হাওর ডেস্ক::
পাহাড়ি ঢলে শেরপুর সদর ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ৪০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
আকস্মিক বন্যায় জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার খবর জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত শেরপুর সদরে ছয় মিলিমিটার, নালিতাবাড়ীতে আট মিলিমিটার এবং নাকুগাঁওয়ে ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানায় পাউবো।
পাহাড়ি ঢলে সদর উপজেলার গাজীরখামার ও নালিতাবাড়ীর কলসপাড় ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় অনেক পুকুরের মাছ ভেসে। এ ছাড়া আমনের বীজতলা ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে পানি উঠায় দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।
গ্রামীণ রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় হাঁটুপানি মারিয়ে এবং ছোট নৌকায় চলাচল করছেন বাসিন্দারা। প্রতিদিন থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
গাজীরখামার ইউনিয়নের পলাশিয়া গ্রামের আজিরণ বেওয়া বলেন, “আংগর তো অসুবিধা পানি আইয়া। আন্দাবাড়ি কইরা আমরা খাইতে পারতাছি না। ঢলে পানি উইট্টা আমগরে বাড়িঘর তো মনে করুইন ডুইব্বা অইছে। এহন আমরা কি করমু।”
একই গ্রামের বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলেন, “ঝিনাইগাতী থাইকা পাহাড়ি ঢল আইসা পলাশিয়া গ্রামসহ কাওয়াপেচি, খরখরিয়া, কুরুলিয়াকান্দা গ্রামে নিম্নাঞ্চলে আমন বীজতলা ও সবজি আবাদ ডুইবা গেছে। হাঠাৎ বন্যা আসায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি অইছে।“
নালিতাবাড়ী উপজেলার পশ্চিম কলসপাড় গ্রামের কৃষক শাহজাহান বলেন, “কলসপাড় ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব কলসপাড় থাইকা ধইরা কাশেমপুর অইয়া গাগলাজানি, নাকশি, বালুঘাটা, তারাকান্দি, যোগানিয়া এসব এলাকায় জালাজুলা আমরা ফালাইছি সব খাইয়া গেছে গা।
“কোনো আশা ভরসা নাই। পুকুরের মাছ ভাইসা গেছে গা। কচুটচু লাগাইছিলাম ডুইবা গেছে। দ্বিতীয় তো কতা হইল, বাড়িঘরে পানি ওঠায় গরু বাছুর রাহা অসুবিধা। টান জায়গা দেইখা গরু বাছুর বাইন্দা বুইন্দা রাখছি।”
শেরপুর সদর উপজেলার গাজীরখামার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওলাদুল ইসলাম জানান, ঢলের পানিতে তার ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্থানের রোপা আমন ধানের বীজতলা ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে।
কিছু এলাকায় বাড়িঘরে পানি ওঠায় পরিবার নিয়ে রান্না করে খাওয়া দাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।
নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জানান, পাহাড়ি ঢলে তার ইউনিয়নের পিপলেশ্বর, সাতানিপাড়া ও বগানারা গ্রামসহ কমপক্ষে ৩০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানিতে কলস নদীর দুই কুল উপচে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়েছে আমনের বীজতলাও।
“পিপলেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এর আশেপাশে পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বালুঘাটা তারাকান্দি হয়ে পিপলেশ্বর পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কে এখনও হাঁটুসমান পানি থাকায় চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে।”
গ্রামীণ রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় মানুষ ছোট নৌকায় করে যাতায়াত করছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
সকাল ৯টায় শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, নাকুগাঁও পয়েন্টে ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৪৪ সেন্টিমিটার এবং নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ১৯৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া চেল্লাখালী নদীর পানি বাতকুচি পয়েন্টে ৯৬ সেন্টিমিটার এবং পুরনো ব্রহ্মপুত্রের পানি ২০৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ঝিনাইগাতীর মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পরিমাপের ব্যবস্থা না থাকায় নদী দুটির পানি বিপৎসীমার কত সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তা জানা সম্ভব হয়নি।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা জানান, আকস্মিকভাবে আসা পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। এরপরও বন্যায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। পরে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে।
তবে প্রকৃতপক্ষে কেউ পানিবন্দি অবস্থায় থাকলে ইউনিয়ন পর্যায়ে তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান ইউএনও।