স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিলেটগামী একটি ফিটনেসবিহীন বাস সকাল দশটায় যাত্রী নিয়ে রওয়ানা করে। ভার্ড হাসপাতালের সামনে গিয়েই পিছনের চাকা খুলে পার্শবর্তী দেখার হাওরে পড়ে যায়। সামনে ছিল যান্তব বেগবান এক ট্রাক। এই অবস্থায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বাসের যাত্রীরা প্রাণভয়ে হৈচৈ শুরু করেন। প্রায় ১শ গজের মতো দূরে গিয়ে বাসটি রাস্তায় আটকে গেলে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান যাত্রীরা। তবে বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই গাড়ির ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশও রাস্তায় খুলে পড়ে।
যাত্রীদের অভিযোগ সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে জেলার দুটি সমিতির প্রায় ৫শ গাড়ি রয়েছে। এছাড়াও সিলেটের আরো দুটি সমিতির কয়েকশ গাড়িও যাতায়াত করে। যাত্রীদের মতে এই সড়কে যাতায়াতকারী ৯০ শতাংশ গাড়িই ফিটনেসবিহীন ও যাতায়াতের অনপুযক্ত। মালিক-শ্রমিকরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এই সড়কে নতুন বাস না নামিয়ে পরিবহন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পরিবহন কমিটিটিতেও তাদের দৌড়াতœ্য নিয়ে কথা না বলায় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছেই।
জানা গেছে বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে সুনামগঞ্জেই সবচেয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা বেশি। অন্য এলাকায় রাস্তায় চলাচলে যে বাস ফিটনেসবিহীন হয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে সেই বাস নিয়ে আসা হয় সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে। গত ২০ বছর ধরে এভাবেই এই সড়কে যাত্রীসেবা অব্যাহত আছে। বিরতিহীনের নামে এই ফিটনেসবিহীন গাড়ি দিয়ে নি¤œমানের যাতায়াত ব্যবস্থা চালিয়ে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে গতকাল যে বাসটি যাত্রা শুরু করেছিল সেটি চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত ছিল। এই অবস্থায়ই যাত্রীদের নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। চালুর পর থেকেই হেলেদুলে চলছিল গাড়িটি। কয়েকজন নেমে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তারা সেই সুযোগ দেয়নি। যার ফলে মাত্র এক কি.মি দূরে গিয়ে বাসভর্তি যাত্রীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে বাসের চাকা খুলে পড়ে হাওরে। পড়ে গাড়ির যন্ত্রপাতিও রাস্তায় খুলে পড়ে।
ওই গাড়ির যাত্রী জাউয়া বাজার কলেজের প্রভাষক ও ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা রইছুজ্জামান আতঙ্কিত হয়ে এ নিয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেইসবুকে স্টেটাস দেন। তিনি লিখেছেন‘ এ যাত্রায় বড় অঘটনের কবল হতে রক্ষা পাওয়া গেলো। অথচ কিই না ঘটতে পারতো। ভাবলে আঁতকে উঠি। হয়তো নিজেকে আবিষ্কার করতাম হাসপাতালের কোমল বেডে প্রিয় মানুষগুলোর ভালোবাসামাখা স্পর্শে, নয়তো বন্ধনহীন হয়ে যেতাম আজন্মের মতো। পৃথিবী পড়ে থাকতো পাছে। যাক্, এসবের কিছুই ঘটে নি। গাড়ি এক্সিডেন্ট তার ভয়াবহ রূপ ধারন করতে পারে নি। প্রচন্ড বেগে ছুটে চলা গাড়ির চাকা খুলে গেল ধুম করে, বিকট শব্দে পিলে পানি নেই কারো, গাড়ি এবড়োতেবড়ো, সামনে বিশাল মালবাহী ট্রাক, লাগে লাগে অবস্থা, ইন্জিন থেকে ধোঁয়া নির্গত হতে হতে ট্রাকটির কয়েক হাত দূরে গাড়িখানা থামলো। নামলাম সবাই, দেখলাম চাকা তো নেই, নিচের কল-কব্জাগুলো বাঁকা হয়ে গেছে, সাইডের স্টিলটুকু উপরের দিকে উঠে পড়েছে, ইন্জিন থেকে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে।’
বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।