হাওর ডেস্ক::
নাটোরের সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হলেও অযত্ন ও অবহেলায় এখন পরিত্যক্ত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে।
২০০৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ভবনটি উদ্বোধন করেন। তখন তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন মো. সাহাদত হোসেন। উদ্বোধনের পর অল্প কিছুদিন সেখানে কালেভদ্রে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলে। এরপর দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
এখন ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি মশা-মাছির আবাসস্থল। পরিষদ চত্বরে গবাদিপশুকে ঘাস খাওয়ায় এলাকাবাসী। ভবনের অধিকাংশ স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পুরো ভবনেই ফাটলের দাগ; দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র।
তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ‘পরিত্যক্ত’ হওয়ায় এখন পরিষদের কাজ চলে সিংড়া থানা মোড়ের পুরাতন ভবনে। সেখানেই সেবা নিতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। তাজপুর ইউপি কার্যালয় থেকে এ ভবনের দূরত্ব আট থেকে দশ কিলোমিটার। ফলে সেবা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নাগরিকদের।
দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে ক্ষোভ ঝরে তাজপুরের বাসিন্দা নিরঞ্জনের কণ্ঠে। তিনি বলছিলেন, “তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে তো কোনো কাজ হয় না, যেকোনো কাজের জন্য সিংড়া যেতে হয়।
“আট-দশ কিলোমিটার রাস্তা যেতে কম খরচ হয় না। যাদের বাড়ি দূরে, তাদের খরচ আরও বেশি। ফলে নাগরিক সেবা নিতে সবারই খরচ বাড়ছে।”
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেছেন, “ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনটি ঝড়-বাতাসে কাঁপে। বর্তমান চেয়ারম্যান ওই ভবনে দুই-একটি সালিশ করছেন। এখন সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় সিংড়া থানা মোড়ের পুরাতন ভবনে।”
তাজপুর ইউপির সাবেক সচিব মো. আরিফুল ইসলাম বিদ্যুৎ বলেন, “আমি ২০২০ সালে তিন মাস দায়িত্ব পালন করেছিলাম সিংড়া থানার মোড় পুরাতন ভবনে। আসলে ইউনিয়ন পরিষদের যে নতুন ভবন, সেখানে যাওয়ার মত কোনো পরিবেশ নেই। বৃষ্টি, বন্যা হলেই ভবনের ভেতরে পানি চলে আসে। ওইখানে ভবন করাই ঠিক হয়নি।”
বর্তমানে তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. মিনহাজ উদ্দিন। টানা তৃতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
২০১১ সালের শুরু থেকে তিন বছর মাঝে মাঝে নতুন পরিষদে বসেছেন জানিয়ে মিনহাজ বলেন, “৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০২০ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর নতুন ভবনে অফিস করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, “নিচু জায়গায় ভবনটি করা হয়েছিল, কাজের মানও ‘খুব খারাপ’ ছিল। পিলারগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মানুষ ভয়ে ওই পরিষদে যেতে চায় না, যদি ভেঙে পড়ে। এখন কেউ মরে গেলে তার দায়িত্ব কে নেবে? পুরাতন ভবনে পরিষদের কাজ করতে তেমন সমস্যা হচ্ছে না।”
অবশ্য নতুন ভবনটি সংস্কার করে অফিস করার মত পরিবেশ তৈরি হলে অবশ্যই সেখানে তিনি সেবা দেবেন বলে জানান এ ইউপি চেয়ারম্যান।
তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন সংস্কারের পাঁচটি চিঠির দুটিতে দেখা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভবন সংস্কার, বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত, পানির লাইন সংযোজন (সাব-মারসিবল প্যাম্প স্থাপন), পানির ট্যাংক সরবরাহ, দরজা-জানালা, চেয়ার-টেবিল ও আলমারি সরবরাহ, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ এবং আঙ্গিনার গর্তে মাটি ভরাটে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় দেখিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলেন তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন।
বাকি তিনটি আবেদনে বলা হয়েছে- “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ভবনটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে নিজেদের এবং জনগণের জানমালের ক্ষতি হতে পারে।
“তাই দীর্ঘদিন ধরে সিংড়া থানা মোড়ের পুরাতন ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। যে কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে জবাবদিহি করতে হয়-কেনো ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে অফিস করি না।”
তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আব্দুল মালেক বলছেন, “২০১১ সাল থেকেই কোনো লোকই আর নতুন ভবনে যান না। চেয়ারম্যান সাহেব তো (মিনহাজ উদ্দিন) অফিস করেন সিংড়ায়। দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে যেকোনো জিনিসই নষ্ট হয়ে যাবে।”
তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সাহাদত হোসেন ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
নতুন ইউপি ভবনের অবকাঠামো, নির্মাণ এবং আনুষাঙ্গিক কোনো বিষয়ে কোনো দুর্বলতা বা ঘাটতি ছিল না জানিয়ে সাহাদত বলেন, “নতুন পরিষদটা একটু দূরে ছিল। ১৯৯৭ সালে তাজপুর ইউনিয়নের একটি অংশ নিয়ে সিংড়া পৌরসভা গঠন হয়।
তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত নতুন ভবনটি প্রসঙ্গে নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞাঁ বলেন, “সিংড়া চলনবিল অধ্যুষিত একটি নিম্নাঞ্চল। তাজপুর ইউপি কার্যালয়টি ২০১৬ সালের বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
“আমরা চেষ্টা করছি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে এখানে নতুন মডেলের নতুন একটি ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য। যাতে তাজপুরের জনগণ বাড়ির পাশে থেকে ইউনিয়ন পরিষদের সেবাগুলো পেতে পারে।”