অনলাইন ডেক্স::
কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) ৬৩তম সম্মেলনের উদ্বোধন হচ্ছে রবিবার। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী ও সিপিএ-এর ভাইস প্যাট্রন শেখ হাসিনা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘৬৩তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্স (সিপিসি) ২০১৭’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন সিসিএ-এর চেয়ারপারসন ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সম্মেলনে সিপিএ-এর প্যাট্রন ব্রিটেনের রানির বার্তা পড়ে শোনানো হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ঝাঁকজমক করতে অনুষ্ঠানের আয়োজক সিপিএ‘র বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত সিপিএ সম্মেলনটি সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এ বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত ইন্টার পাল্টামেন্টারিয়ান ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান দু’টি। সংসদ ভবনসহ ঢাকাকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। সংসদ ভবনের দক্ষিণে অবস্থিত সবুজ মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রঙে আলোকিত করা হয়েছে উঠেছে পুরো সংসদ ভবন। সংসদ ভবন ও তার আশপাশের রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ডিজিটাল ব্যানারে ছাপিয়ে গেছে সম্মেলন স্থলের আশপাশের এলাকা।
সিপিএ সম্মেলনে কমনওয়েলথভুক্ত ৫২টি দেশের মধ্যে ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বলে সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এসব দেশের জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদের সমন্বয়ে গঠিত ১৮০টি ব্রাঞ্চের মধ্যে ১১০টি ব্রাঞ্চের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারসহ ৫ শতাধিক পার্লামেন্ট সদস্য অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রতিনিধিদের বড় অংশ ঢাকায় পৌঁছেছেন।
এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘কনটিনিউনিং টু এনহ্যান্স দ্য হাই স্ট্যান্ডার্ড অব পারফরমেন্স অব পার্লামেন্টারিয়ানস’।
এই সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল অংশ নেবে।
এদিকে সম্মেলনের উদ্বোধন সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হলেও এর বিভিন্ন সেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি)। এর আগে গত ১ নভেম্বর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত হোটেল রেডিসনে সিপিএ-এর নির্বাহী কমিটির বৈঠক ও সিপিএ স্মল ব্রাঞ্চের সম্মেলনসহ বেশ কয়েকটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ৮ নভেম্বর শেষ হবে এই সম্মেলন। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে মেয়াদ শেষ হচ্ছে সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারপারসন ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর। আগামী ৭ নভেম্বর সিপিএর নতুন চেয়ারপাসন নির্বাচন করা হবে।
সম্মেলন উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথিদের সুষ্ঠুভাবে আসা-যাওয়া, সুশৃঙ্খল যানবাহন পার্কিং ও আশপাশের এলাকায় যানবাহনের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দিক নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। ৫ নভেম্বর সকাল দশটা হতে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত, সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পশ্চিম মাথা (আড়ং ক্রসিং) থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পূর্ব মাথা (খেজুরবাগান ক্রসিং) হয়ে উড়োজাহাজ ক্রসিং পর্যন্ত যানবাহন চলাচল সীমিত থাকবে।
এদিকে ইন্দিরা রোডেও যানবাহন চলাচল সীমিত করা হবে। তবে পরীক্ষার্থী (জেএসসি ও জেডিসি) বহনকারী যানবাহন এ নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যা থাকছে
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন স্থলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌঁছানোর পরপরই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠের পর পরিবেশিত হবে উদ্বোধনী নৃত্য। এরপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সিপিএ চেয়ারপারসন শিরীন শারমিন চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দেবেন। এছাড়া সিপিএ-এর প্যাট্রন ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের পাঠানো বার্তা পড়ে শোনানো হবে। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর ৫ মিনিটের একটি ভিডিওচিত্র দেখানোর হবে। এরপর ‘সিম্পোনি অব ডেমোক্র্যাসি’ শিরোনামে পরিবেশিত হবে মঞ্চনৃত্য। এ সময় আরও একাধিক ভিডিওচিত্র ও নৃত্য পরিবেশন করা হবে। বেলা ১২টায় বক্তব্য দেবেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। সিপিএ সম্মেলন উপলক্ষে একটি ডাকটিকিটও এ সময় অবমুক্ত করা হবে।
১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠন সংসদীয় গণতন্ত্রকে সুসংহত ও সমুন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে এই সংগঠনের সদস্যপদ লাভ করে।
যানবাহনের জন্য নির্দেশনা
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি নিবিঘ্ন করতে ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ওই এলাকায় যাতায়াতের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শনিবার ডিএমপি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সম্মেলনের অতিথি বহনকারী যানবাহনগুলো কোন কোন পথে প্রবেশ করতে বা বের হতে পারবে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যে সব অতিথি মিরপুর রোড ব্যবহার করে জাতীয় সংসদ ভবনে যাবেন, তারা আসাদগেট হয়ে জাতীয় সংসদের পশ্চিম পাশের টানেল রোড দিয়ে প্রবেশ করে ডানে মোড় নিয়ে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ড্রপ করে সোজা মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কে পার্কিং করবেন। অনুষ্ঠান শেষে একই পথে বের হবেন।
যে আমন্ত্রিত অতিথি উড়োজাহাজ ক্রসিং হয়ে আসবেন, তারা মণিপুরি পাড়া হয়ে জাতীয় সংসদের পূর্ব পাশের টানেল রোড দিয়ে ঢুকে বামে মোড় নিয়ে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ড্রপ করে সোজা মানিক মিয়া এভিনিউতে পার্কিং করবেন। অনুষ্ঠান শেষে একই পথে বের হবেন।
এছাড়া রবিবার রাতে অনুষ্ঠেয় স্পিকার‘স ডিনারের সময় জাতীয় সংসদ ভবনের টানেল রোডের পশ্চিম মাথা (আসাদ গেট) দিয়ে যানবাহন নিয়ে জাতীয় সংসদে যাওয়ার বন্ধ থাকবে।
ডিনারের আমন্ত্রিত অতিথিরা টানেল রোডের পূর্ব মাথা (মনিপুরি পাড়া) দিয়ে এবং জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা বকুল তলা গেট দিয়ে ঢুকতে পারবেন।
আমন্ত্রিত অতিথিরা টানেল রোডের পূর্ব মাথা (মনিপুরি পাড়া) দিয়ে ঢুকে বামে মোড় নিয়ে দক্ষিণ প্লাজায় ডানে মোড় নিয়ে ভেন্যু গেটে ড্রপ করে বামে মোড় নিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কে পার্কিং করবেন।
যারা খামারবাড়ী-জাতীয় সংসদ বকুলতলা গেট দিয়ে ঢুকবেন, তরা বামে মোড় নিয়ে ভেন্যু গেটে ড্রপ করে আবার বামে মোড় নিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে পার্কিং করবেন।