1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

হাওরে জলমহালের নিয়ন্ত্রণ প্রভাবশালীদের হাতে: মরছে জেলে, বিনাশ হচ্ছে প্রকৃতি

  • আপডেট টাইম :: সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১১.৪২ এএম
  • ৩৬৪ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের হাওরে ইজারা যায় এমন সহ¯্রাধিক প্রাকৃতিক মৎস্যভা-ার রয়েছে। যা স্থানীয়ভাবে জলমহাল, বিল বা জলাশয় হিসেবে পরিচিত। মৎস্য নীতিমালা অনুযায়ী হাওরের দরিদ্র কৃষক ও প্রান্তিক মৎস্যজীবি জনগোষ্ঠী ভোগ দখল করার কথা থাকলেও এর নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক ওয়াটার লর্ডদের হাতে। সাধারণ মৎস্যজীবিদের আর্থিক অসচ্ছলতার সুযোগে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় প্রভাশালীরা জলমহাল দখল নিয়ে শুধু নিয়ন্ত্রণই করছেনা খুন-খারাবি ও মামলায় জড়াচ্ছে নীরিহ মৎস্যজীবিদের। জলমহাল নীতিমালা উপেক্ষা করে মৎস্য আহরণের পাশাপাশি বিনাশ করছে প্রকৃতি ও মৎস্যসম্পদ। প্রশাসনের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয়ে জলমহাল থেকে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তারা। এই বছর জেলার দিরাই উপজেলায় জলমহাল দখল ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ওয়াটার লর্ডদের হাতে খুন হয়েছে চারজন নিরীহ মৎস্যজীবি। সর্বশেষ গত শুক্রবার দিরাই উপজেলার ভছার হাওরে এক মৎস্যজীবিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।
জানা গেছে মৎস্য আহরণের এই সময়ে সুবিধাভোগী ইজারারাদাররা জলমহালে অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত করে প্রহরি নিযুক্ত করে। জলমহালের সীমানার বাইরে এসে তারা পুরো হাওরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মৎস্যজীবি ও সাধারণ কৃষকদের মাছ ধরতে বাধা দেয়। কাগজে-কলমে সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে মৎস্যজীবিরা জলমহাল ইজারা নিলেও তাদেরকে পিছনে থেকে অর্থের যোগান দিয়ে জলমহালের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওয়াটারলর্ডরা। তাছাড়া জলমহাল দখল নিয়েও অনেক সময় প্রভাবশালীরা দ্বন্ধে জড়ানোয় খুনোখুনির ঘটনা ঘটে। এতে সাধারণ মৎস্যজীবিরা মারা যায়। অনেক সময় সাধারণ মৎস্যজীবীরা সংগঠিত হয়ে হাওরে মাছ ধরতে চাইলে প্রভাবশালী ইজারাদাররা মৎস্যজীবিদের নামে জলমহালে লুটপাটের মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করে। সম্প্রতি উন্নয়ন স্কীমের আওতাধীন করালজান নামের একটি গ্রুপ জলমহাল দখল নিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একটি প্রভাবশালী চক্র। তারা জলমহালটি দখলে নিতে সমবায় সমিতির সদস্যদের ম্যানেজ করে সরকারের কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির ফন্দি আটছে। এই চক্র বর্তমানে সুনামগঞ্জের বড় জলমহালগুলো দখলে আছে।
জানা গেছে গত ১৭ জানুয়ারি দিরাই উপজেলার জারুলিয়া জলমহাল দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন মারা যান। এলাকায় একরার বাহিনী হিসেবে পরিচিত একরার হোসেনের লোকজন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা পৌর মেয়র মোশারফ মিয়ার লোকজনের মধ্যে এই সংঘর্ষে কুলঞ্জ গ্রামের তাজুল ইসলাম, উজ্জ্বল মিয়া শাহারুল নামের তিনজন মারা যান। এ ঘটনায় সুবিধাভোগী দুই পক্ষ জলমহালের নিয়ন্ত্রণে জড়ালেও তাদের কেউ বৈধ ইজারাদার ছিলনা। তারা নীরিহ এলাকাবাসীকে ব্যবহার করে জলমহাল নিজেদের দখলে নিতে এই হতাহতের জন্ম দেয়। গত শুক্রবার রাতে একই উপজেলার ভছার হাওরের জলমহালে মাছ ধরতে যায় সিচনী গ্রামের প্রায় ১০ জন মৎস্যজীবি। এ ঘটনায় দিরাই উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা অভিরাম তালুকদারের লোকজনের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় আব্দুল