অনলাইন ডেক্স::
সিলেটে স্বাগতিক সমর্থকদের মুহুর্মুহু করতালি আর ‘সিলেট সিক্সার্স’ ‘সিলেট সিক্সার্স’- ধ্বনিতে খেলা শুরুর পর থেকেই সরগরম মাঠ। খেলার ১৯ বল আগে স্বাগতিক সমর্থকদের উত্তেজনা, আবেগ-উচ্ছ্বস রূপ নিলো জয়োৎসবে। প্রথম ম্যাচেই জয় পাওয়ায় উত্তেজনা ও উচ্ছ্বাস ছিল বহগুণ।
ঢাকা বোলার পোলার্ডের বলকে শর্ট স্কোয়ার লেগে ঠেলে সিঙ্গেলসে নিতেই সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আনন্দর ফলগুধারা। ‘সিলেট সিক্সার্স’, ‘সিলেট সিক্সার্স’ ধ্বনিংতে পুরো লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকা মুখরিত। গ্যালারি, গ্রিন গ্যালারি আর গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড- পুরো মাঠেই আনন্দের বন্যা। এ বাধ ভাঙা উচ্ছ্বস আর উল্লাস স্বাগতিকদের শুভ সূচনার। এ আনন্দের বন্যা বিপিএলের পঞ্চম আসরে চ্যাম্পিয়ন ও অন্যতম ফেবারিট ঢাকাকে ৯ উইকেটের হারানোর।
খেলার আগে সব হিসেব নিকেশই ছিল ঢাকার পক্ষে। সাকিব আল হাসানের দলকে ফেবারিট ধরে নাসির হোসেনের সিলেটকে ভাবা হচ্ছিল আন্ডারডগ: কিন্তু মাঠে ঘটলো অন্য ঘটনা। কাগজে কলমে পিছিয়ে থাকলেও মাঠে বল ও ব্যাট হাতে বীরের মত লড়লো নাসিরের সিলেট। অন্যদিকে সাকিবের ঢাকা যেন পরিণত হলো আক্ষরিক অর্থেই কাগুজে বাঘে।
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- কোন বিভাগেই চ্যাম্পিয়নদে কে ‘চ্যাম্পিয়নের’ মতো মনে হয়নি। কেমন যেন খাপছাড়া ঠেকলো। পরের সেশনে সিলেট ওপেনিং জুটি উপুল থারাঙ্গা আর আন্দ্রে ফ্লেচারের ব্যাটিং দেখে মনে হলো উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ, আর প্রথম সেশনে ঢাকার ব্যাটিংয়ের সময় সেই উইকেটকেই মনে হচ্ছিল দুর্বোধ্য।
যেখানে সাঙ্গাকারা-এভিন লুইস আর টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট সাকিব ও কাইরণ পোলার্ডের মতো বিশ্বমানের পারফরমারের ব্যাটও আলো ছড়াতে পারেনি। তাদের কারো ব্যাট কথা বলেনি। কেউ বড় ইনিংসও খেলতে পারেননি। সর্বাধিক ৩২ আসে সাঙ্গাকারার ব্যাট থেকে।
ঢাকার তিন বোলার নাসির, লিয়াম প্লাঙ্কেট আর আবুল হাসান রাজু তাদের হাত খুলে খেলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান। তাদের সাঁড়াশি বোলিংয়ের বিপক্ষে ঢাকার কোনো ব্যাটসম্যান যখনই ‘বিগ হিট’ নিতে গেছেন, তখনই আউট হয়েছেন।
ঢাকার লড়াকু স্কোর গড়তে পারবে কি-না, তা যে দুজনার ওপর নির্ভর করছিল, সেই সাকিব ও কাইরণ পোলার্ড দু’জনই শেষ দিকে মারতে গিয়ে আউট হন। আবুল হাসান রাজুর স্লোয়ারে লং অফের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বিগম্যান, বিগহিটার পোলার্ড উইকেট দিয়ে দিলেন। সাত বলে ১১ রান করে যখন সীমানার ফুট দেড়েক আগে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন পোলার্ড, তখনো ঢাকার ৩৩ বল বাকি ছিল।
এরপরও সম্ভাবনা ছিল ইনিংসকে এগিয়ে নেওয়ার; কিন্তু সাকিব ইনিংসের ২২ বল বাকি থাকতে আউট হলে সে সম্ভাবনার প্রদীপও যায় নিভে। মিডঅফ ফিল্ডারকে ৩০ গজের ভিতরে দাঁড়াতে দেখে তার মাথার ওপর দিয়ে সীমানার ওপারে পাঠাতে গিয়ে মিড অফেই ক্যাচ তুলে ফেরত আসেন ঢাকার ক্যাপ্টেন সাকিব (২১ বলে ২৩)। আর তাতেই ১৩৬ রানের কম পুঁজিতে থামে ঢাকা।
অন্যদিকে দিনটি ছিল সিলেট অধিনায়ক নাসিরের। টস জয় দিয়ে শুরু দিন। পরে তার বোলিং চমকেই শুরুতে ব্যাকফুটে ঢাকা। অন্যদিকে উজ্জিবীত স্বাগতিকরা। বল হাতে শুরু করা নাসিরের প্রথম ওভারের শেষ বলে ফিরিয়ে দিলেন গতবারের সেনসেশন মেহেদী মারুফকে। প্রথম ওভারে (২ রানে) উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর সাঙ্গাকারা ও ইভেন লুইস ইনিংসকে নতুনভাবে সাজানোর হতেই সিলেট চেষ্টা করে কিছুদুর এগিয়েও গিয়েছিলেন;
কিন্তু আবার নাসিরের ব্রেক থ্রু। দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে কোন ফরম্যাটে কিছু করতে না পারলেও ঘরের মাঠে নাসির যে এখনো অনেক কিছুই পারেন, শনিবার বিকেল গড়ানোর আগে সে সত্যের দেখাই মিললো সিলেট স্টেডিয়ামে। এভিন লুইস আর সাঙ্গাকারা দ্বিতীয় উইকেটের পার্টনারশিপ জমে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নাসির ফিরিয়ে দিলেন লুইসকে (২৪ বলে ২৬)।
৫৪ রানের জুটি ভাঙার পর থেকেই আসলে ছন্দপতন ঢাকার। লুইস আউট হবার ঠিক দুই ওভার পর সাঙ্গাকারা (২৮ বলে ৩২) প্ল্যাঙ্কেটের বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পরই ঢাকার বড় ও লড়াকু পুঁজি গড়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
তারপরও ১৩৭ রান এত সহজে টপকে যাবে সিলেট সিক্সার্স- ভাবেননি অতিবড় সমর্থক, ভক্তও; কিন্তু দুই ওপেনার উপুল থারাঙ্গা আর আন্দ্রে ফ্লেচার সব সমীকরণ সহজ করে দেন। তাদের উইলো বাজির মুখে বালির বাাধের মত ভেঙে পড়ে ঢাকার বোলিং।
দুই ওপেনারের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে প্রথম উইকেটেই ওঠে ১২৫ রান। ফ্লেচার ৫১ বলে তিন ছক্কা ও পাঁচ বাউন্ডারিতে ৬৩ রানে লেগ স্পিনার আদিল রশিদের বলে আউট হলেও উপুল থারাঙ্গা (৪৮ বলে দুই ছক্কা ও পাঁচ বাউন্ডারিতে ৬৮*) সাজঘরে ফেরেন বিজয়ীর বেশে।