বিশেষ প্রতিনিধি::
কৃষি ক্যালে-ারের হিসেব অনুযায়ী আগস্ট মাসে শেষ হয়েছে আমন বীজতলার সময়। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিলম্বে আমন লাগানো যায়। কৃষিবিদদের মতে ওই সময়ে ধান লাগানো হলেও পূর্ণ ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এবার দুই দফা বন্যায় আমন ডুবিয়ে নেওয়ার পর বিলম্বে পানি নামায় অক্টোবর মাসে এসেও আমন চাষ করতে দেখা যাচ্ছে কৃষকদের।
‘আশিন্যা ধান’ ফলনে তেমন আশা না থাকলেও কৃষকরা জানিয়েছেন গোখাদ্য খড়ের জন্য তারা পতিত জমি ফেলে রাখতে চাননা। তবে বীজ ও যথা সময়ে পানি না সরায় বিভিন্ন স্থানে আমন জমি পতিত লক্ষ্য করা গেছে। সরেজমিন সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বিলম্বে আমন জমি চাষ ও জমি পতিত পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কৃষি বিভাগের মতে বন্যায় তেমন ক্ষতিও করেনি এবং কোন পতিত জমি নেই বলেও তারা জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে জেলার ১১ উপজেলার মধ্যে কমবেশি সব উপজেলায়ই আমন চাষ হয়ে থাকে। তবে বেশি চাষ হয় সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার এবং ছাতক উপজেলায়। কৃষি বিভাগের মতে জেলায় দুই লাখ আমনচাষী রয়েছে। চলতি মওসুমে ৬১ হাজার ৬৯৪ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও চাষ হয়েছে ৭২ হাজার হেক্টর। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে এক হাজার হেক্টরের বেশি আমন পরপর দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে আমন মওসুমের বিলম্ব সময় ধরে গত আগস্ট মাসে বীজতলা তৈরির সময় এবং গত সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ধান লাগানোর সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। তবে সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এখনো চাষ করছেন কৃষক। বীজ না পাওয়ায় অনেক এলাকায় জমি পতিত থাকতেও দেখা গেছে। এখন যে জমি চাসবাস করা হচ্ছে তা থেকে কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাবেনা বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষকরা জানিয়েছেন মনের শান্তনায় এখন মওসুম শেষে চাষাবাদ করছেন তারা।
গত শনিবার সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে এখনো জমি তৈরি করছেন কৃষক। তবে তাদের জমির আশপাশে অনেক পতিত জমি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পরদিন মোহনপুর ইউনিয়নের একাধিক গ্রাম ঘুরেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এই দুই ইউনিয়নে পতিত জমি পড়ে থাকতে দেখা গেলেও কৃষি বিভাগের মতে পতিত জমির পরিসংখ্যান নেই। বিলম্ব হলেও তারা আমনজমি চাষের আওতায় নিয়ে এসেছেন।
গৌরারং ইউনিয়নের বেড়াজালি গ্রামের কৃষক শামছুল হক বলেন, দুইবার পানি আইয়া জমিন নষ্ট খরছে। ই পানি দেরিতে নামায় চাষ খরা যারনা। তিনি জানান, আমন ধান লাগানোর মওসুম চলে গেছে। তারপরও মনের শান্তনায় চাষ করছে কৃষক। তিনি বলেন, ‘আশিন্যা ধানের আশা নাই’। গত বৈশাখে এই কৃষক বোরো ধান হারিয়েছেন। এবার আমনেরও ক্ষতি হয়েছে। এলাকার অনেক আমন জমি পতিত রয়েছে বলে জানান এই কৃষক। একই ইউনিয়নের কামারটুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হক বলেন, খেতো পানি, জমিন রইতাম পারছিনা। পয়লাবার পানি আইয়াই জমিন নিছেগি। তিনি জানান, এই এলাকার কৃষকের সবারই একই অবস্থা। অনেকে বিলম্বে জমি চাষ করেছেন। পানি না নামায় অনেকে জমি পতিত রেখেছেন।
শুধু এই দুই কৃষকই নয়, অন্যান্য এলাকার আমন চাষীরাও একই কথা জানিয়েছেন। তারা জানান, হাওরের ফসলহারা কৃষক আমনেও এবার ক্ষতিগ্রস্ত। এই ক্ষতি পোষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় তাদের। তাই প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, এবছর মেঘনা ও ব্রম্মপুত্র বেসিনে পানির চাপ থাকায় পানি বিলম্বে নামছে। দুই বেসিনেই অন্যান্য বারের চেয়ে এবার পানির চাপ বেশি। যার ফলে হাওরাঞ্চলের পানি বিলম্বে নামছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাহেদুল হক বলেন, কৃষি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আমনের সময় শেষ হয়েছে বেশ আগে। তারপরও কৃষকরা এখনো জমি চাষ করছেন। বন্যার কারণে বীজতলা নষ্ট এবং বিলম্বে পানি কমায় বিলম্বে চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, বিলম্বে চাষের কারণে ফলন হবে কম। তবে বৃষ্টি পাওয়া গেলে ফলন কিছুটা ভালো হতে পারে। আমন জমি পতিত নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যদি কোন জমি পতিত থাকে তাহলে সেখানে কৃষকরা শীতকালীন সব্জি চাষ করবেন।