেজ, তবে নাগালের মধ্যে থাকায় ঠেকাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি গোলরক্ষকের। দু্ই মিনিটের মধ্যে আরেকটি আক্রমণে ছয় গজ বক্সে সতীর্থকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেন কিলিয়ান এমবাপে, সেটাও রুখে দেন কস্তা।
প্রথমার্ধে পর্তুগিজদের পারফরম্যান্স ছিল আরও ধারহীন। পজেশন রাখায় এগিয়ে থাকলেও, বিরতির আগে একবারের জন্যও প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের পরীক্ষা নিতে পারেনি তারা। ডি-বক্সের বাইরেই তাদের অপরিকল্পিত আক্রমণগুলো ভেস্তে যাচ্ছিল। আর ফরাসিদের তিন শটের মধ্যে এরনঁদেজের ওই একটিই শুধু ছিল লক্ষ্যে।
বিরতির পর এমবাপের পায়ে গতির ঝলক দেখা যায়। ৫০তম মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে তড়িৎ জায়গা করে নিয়ে শট নেন তিনি; কিন্তু সেটাও গোলরক্ষক বরাবর।
এর কিছুক্ষণ পরই বের্নার্দো সিলভার হেডে বল মুখের একপাশে লাগে এমবাপের। নাক ভেঙে যাওয়ায় মুখে মাস্ক পরে খেলছেন তিনি। শুয়ে পড়ে মাস্ক খুলে ফেলেন, কিছুক্ষণ নাক ধরে রাখতে দেখা যায় তাকে। একটু পরই অবশ্য উঠে দাঁড়ান তিনি, কেটে যায় শঙ্কা।
পরের কয়েক মিনিটে পর্তুগালের আক্রমণে যেন প্রাণ সঞ্চার হয়। প্রতিপক্ষের ওপর ছোটখাটো একটা ঝড় বইয়ে দেয় দলটি।
৬১তম মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট নিতে পারে পর্তুগাল। ব্রুনো ফের্নান্দেসের কোনাকুনি শটটি ঝাঁপিয়ে রুখে দেন মাইক মিয়াঁ। সুযোগ ছিল তারপরও, আলগা বল পেয়ে জোয়াও কানসেলোর প্রচেষ্টা হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। দুই মিনিট পর আবার ফ্রান্সের বক্সে হানা দেয় পর্তুগাল। এবার ভিতিনিয়ার শট ক্ষীপ্রতায় রুখে দেন মিয়াঁ।
এরপরই পাল্টা-আক্রমণ শাণায় ফ্রান্স। রান্দাল কোলো মুয়ানির কোনাকুনি শট স্লাইড করে আটকে দেন রুবেন দিয়াস। খানিক বাদে এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
৭৪তম মিনিটে ফ্রান্সের হতাশা বাড়ে আরও। প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে উসমান দেম্বেলের শটে পোস্টের বাইরের দিকে লেগে বেরিয়ে যায় বল।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলেছে পরেও। যদিও কোনোটাই প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে সেভাবে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট বাকি থাকতে বিপজ্জনক পজিশনে ফ্রি কিক পায় পর্তুগাল। কিন্তু পুরোটা সময় নিজের ছায়া হয়ে থাকা রোনালদোর শট রক্ষণ দেয়ালে বাধা পায়।
অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটে ডেডলক ভাঙার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও হতাশ করেন রোনালদো। ডান দিক থেকে সতীর্থের পাস বক্সে পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় উড়িয়ে মারেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের রেকর্ড গোলদাতা।
১০৫তম মিনিটে এমবাপেকে তুলে নেন কোচ দেশম। বদলি নামান বার্কোলাকে। তরুণ ফরোয়ার্ড আসায় তাদের আক্রমণে গতি কিছুটা বাড়ে; কিন্তু উল্লেখযোগ্য কিছু কেউ করতে পারেনি।
সবশেষে, টাইব্রেকারে ভাগ্য সহায় ফ্রান্সের, কপাল পুড়েছে পর্তুগালের। ২০১৬ আসরের ফাইনালে রোনালদো-পেপেদের কাছে হেরেই শিরোপাস্বপ্ন ভেঙেছিল ফরাসিদের।