যশোর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে পৃথক কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৯ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। রবিবার রাত থেকে সোমবার সকালের মধ্যে এসব কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও র্যাবের দাবি নিহতরা সবাই মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল। কারও কারও বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে মামলাও রয়েছে।
যশোর : যশোরে পুলিশের সঙ্গে মাদক বিক্রেতাদের পৃথক বন্দুকযুদ্ধে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে এম আজমল হুদা জানান, রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে যশোর শহরতলীর শেখহাটি ও খোলাডাঙ্গায় মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করছে-এমন সংবাদ পায় পুলিশ। খবর পেয়ে পুলিশ ওই স্থান দুটিতে যায়। এসময় শেখহাটির নওয়াব আলীর খেজুর বাগান থেকে দুইটি মৃতদেহ ও ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। একই সাথে খোলাডাঙ্গা মাঠের মধ্যে থেকে এক মরদেহ ও এক শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন ওসি। ঘটনাস্থল থেকে দুইটি পিস্তল ও গুলির খোসা পাওয়ার কথাও জানান তিনি।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কল্লোল কুমার সাহা জানান, ভোর ৪টা ৫ মিনিটের দিকে যশোর কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক তরুণ কুমার গুলিবিদ্ধ একটি ও যশোর উপশহর ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম দু’টি মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। মরদেহ তিনটি হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নরসিংদী : নরসিংদীতে পলাশে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইমান আলী (২৮) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার ঘোড়াশাল খালিশারটেক এলাকায় এ কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। র্যাবের দাবি, নিহত ইমান আলী নরসিংদীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক। বন্দুকযুদ্ধের পর ইমান আলীর কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তলসহ বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ সময় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়েছে র্যাবের পক্ষ থেকে।
র্যাব ১১ এর কম্পানি কমান্ডার মো. জসিম উদ্দিনের ভাষ্যমতে, ইমান আলী ঘোড়াশালের খালিশারটেক এলাকায় তার বাড়ির পাশে ইয়াবার চালান আদান প্রদান করছেন- এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ইমান আলীর সঙ্গে তার দুই সহযোগী ছিলেন। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। পরে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় ইমান আলী গুলিবিদ্ধ হন। আর বাকি দুজন পালিয়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় ইমান আলীকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
র্যাব ১১ এর কম্পানি কমান্ডার বলেন, ইমান আলীর বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার নাগরিয়া কান্দি গ্রামে। তার মায়ের নাম মমতাজ বেগম। বাবার নাম মিলন মিয়া (সৎ বাবা)। তবে তার আসল বাবার নাম জানা যায়নি। তার মা মমতাজ বেগমের একাধিক বিয়ে হওয়ার সুবাধে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল খালিশকাটেক এলাকার মিলন মিয়ার (সৎ বাবা) বাড়িতেও তিনি দীর্ঘদিন অবস্থান করেছিলেন। তিনি নাগরিয়াকান্দি ও খালিশকাটেক দুই এলাকারই পরিচয় দিয়ে থাকেন। বর্তমানে তাঁর মা মমতাজ বেগম ওরফে বুড়ি খালিশকাটেক এলাকায় থাকেন। তিনিও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর ইমান আলী তাঁর স্ত্রী পারভীন বেগমকে নিয়ে নাগরিয়াকান্দি এলাকায় বসবাস করেন। তাঁর শ্বশুরবাড়িও নাগরিয়াকান্দি এলাকায়।
কম্পানি কমান্ডার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ইমান আলী শুধু মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না, তিনি জেলার মাদক নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, বিস্ফোরক, অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এক ডজন মামলা রয়েছে। তার পুরো পরিবারই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে র্যাবের সাথে গুলিবিনিময়ে আবুল কালাম আজাদ খান (৪২) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার দেওলাবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবুল কালাম আজাদ খান উপজেলার পূর্ব পাকুটিয়া এলাকার মৃত আব্দুল রহমান খানের ছেলে।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ, বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এ সময় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়।
টাঙ্গাইল র্যাব-১২ এর কোম্পানী কমান্ডার রবিউল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি ৫/৬ জন অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেওলাবাড়ী গ্রামের সাবেক সোহরাব চেয়ারম্যানের ইটভাটায় মাদক ব্যবসায়ের জন্য অবস্থান নিয়েছে। এমন সংবাদ পাওয়া মাত্রই র্যাব সদস্যরা গভীর রাতে সেখানে পৌছালে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ীরা র্যাব সদস্যদের উদ্দেশ্যে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পরে র্যাব সদস্যরা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি করে। পরে গুলিবিনিময়ের এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটে এবং পালিয়ে যায়। পরে খোঁজাখুঁজির পর এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
