অনলাইন ডেক্স::
জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে বাধা দূরে পদক্ষেপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন পালন না করতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে একই আহ্বান রেখেছেন বিএনপি ঘনিষ্ঠ পেশাজীবী নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীও।
বঙ্গবন্ধু হত্যার দিনটিতে জন্মদিন হিসেবে পালন করে খালেদা জিয়ার কেক কাটা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। এছাড়া তার আরও জন্মদিনের খবরও পাওয়া যায়।
বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পাওয়া কাদের সিদ্দিকী বলেন, “খালেদা জিয়ার সঙ্গে যখন কথা হয়েছে, তখন তাকে বলেছি, আপনার জন্মদিন আরও পরে পালন করা যায় না? তিনি বলেছেন, আমিও চাই তার মৃত্যু দিবসে শোক প্রকাশ করতে। তবে নেতা-কর্মীদের চাপে করতে পারছি না।
“যিনি নেতা-কর্মীদের চাপে ন্যায়কে ন্যায় বলতে না পারবেন, তাকে নেতা বলতে আমার কষ্ট হয়।”
তবে ১৫ অগাস্টকে কেন্দ্র করে পুরো মাসজুড়ে শোক পালনের বিরোধিতা করেন এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা কাদের সিদ্দিকী।
“১-২ তারিখে তো শোক ছিল না, বরং আমরা আনন্দেই ছিলাম। ১৫ তারিখের পর সারা মাস শোক পালন করা উচিৎ। বিএনপি-জামায়াতেরও পালন করা উচিৎ।”
জাফরুল্লাহ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদাকে কেক না কাটার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের স্বীকৃতি দিতেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান।
“আমি প্রত্যাশা করি, খালেদা জিয়া ১৫ অগাস্ট জন্মদিন পালন না করে শোক প্রকাশ করবেন। সঙ্গে সঙ্গে এটাও প্রত্যাশা করি, জিয়াউর রহমান যে তার (শেখ হাসিনা) বাবার নামে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা স্বীকার করবেন। তার নামে অপবাদ ছড়াবেন না। তাকে পাকিস্তানের চর বলা…. যাকে তারই পিতা বীরউত্তম উপাধি দিয়েছেন।”
হাসিনা-খালেদাকে ঘিরে রাখা ‘চাটুকাররা তারা যা শুনতে চায় তাই শোনায়’ মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, “সংকীর্ণতার উর্ধ্বে না উঠলে সমস্যার সমাধান হবে না।”
প্রসঙ্গ জাতীয় ঐক্য
কাদের সিদ্দিকী আয়োজিত এই সভায় বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানসহ ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন নেতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগঘেঁষা ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীও ছিলেন।
জাফরুল্লাহর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের পরামর্শক হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদও আলোচনায় অংশ নেন।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর খালেদা জিয়ার জঙ্গিবাদবিরোধী ‘জাতীয় ঐক্যের’ আহ্বান এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের তা প্রত্যাখ্যানের মধ্যে কাদের সিদ্দিকী এই সভা করলেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী জানান, জামায়াত ও জাসদ ছাড়া সবাইকে এই মত বিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি।
“আওয়ামী লীগকেও দাওয়াত করেছি। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে দাওয়াত দিয়ে এসেছেন।”
এই উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাখ্যায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, বর্তমানে দেশ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক সব দিক থেকেই খারাপ অবস্থায় রয়েছে।
জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ১০ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী না গেলে থানায় জানানোর নির্দেশের সমালোচনাও করেন তিনি।
“১০ দিন ক্লাসে না গেলে নাকি থানায় জানাতে হবে। আমি তো বছরেও ১০ দিন স্কুলে যেতাম না। স্কুল পালানো ছাত্র আমি। সেই জন্যই আমি মুক্তিযুদ্ধে যেতে পেরেছি।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নোমান বলেন, সরকার এই সমস্যার সমাধান কতটা চায়- তা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। জনগণের মধ্যে হতাশা-বিভ্রান্তি থাকলে জঙ্গিবাদ আরও বিস্তৃত হবে।
জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য না গড়ে বিদেশিদের সহযোগিতা নেওয়ার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “আমাদের সেনাবাহিনী, যারা বিদেশে গিয়ে সুনাম অর্জন করেছে, তারা সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসবে, সেটা জাতির আশা এবং তাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশের মাটিতে সামরিক বা রাজনৈতিকভাবে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আমরা সেটা হতে দেব না।।”
জামায়াতকে বাদ দিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে তাতে বিএনপির অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দিয়ে নোমান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের যারা বিরোধিতা করেছে, তাদেরকে গ্রহণ করতে বলি না। যারা পক্ষে ছিল, তাদেরকে নিয়েই ঐক্য হবে।”
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বলেন, “এই দেশে যে অবস্থা তাতে জাতীয় ঐক্য গড়তে অসুবিধা হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল এক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হয়।”
আগের বক্তা সুলতান মো. মনসুর আহমেদকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “সরকার যে কোনো মুহূর্তে ওই দলকে নিষিদ্ধ করতে পারত, এখনও পারে। সরকার সেটা করেনি।”
বিএনপির জোটসঙ্গী জাগপার প্রধান শফিউল আলম প্রধান বলেন, “জাতীয় ঐক্য গড়ার আগে আমাদেরকে ঠিক করতে হবে কেন ঐক্য? কার বিরুদ্ধে ঐক্য?
“২০ দলীয় জোট ছিল, এখনও আছে। ২০ দলীয় জোটের সদস্য হিসাবে আমার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমি সব বলতে পারি না।”
ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মিছবাহুর বলেন, “আমরা ঐক্য চাই। বঙ্গবীর আমাকে ডেকেছেন, আমরা এসেছি। তিনি যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তার যে অবদান-অবস্থান, তাতে ঐক্যের আহ্বান করা তার সাজে।
“যাদের কারণে ঐক্য প্রক্রিয়া ঝুলে আছে, তাদেরকে বাদ দিয়ে আহ্বান জানানো হলে ঐক্য হবে।”