অনলাইন::
বিডিআর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
সাজার বিষয়ে কোনো আসামির বিষয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে কি-না এ বিষয়ে তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় অ্যার্টনি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের মামলায় হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুবে আলম বলেন, এ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা চাইলে আপিল করতে পারবেন। আর তারা আপিল করলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগকে শুনানির আয়োজন করতে হবে।
রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট কি-না সে বিষয়ে কোনো জবাব দেননি রাষ্ট্রের প্রধান এ আইন কর্মকর্তা।
যেসব আসামিরা খালাস পেয়েছেন তাদের খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব বেশি আসামি খালাস পায়নি। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেবে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঘোষিত রায়ের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এর আগে নিম্ন আদালত এ মামলায় ১৫২ জনকে ফাঁসি ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। এ দণ্ডাদেশের পরে বিচারিক আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে। পরে মামলাটির শুনানির জন্য তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে একটি বেঞ্চ গঠন করা হয়।
অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের আরও বলেন, রায়ে আদালত ৭টি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। বিজিবির ভাবমূর্তি রক্ষা, এ সদস্যদের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংগঠিত নারকীয় ওই ঘটনা বিষয়ে আগাম তথ্য দিতে ব্যর্থতা বিষয় খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ নির্দোষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। তৎকালীন বিডিআর বাহিনীর কিছু সদস্যের উচ্ছিৃঙ্খলতা, হিংস্রতা ও অমানবিকতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যা অকল্পনীয়।
রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডে আনা মামলায় দায়ের করা সব ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন গত ১৩ এপ্রিল শেষ হয়। এর আগে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সরোয়ার কাজল জানান, মোট ১২৪ কার্যদিবসে মামলায় পেপারবুক উপস্থাপন করা হয়। ৩৭০ কার্যদিবস মামলায় শুনানি হয়। তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি মারা গেছেন, ১৪ আসামি এখনও পলাতক।
হাইকোর্টের রায়ে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ জনের মধ্যে আপিল চলাকালে ১ জন মারা গিয়েছেন। হাইকোর্ট বিভাগ আজকে (সোমবার) ১৫২ জনের মধ্য থেকে ৮ জনের দণ্ড মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে নামিয়ে এনেছেন এবং ৪ জন আসামিকে খালাস দিয়েছেন। ফলে ১৩৯ জন আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে।
নিম্ন আদালতের দেয়া ১৬০ জন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে আপিল চলাকালে ২ জন মারা গিয়েছেন। হাইকোর্ট বিভাগ ১৪৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন এবং ১২ জনকে খালাস দিয়েছেন।