হান্নান নামের এক মৎস্যজীবিকে ধরে নিয়ে যায় খাগাউড়া গ্রামের লোকজন। শনিবার বিকেলে হাওরে আব্দুল হান্নানের লাশ ভেসে ওঠে। সিচনী গ্রামের লোকদের দাবি আব্দুল হান্নাকে খুন করে হাওরে ফেলে দিয়েছে খাগাউড়া গ্রামের লোকজন। এই দুই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে এই খুনের ঘটনায় অন্যান্য জলমহালেও অস্তিরতা বিরাজ করছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের মতে জেলায় ইজারাযোগ্য জলমহালের সংখ্যা প্রায় ১১১৮ টি। এ থেকে প্রতি বছর সরকার গড়ে প্রায় ১২ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। সুনামগঞ্জ মৎস্য বিভাগের মতে জেলার হাওরাঞ্চল থেকে প্রতি বছর প্রায় ৮১ হাজার মে.টন মাছ উৎপাদিত হয়। ৫৪ হাজার টন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আরো ২৩ হাজার মে.টন এর মতো হাওরের মাছ উদ্ধৃত্ত থাকে।
জানা গেছে প্রভাবশালী ইজারাদাররা নানা কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে জলমহালের উপর উচ্চ আদালতে মামলা করায় প্রায় অর্ধ শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ জল মহাল বছরের পর বছর ইজারা বন্ধ রয়েছে। জামালগঞ্জের বোয়ালিয়া প্রকাশিত মুকসেদপুর জলমহাল প্রায় অর্ধযুগ মামলা দিয়ে জেলা বিএনপির প্রভাবশালী একটি চক্র খাশ কালেকশনের নামে বছরে অন্তত ১০ কোটি টাকা টাকার মৎস্য আহরণ করেছে। সম্প্রতি এই জলমহালটি উন্নয়ন স্কীমে দরপত্রে ফিরেছে। এভাবে ইজারা বন্ধ থাকায় প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে খাস কালেকশনের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রায় অর্ধ শতাধিক বিল থেকে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে, জলমহালে মামলা করে ইজারা বন্ধ করার পাশাপাশি জলমহাল ভোগদখল করতে প্রভাবশালী ইজারাদাররা কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত জলমহালের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তারা বিল শুকিয়ে মাছ ধরার পাশাপাশি নিয়মিত এলাকার সাধারণ মৎস্যজীবিদের নির্যাতন করে। এ নিয়ে প্রায়ই তারা সংঘর্ষে জড়ায়। সাধারণ মৎস্যজীবিদের নির্যাতন করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করে নির্বিগ্নে জলমহাল ভোগ করে ফিরে আসে।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট রুহুল তুহিন বলেন, প্রভাবশালী ইজারাদাররা নানা কৌশলে জলমহাল ভোগ দখল করে। সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দেয়। বিশেষ করে এই মওসুমে তারা খুন-খারাবিতে জড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছরই তাদের হাতে এলাকার নীরিহ মৎস্যজীবিরা হতাহত হয়। সুনামগঞ্জের জলমহাল ব্যবস্থাপনা দিনকে দিন জটিলতার দিকে যাচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি সাধারণ মৎস্যজীবিরা তাদের অধিকার হারাচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শঙ্কর চন্দ্র দাস বলেন, সুনামগঞ্জে জলমহাল ব্যবস্থাপনায় নানা ত্রুটি আছে। বেশিরভাগ জলাশয়েই প্রকৃত মৎস্যজীবিরা নেই। তবে এখন সবকিছু সিস্টেমে নিয়ে আসা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ডেপুটি নেজারত কালেক্টর (আরডিসি) ফয়সাল আহমেদ বলেন, সুনামগঞ্জে জলমহালে নানা ত্রুটি ও মধ্যসত্তভোগীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে জলমহালগুলো বের করে নিয়ে আসতে কাজ শুরু করেছি। এখন প্রতিটি সমিতির অডিট রিপোর্ট, ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত করছি। তদন্তের ফলে প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণের তথ্য বেড়িয়ে আসছে। এই কাজ শেষ হলে জলাশয়ে প্রকৃত জেলেরা অধিকার ফিরে পাবে। জলাশয় দখল নিয়ে হানাহানি খুনোখুনি কমবে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!