হাওর ডেস্ক::
আগের দিনের সহিংসতার পর কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ ফের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা জানান, মঙ্গলবার বেলা ৩টায় রাজু ভাস্কর্যসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবেন তারা।
কোটা সংস্কারের এক দফা দাবির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার এবং সোমবারের ঘটনার হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে তাদের এ কর্মসূচি।
অন্যদিকে ছাত্রলীগ রাত ১২টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।
বাঙালির মহান স্বাধীনতাকে ‘কটাক্ষ’, একাত্তরের ঘৃণিত গণহত্যাকারী রাজাকারদের প্রতি ‘সাফাই’, আন্দোলনের নামে ‘অস্থিতিশীলতা’ তৈরি এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর ‘বর্বর হামলার প্রতিবাদে’ এই বিক্ষোভ সমাবেশ হবে বলে ছাত্রলীগের ভাষ্য।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, “কোটা আন্দোলন করার আগে তো তোদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?
ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই বক্তব্য নিয়ে রোববার রাতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গভীর রাতে বিক্ষোভে নামেন। সেখানে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছ, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।
এরপর সোমবার পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ।
এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে এবং পরে আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় ছাত্রলীগ। পিটুনিতে আহত হয়ে প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান, তাদের মধ্যে ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়।
সংঘর্ষ ও হামলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জোরালো অবস্থান নিতে দেখা যায়; রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের মারধর করে হল থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে।
সন্ধ্যার কিছু আগে পুলিশ এসে হলগুলোতে অবস্থান নিলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ফিরতে থাকেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ক্যাম্পাসের মধ্যে দল বেঁধে অবস্থান নেন। রাতে বিভিন্ন হলে তাদের তৎপরতা বাড়তে দেখা যায়।
অপরদিকে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের একটি অংশ জোট বেঁধে শহীদ মিনারের দিকে রওনা দেয়। পরে তারা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
পুলিশের বাধায় বেশিদূর যেতে না পারে কার্জন হলের কাছে সড়কে আন্দোলনকারীরা হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবারের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে।