বিশেষ প্রতিনিধি::
আচমকা কোন বিশিষ্টজন কারও বিয়ের আসরে উপস্থিত হলে খুশি হন বর বা কনের স্বজনরা। সম্প্রতি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী ঘনঘন উপস্থিত হচ্ছেন। তবে অনুষ্ঠানের মর্যাদা বাড়াতে নয়; সমাজের ব্যাধি বা অভিশাপ বাল্যবিয়ে ভেঙ্গে দিতে। সম্প্রতি ৯টি বাল্যবিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে তিনি কিরোশীদের রক্ষা করেছেন। গত শুক্রবারই ৭টি বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে আলোচনায় রয়েছেন তিনি। তার কারণেই ৯ কিশোরী অকালে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তিনি সামাজিক আন্দোলনেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, কোনভাবে তাঁর উপজেলার কোন গ্রামে বাল্যবিয়ের খবর কানে আসলেই নিজেই দৌঁড়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবি। বিয়ের আসরে হঠাৎ তার উপস্থিতিতে চেনা-জানা লোকজন কিছুটা আনন্দিত হলেও পরক্ষণে তার রূদ্রমূর্তি দেখে বিস্মিত হন। জানা গেছে সম্প্রতি ৯টি বাল্যবিয়ে বন্ধই করেননি কেবল, এর সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে দ- দিয়েছেন। এক কাজীর লাইসেন্স বাতিলের লিখিত আবেদনও করেছেন। একের পর এক বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দিয়ে বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে রক্ষা করছেন অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীদের।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৬ মাস আগে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী। সমাজের অভিশাপ বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে তিনি স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান নানা ফোরামে। এমনকি বিভিন্ন উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষকে সমাজের এই অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান। সামাজিক যোগাযোগ সাইটেও তার প্রশাসনিক আইডি থেকে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে জনতাকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
জানা গেছে গত ২৭ জুলাই পৌর শহরের ৯ নং ওয়ার্ডের জলিলপুরে ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীর জমজমাট বিয়ের আয়োজন করে তার পরিবার। অতিথিদের আপ্যায়ন শেষে বিয়ের প্রক্রিয়া শেষের আগেই খবর পেয়ে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই কিশোরীর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল দেখে বয়স নির্ণয় করে তিনি তার বিয়ে ভেঙ্গে দেন। এ ঘটনায় জড়িত তার বাবা, হবু বর, বরের বোন জামাই এবং উকিল বাপকেও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। কাজীর কারসাজীতে কনের বয়স কমিয়ে বিয়ের আয়োজন করায় ওই ওয়ার্ডের নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স বাতিলের জন্য জেলা রেজিস্টার বরাবরে আবেদন জানিয়েছেন। ঠিক এই ঘটনার দুই দিন পর পৌর শহরের ওয়েজখালী এলাকায় ১৩ বছরের এক কিশোরীর বিয়ের আয়োজন করায় সেই বিয়েও ভেঙ্গে দেন তিনি। কনের বাবা, বর হায়দার আলীসহ ৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এক সাধারণ মানুষের মোবাইল এসএমএস পেয়ে তিনি এই বিয়েটি ভেঙ্গে দেন বলে জানা গেছে।
তবে গত শুক্রবার দিনব্যাপী বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ পৌরসভাসহ চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৭টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন। বাল্যবিয়ের সঙ্গে জড়িত ৬জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- এবং কয়েকজননে অর্থদ-ও প্রদান করা হয়েছে। পৌর এলাকার শান্তিবাগ ও ওয়েজখালি এলাকায় ২টি, মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে ১টি, গৌরারং ইউনিয়নের চানপুর গ্রামে ২টি, লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে ১টি, সুরমা ইউনিয়নের বালিকান্দি গ্রামে ১টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দেন তিনি। এভাবে গত শুক্রবার দিনব্যাপী বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, সমাজের অভিশাপ বাল্যবিয়ে নির্মূল করতে হলে সমাজের মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। সবাই এটাকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে নিলে অবশ্যই এই অভিশাপ থেকে বেরুনো সম্ভব। সদর উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।