অনলাইন ::
পাহাড়ি ভাতার মতো দুর্গম হাওর অঞ্চলে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শিগগিরই হাওর ভাতা চালু হচ্ছে। এ ভাতায় সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোণা জেলার সরকারি কর্মকর্তারা পাবেন।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০১৭-এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হাওর এলাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে সর্বশেষ জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কিশোরগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস হাওর ভাতা চালু করার জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এর আগে হাওর অঞ্চলে কর্মরত অন্যান্য জেলা প্রশাসকরাও হাওর ভাতা চালু করার জন্য একাধিকবার দাবি জানিয়েছেন। দীর্ঘদিনের এই দাবির প্রেক্ষিতে এবার তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. মুয়াজ্জেম হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, পাহাড়ি ভাতার মতো প্রণোদনামূলক হাওর ভাতা প্রচলনের জন্য কাজ চলছে। এবিষয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হবে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এই প্রস্তাব প্রেরণ করা হবে। জনপ্রশাসন কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন এই ভাতা চালু করার প্রয়োজন আছে তাহলে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ও যদি সম্মতি দেয় তাহলে এই ভাতা চালু হবে। তার আগে না।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীকে বলেন, হাওর অঞ্চলে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা অনেক কম। সেখানে নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে। কিছু কিছু এলাকা পাহাড়ী এলাকা থেকেও দুর্গম, বন্ধুর, অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ। জেলা প্রশাসক বলেন, পাহাড়ি ভাতার মতো হাওর অঞ্চলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাওর ভাতা দেওয়া হলে তারা প্রণোদনা পাবে, খুশি হবে। এতে কাজের গতি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, এসব এলাকার পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রণোদনা হিসেবে হাওর ভাতা চালু করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের হাওর ও পাহাড়ি এলাকা অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক বেশি অনুন্নত। দুর্গম এসব এলাকায় নাগরিক সুবিধা বলতে কিছুই নেই। তবে বিদেশী সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারির ফলে পাহাড়ি এলাকায় এখন শিক্ষার আলোসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কিছুটা বেড়েছে। শিক্ষা, চাকুরি ও ভূমিসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পাহাড়িরা আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু হাওর অঞ্চলের মানুষ এখনও এসব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে এ সুযোগ হাওরেও সম্প্রসারণে দাবি দীর্ঘদিনের।
হাওর অঞ্চলের কর্মকর্তারা বলেন, পাহাড়ে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাগণ পাহাড়ি ভাতা পান। আমরা অনেক দিন যাবত হাওর ভাতা চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু হাওর ভাতা যে তিমিরে ছিল, সেখানেই রয়ে গেছে। আমাদের দাবি, হাওর অঞ্চলে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘হাওর ভাতা’ চালু করা হোক।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, হাওর অঞ্চলে কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে, এজন্য কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হতে পারে এসব বিষয় পর্যালোচনা করতে হবে। এখনই হবে কি না তা বলা যবে না।
বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মজিবুর রহমান বলেন, হাওর ভাতা চালু হলে দেশের সাতটি জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই ভাতা পাবেন। কারণ, হাওর অঞ্চল হিসেবে ধরা হয় সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা জেলাকে।