তিনি বলেন, এ সময় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছে। এরা হলো- এএসআই (এবি) ছামিদুল ইসলাম ও নায়েক আনিছুর রহমান। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ৩ রাউন্ড তাজা গুলি, একটি ম্যাগজিন, ১০০ (একশত) বোতল ফেন্সিডিল, ১৫০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আবুল কালাম আজাদ খানের বিরুদ্ধে অবৈধ মাদক সংক্রান্ত প্রায় ৬টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তিনি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল এলাকায় একজন মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত।
রাজশাহী : রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত লিয়াকত আলী মণ্ডল পুঠিয়ার বানেশ্বর ইউনিয়নের নামাজগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা, গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার মধ্যরাতে উপজেলার বেলপুকুরে জামিরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। র্যাবের দাবি, নিহত লিয়াকত এলাকার মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে থানায় আটটি মামলা ছিল।
তবে লিয়াকতের স্ত্রী নেহের বানু বলেন, রবিবার দুপুরের আগে থেকে লিয়াকত নিখোঁজ ছিলেন। পরে রাতে তারা খবর পান, লিয়াকত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। তিনি স্থানীয় বানেশ্বর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। র্যাব-৫-এর উপঅধিনায়ক মেজর আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাতে বেলপুকুরের ক্ষুদ্র জামিরা এলাকায় র্যাবের একটি টহল দল মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা র্যাবের টহল দলের ওপর অতর্কিতে গুলিবর্ষণ শুরু করে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়।
এ সময় লিয়াকত মোটরসাইকেল নিয়ে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে গুলিবিদ্ধ লিয়াকতকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ৮২৩ পিস ইয়াবা, দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি র্যাবের।
গাজীপুর : গাজীপুরের টঙ্গীতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। নিহত মাদক বিক্রেতার নাম রেজাউল ইসলাম রনি ওরফে বেস্তি রনি (২৭)। নিহত রেজাউল ইসলাম রনি ওরফে বেস্তি রনি টঙ্গীর এরশাদ নগরের তিন নম্বর ব্লকের বাসিন্দা হাফিজুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন টঙ্গী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ওমর ফারুক এবং এএসআই মো. আনোয়ার হোসেন।
টঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মাদক কেনা-বেচার খবর পেয়ে পুলিশ রবিবার রাত সোয়া ৩টার দিকে টঙ্গীর নিমতলী মাঠ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে তারাও পাল্টা গুলি ছুড়লে মাদক বিক্রেতারা পালিয়ে যায়। পরে গুলিবিদ্ধ রনিকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। রনির বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় মাদকের ১৪টি মাদক মামলা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে জোনাব আলী নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার ভোর ৩টার দিকে এ কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত জোনাব আলী উথলী গ্রামের মহসিন আলীর ছেলে। পুলিশের দাবি, তিনি একজন মাদক ব্যবসায়ী।
জীবনননগর থানার ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, একাধিক মাদক মামলার আসামি জোনাব আলীকে আটক করার জন্য গতরাত ৩টার দিকে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের অংশ হিসেবে পুলিশ জীবননগর সন্যাসিতলায় পৌঁছালে জোনাব আলী পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জোনাব আলী।
ওসি আরো বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ওয়ান শুটারগান, দুই রাউন্ড গুলি ও তিনটি হাসুয়া এবং এক বস্তা ফেনসিডিল জব্দ করে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নরেন্দ্রপুর এলাকায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছব্দুল মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল রবিবার রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঝিনাইদহ র্যাব-৬ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এএসপি গোলাম মোর্শেদ সাংবাদিকদের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নরেন্দ্রপুর এলাকায় চেকপোস্ট বসায় র্যাব। এ সময় ছব্দুল মণ্ডলকে থামাতে সংকেত দিলে সে র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। পরে র্যাবও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থলে সে মাড়া যায়।
তিনি আরো জানান, এ সময় সেখান থেকে একটি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ১০০ বোতল ফেনসিডিল, ১৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।