হাসান মোরশেদ:
১৯৭৫ এর পনেরো আগষ্ট শহীদ হয়েছিলেন যে কামাল, তিনি শেখ হাসিনার ভাই। ২০০০ এর পনেরো আগষ্ট মোনায়েম খানের নাতিদের গুলীতে শহীদ হয়েছিলেন যে কামাল, তিনি ও শেখ হাসিনার ভাই।
এক কামালের খুনীদের বিচার হয়েছে, আরেক কামালের খুনিরা আদালত থেকে ‘নির্দোষ’ প্রমানিত হয়ে বের হয়ে এসে- ক্রীড়া সংস্থার উঁচু পদ কিনেছে, শেখ হাসিনার সময়েই।
গ্রামে গঞ্জে ঘুরি। দেখি- আওয়ামী লীগ নামের রাজনৈতিক দলটি, যেটি এই জনপদের সবচেয়ে পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোর ও একটি কিভাবে বিক্রী হচ্ছে, কিভাবে আওয়ামী লীগের ভেতর ‘শুভ ও অশুভ’র দ্বন্ধ চলছে। এই দ্বন্ধে শুভ পরাজিত হচ্ছে প্রায়শঃ
#দাসপার্টিরখোঁজে বইয়ে শুকলাল পুরকায়স্থ’র কথা লিখেছিলাম। সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা অঞ্চলের পেরুয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা, ‘৭১ এর ৬ ডিসেম্বর তাকে গাছে উলটো করে ঝুলিয়ে চামড়া ছিলে নেয়া হয়েছিলো জীবন্ত। শুকলাল তবু ‘জয় বাংলা’ বলছিলেন। শুকলালের খুনী দালাল খালেকের ছেলে প্রদীপ মুনীর পরে আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে উঠেছিলো, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও। হেভীওয়েট আওয়ামী লীগ নেতাদের স্নেহধন্য হয়ে।
আওয়ামী লীগ শহীদ শুকলাল পুরকায়স্থকে মনে রাখেনি।
আমার সামনেই দাসপার্টির বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস’কে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কৈফিয়ত তলব করছিলো- কেনো তারা হত্যা করেছিলেন সশস্ত্র রাজাকারদের? বইয়ে এই ঘটনা প্রকাশ করায় রাজাকারপ্রিয় সেই আওয়ামী লিগ নেতা দুই কোটি টাকার মানহানীর মামলা করেছেন। মামলা লড়ছি- আমার সুযোগ ছিলো, সুযোগ আছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে অবগত করার। যাইনি, আইনের বিষয়- আদালতেই লড়ছি। লড়তে লড়তে জানতে পারছি- ‘৭০ এর নির্বাচনে এরা বঙ্গবন্ধুকে জনসভা করতে দেয়নি।
আওয়ামী লীগ কি জানেনা এইসব?
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় কাজ করবো। সেখানে কৃষ্ণপুর গ্রামে ভয়াবহ গনহত্যা ঘটেছিলো মুক্তিযুদ্ধে। গনহত্যার প্রধান অভিযুক্ত লিয়াকত পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দীর্ঘদিন সাধারন সম্পাদক ছিলো। ট্রাইব্যুনালে মামলা হবার পর পালিয়ে গেছে দেশের বাইরে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানতেন না তাকে সাধারন সম্পাদক বানানোর আগে?
সেদিন নবীগঞ্জের একজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা হচ্ছিলো। যুদ্ধে যাওয়ার অপরাধে তার বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিলো, হত্যা করেছিলো চাচী ও চাচাতো ভাইকে পাকিস্তান আর্মি। হত্যাকান্ডের আগে শান্তিকমিটির যে সদস্যের বাড়ীতে বসে আর্মি চা নাস্তা করেছিলো, তার সন্তান এখন এই অঞ্চলের আওয়ামী লীগের অন্যতম পদধারী নেতা।
আওয়ামী লীগ জানেনা?
বাংলাদেশ বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বিএনপিকে গিলে খেয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের মাস্টার প্ল্যানে ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নিলে ও নব্বুই’র এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এই দলটির সাধারন নেতা কর্মীদের প্রত্যাশা তৈরী করেছিলো- গনতান্ত্রিক পরিবেশ সুযোগ ও তৈরী করে দিয়েছিলো নতুন ভাবে রাজনীতি করার, বাংলাদেশের জন্য দরকার ছিলো আওয়ামী লীগ ছাড়া আরেকটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্ব সেই সুযোগ গ্রহন না করে নিজেদেরকে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিটিম হিসেবেই পছন্দ করেছেন এবং নিজেদের, নেতাকর্মীদের এবং বাংলাদেশের রাজনীতির সর্বনাশ করেছেন।
বিএনপি যেভাবে গিলে খাওয়া সম্ভব হয়েছে, আওয়ামী লীগকে সেভাবে সম্ভব নয় বলেই- এক্ষেত্রে কৌশল ভিন্ন। আওয়ামী লীগের সাথে সংঘর্ষে না গিয়ে বরং ‘অকুপাই আওয়ামী লীগ’। ভেতর থেকে আওয়ামী লীগকে দখল করা। এই দখল কাজে সব থেকে শক্তি জোগায় পদ ও পদবী। তাহলে আওয়ামী লীগের কোর নেতা কর্মী যারা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে আপোষহীন তাদেরকে কোনঠাসা করা যায় আর এদেরকে কোনঠাসা করা গেলে আর কিছু বাকী থাকেনা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের। এই বাস্তবায়ন হবে খুবই নির্মম ও রক্তাক্ত। আওয়ামী লীগের ডাইহার্ড নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাংখীদের রক্ত।
নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের যোগসাজশ ছাড়া এই ‘অকুপাই আওয়ামী লীগ’ কর্মসূচী কার্যকর হচ্ছেনা। কে কতো দরে বিক্রী হচ্ছেন সেটা ও একদিন জানা যাবে হয়তো।
কিন্তু শেখ হাসিনা,বঙ্গবন্ধু কন্যা- কামাল, শুকলাল সহ লাখো শহীদের বোন শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধের মুল্যবোধের দায়িত্ব আপনি এড়াবেন কী করে?
(লেখকের ফেইসবুক থেকে নেয়া)