1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

হাওররক্ষা বাধের দ্বিতীয় দফা মেয়াদের আর একদিন বাকি: ১৩ দিনে কাজ হয়েছে ১৬ শতাংশ

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮, ৩.০৭ পিএম
  • ৩৩০ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের অর্ধশত হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার দ্বিতীয় দফা মেয়াদের আরো একদিন বাকি। মঙ্গলবার পর্যন্ত গত ১৩ দিনে কাজ হয়েছে মাত্র ১৬ ভাগ। এ পর্যন্ত গড়ে ৮১ ভাগ কাজ হয়েছে। আগামী দুই দিনে শতভাগ কাজ সম্পন্ন করা যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা গড়ে ৮১ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা বললেও তাদের তথ্যে যথেষ্ট গড়মিল রয়েছে। কয়েকটি উপজেলায় এখনো ৫০ ভাগ কাজ হয়নি বলে তাদের অভিযোগ।
কাবিটা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষের চূড়ান্ত নির্দেশনা ছিল। ওই সময়ে মাত্র ৫০ ভাগ করতে সক্ষম হন সংশ্লিষ্টরা। পরে দ্বিতীয় দফা আরও ১৫ দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে এখনো দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুরে অর্ধেকের বেশি কাজ হয়নি বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। কৃষকরা এবার হাওরের ফসলরক্ষার নামে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ অপচয়েরও অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া অনেক প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ না করায় হাওর অরক্ষিত রয়েছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে হাওররক্ষা বাধের জন্য ৯৬৪ টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়। নতুন কাবিটা নীতিমালায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের প্রধান করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন, অনুমোদন ও বরাদ্দ বণ্ঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে কাবিটা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির একাউন্টে প্রায় ১২০ কোটি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। পানিসম্পদ মন্ত্রী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, পাউবোর বাধ মনিটরিং কমিটিসহ উর্ধতন কতৃপক্ষ একাধিকবার হাওরে এসে সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কিন্তু পিআইসি গঠনে বিলম্ব, স্বজনপ্রীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে কাজ বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে বিলম্বে পানি নামার কারণে প্রকল্পে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হওয়ার কারণেই কাজের অগ্রগতি কম।
সূত্র জানিয়েছে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত কাজের গড় অগ্রগতি ৮১ ভাগ। তবে দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুরে ৬৫-৭০ ভাগ কাজ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরাই জানিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ প্রকল্পেই প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হয়নি। বাধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন, ড্রেসিং না করা, দুর্বাঘাস না লাগানো, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে প্রাক্কলন অনুযায়ী মাটি না ফেলা, পুরনো বাধে কেবল ড্রেসিং দিয়ে বরাদ্দ লোপাটসহ নানা অনিয়মে জড়িয়েছে পিআইসি। ইতোমধ্যে ধরমপাশা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, ছাতকসহ কয়েকটি উপজেলার একাধিক পিআইসির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসন তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। কাউকে কাউকে মুচলেকা সাবধান করা হয়েছে।
কৃষকদের অভিযোগ বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক বিবেচনায় পিআইসি গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া বেশিরভাগ ইউনিয়নেই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে পিআইসি গঠন করা হয়েছে। এসব পিআইসিতে চেয়ারম্যানরা ধরাছোয়ার বাইরে থেকে তাদের সহজ সরল সমর্থকদের দিয়ে গঠন করেছেন। তবে আড়ালে লেনদেনসহ আনুষঙ্গিক সকল কাজই করছেন চেয়ারম্যান ও তাদের প্রতিনিধিরা। এভাবে বাঁধ রক্ষায় নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে শুরু থেকেই।
জানা গেছে, গত বছর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে যাওয়ায় সরকার কাবিটা নীতিমালা পরিবর্তন করে বাধের কাজ শুরু করে। ওই নীতিমালায় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরুর নির্দেশনা দিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ করার কথা বলা হয়েছিল। তাছাড়া পিআইসি বাধ এলাকার জমির মালিকদের রাখার স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হলেও কোন পিআইসিতেই সেটা মানা হয়নি। সবগুলো পিআইসিই গঠন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা তাদের আতœীয়-স্বজন ও সমর্থকদের দিয়ে। নীতিমালায়
উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়ায় সংশ্লিষ্টরা ইউপি চেয়ারম্যানদের সুযোগ দেন পিআইসি গঠনের জন্য। এই সুযোগে চতুর জনপ্রতিনিধিরা হাওরের বাধের বদলে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেন যা হাওরের ফসলরক্ষার কোনও কাজে আসেনি বলে সরেজমিন ঘুরে জানিয়েছেন হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। হাওরের বাঁধ নির্মাণের কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের বিরুদ্ধে জেলা শহরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে লিখিত অভিযোগ করেছেন কৃষক ও সচেতন লোকজন। হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ প্রতিটি উপজেলার প্রকল্প ঘুরে এসে নানা অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ যথা নিয়মে ও যথা সময়ে কাজ করা হয়নি। কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির পাশাপাশি বাঁধের গোড়া থেকে মাটি নিয়ে বাঁধে ফেলা হয়েছে বলে তারা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে জানিয়েছেন। সম্প্রতি এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দিরাই, শাল্লা, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ঘুরে নানামুখি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। ইতোমধ্যে সংগঠনটি এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপিও প্রদান করেছে। তারা দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্থক্ষেপও চেয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে প্রাক্কলন অনুযায়ী বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় এবং যথা সময়ে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বাঁধে ফাটলও দেখা দিয়েছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।
গত ১১ মার্চ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কাবিটা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক হাওররক্ষার নামে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারি অর্থ অপচয় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তাছাড়া হাওররক্ষার নামে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তাও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ওইসভায় তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল অভিযোগ করেন, শনির হাওরের জামালগঞ্জ এলাকার রাধানগর অংশের প্রায় ৮শ মিটার এলাকা অরক্ষিত রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। গুরমার হাওরের শরিফপুর অংশে আফরমারা বাধের এক কি.মি এলাকায় কোন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না হওয়ায় পুরো হাওর অরক্ষিত আছে। লেদারবন্দ হাওরের প্রায় ৪০০ একর জমি রক্ষার জন্য কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়াও চন্দ্র সোনারতাল হাওরের মিলনপুর-শরিফপুর অংশের প্রায় আধা কি.মি. এলাকায় কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। তিনি অভিযোগ করেন স্থানীয় কৃষকদের দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে। কৃষকরা উক্ত স্থানগুলোতে প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানালেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন প্রকল্প গ্রহণ করেনি। যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থানে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, আমরা প্রায় প্রতিটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাধগুলো পরিদর্শন করেছি। কোথাও নীতিমালা মেনে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি, তেমনিভাবে কাজও করা হয়নি। বাঁধের কাজে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি হয়েছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত কাজ শেষ করা যায়নি। এ বিষয়ে সচেতন কৃষকরা আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, দ্বিতীয় দফা ১৫ দিন মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮১ ভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুরে কাজ কিছুটা কম হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় পর্যায় থেকে আমরা বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত নতুন করে আর কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!