স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জের দিরাই-শ্যামারচর সড়কে দুর্ঘটনায় আহত চারজনকে চাঁদা তুলে চিকিৎসা দিয়েছেন কমরেড অমরচাঁদ দাস। গত সোমবার একটি বেপরোয়া ট্রাক একটি অটোরিক্সাকে চাপা দিলে চালকসহ চারজন গুরুতর আহত হন। রাস্তায় পড়ে রক্তাক্ত আহতরা কাতরালেও কেউ এগিয়ে আসছিলো না। এসময় শ্যামারচর এলাকার বাসিন্দা কমরেড অমরচাদ দাস দিরাই থেকে শ্যামারচর যাওয়ার পথে এ দৃশ্য দেখে গাড়ি থেকে নেমে যান। সেখান থেকে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা রোগিদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশনা দিলে তিনি চাঁদা তুলে তাদেরকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা দেড়টার দিকে দিরাই-শ্যামারচর সড়কের কাইলানি এলাকায় শ্যামারচরগামী একটি ট্রাক দিরাইগামী অটোরিক্সাকে ধাক্কা দেয়। এতে গাড়িটি ভেঙ্গে যায় গাড়িতে থাকা তিন যাত্রী ও চালক আহত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় কাতরাচ্ছিলেন। এসময় বাড়ি যাচ্ছিলেন অমরচাদ দাস। তিনি গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে ট্রাকটিকে জনতার সহায়তায় আটক করে অন্য একটি গাড়ি দিয়ে আহত বিকাশ দাস, রেণুবালা দাস, সজল সরকার ও বারেন্দ্র দাসকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। হতদরিদ্র এসব লোকের কাছে কোন পয়সা ছিলনা। তিনি হাসপাতালে নেওয়ার পরই স্থানীয় এমপি জয়া সেনগুপ্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদারসহ শ্যামারচর বাজারের ব্যবসায়ীদের আহত রোগিদের চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা সহায়তার আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসেন। দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু রোগিদের কোন স্বজন না থাকায় এম্বুলেন্স সংগ্রহ করে অমরচাদ দাস তাদেরকে সোমবার রাতে সিলেটে নিয়ে যান। সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করেন। এখনো তিনি ওসমানী হাসপাতালে রোগিদের সঙ্গে রয়েছেন।
উল্লেখ্য দিরাই উপজেলার শ্যামারচর গ্রামের অমরচাদ দাস (৭০) এক অকৃতদার বিপ্লবী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। হাওরের ফসলরক্ষা বাধে স্বেচ্ছায় ও এলাকাবাসীকে যুক্ত করে দীর্ঘদিন ধরে ফসলরক্ষার কাজ করছেন। তাছাড়া এলাকায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও অসহায় মানুষের সেবা করাই তার নেশা।
আহত রেনুবালা দাস বলেন, তাইন আমরার এলাকার লিডার। গরিব মাইনসের সেবা করাই তার ধর্ম। তাইন কাইল না থাকলে আমরা বাচতাম না। তাইনের লাগি আমরা এখন চিকিৎসা পায়রাম।
অমর চাদ দাস বলেন, আমি সোমবার সকালে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে দেখি কয়েকজন মানুষ রাস্তায় পড়ে রক্তাক্ত হয়ে কাতরাচ্ছে। কেউ তাদের চিকিৎসার উদ্যোগ নিচ্ছেনা। আমি গাড়ি থেকে নেমে সোজা তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে চাঁদা তুলে তাদের চিকিৎসা করিয়ে সিলেট নিয়ে আসি। এখন তাদের আতœীয়-স্বজনদের কাছে তাদের রেখে এসেছি।