অনলাইন::
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে যে লক্ষ লক্ষ মুসলিম গত দুমাসে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে গেছেন, তাদের প্রত্যাবাসনের কাজে বাংলাদেশের জন্যই দেরি হচ্ছে বলে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ এদিন অভিযোগ করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি ইয়াঙ্গন থেকে সরকারের এক শীর্ষস্থানীয় মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, মিয়ানমার এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত থাকলেও ফেরানোর শর্ত কী হবে তা নিয়ে বাংলাদেশ টালবাহানা করছে।
মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি-র মুখপাত্র জ তেয় এএফপি-কে বলেছেন, “আমাদের সরকার অনেক আগেই ঘোষণা করেছে আমরা (এই শরণার্থীদের) যে কোনও সময় ফেরত নিতে রাজি। কিন্তু এটা নিয়ে দুদেশের মধ্যে কী সমঝোতা হবে বাংলাদেশ এখনও সেটাই ভেবে চলেছে। ”
গত ২৫ আগস্টের পর থেকে রাখাইনের যে শরণার্থীরা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন, তাদের কোনও তালিকাও ঢাকা এখনও তাদের দেয়নি বলে ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন।
জ তেয়-কে উদ্ধৃত করে রয়টার্সও জানাচ্ছে, শুধু বাংলাদেশ রাজি হচ্ছে না বলেই শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরানোর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।
“আমরা চাই ১৯৯০র দশকের গোড়ার দিকে যে ধরনের সমঝোতার আওতায় শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরানো হয়েছিল এখনও সেই একই ধাঁচের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হোক। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও সেই সমঝোতার শর্তগুলো মানতেই প্রস্তুত নয়”, রয়টার্সকে জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র।
এমন কী, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশ সারা বিশ্ব থেকে যে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে, সে জন্যই তাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ঢিলেমি করছে বলেও তিনি দাবি করেছেন।
“এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ সারা বিশ্ব থেকে ৪০ কোটি ডলারেরও বেশি আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। আমরা তো ভয় পাচ্ছি, যেভাবে তারা এই বিপুল পরিমাণ সহায়তা পাচ্ছে তাতে না শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের পুরো প্রক্রিয়াটাই পিছিয়ে যায়”, রয়টার্সকে বলেছেন জ তেয়।
“যেভাবে বিপুল পরিমাণ আন্তর্জাতিক ভর্তুকি পাচ্ছে তারা, তাতে হয়তো বাংলাদেশ ভাবছে আদৌ শরণার্থীদের তারা প্রত্যাবাসন করবে কি না – আমাদের এখন এটাই দুশ্চিন্তা। ”
এর আগে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মিয়ানমার সফরের পর গত বৃহস্পতিবার সে দেশের সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে দায়ী করে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছিল।
ওই বিবৃতিতে ঢাকা বলেছিল, রাখাইনে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন-সহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মি খান যে মোট দশ দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলেন, মিয়ানমার তার কোনওটিতেই রাজি হয়নি।
তবে আজ বুধবার মিয়ানমার সরকারের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার তারা বাংলাদেশের ওপর পাল্টা চাপ প্রয়োগ করতে চাইছে এবং শরণার্থীদের ফেরাতে কেন এত দেরি হচ্ছে, সেই দায় ঢাকার ওপরই দিতে চাইছে।