স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জে এখনো কৃষকদের কাছ থেকে বোরোধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়নি। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে ধানসংগ্রহ করতে সংশ্লিষ্টরা হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য জেলা খাদ্য শষ্য সংগ্রহ কমিটি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন জানালেও এখনো কোন সাড়া মেলেনি। এদিকে সরকারিভাবে যৎসামান্য ধান সংগ্রহের খবরে অখুশি সুনামগঞ্জের কৃষক। সরকারিভাবে বাম্পাল ফলনের কথা বলা হলেও কৃষকদের কাছ থেকে মাত্র মাত্র ৬ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহে প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় তারা নাখোশ। তবে চলতি সপ্তাহে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই বছর বরাদ্দের মধ্য থেকে প্রায় ১৬ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছিল। পরের বছর ফসল উৎপাদন না হওয়ায় হাওর থেকে কোনো ধান সংগ্রহ করা যায়নি। চলতি বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা আশা করেছিলেন ন্যায্যমূল্যে সরকারি গুদামে ধান দিতে পারবেন। কিন্তু অপ্রতুল মাত্র ৬ হাজার মে.টন বরাদ্দের কারণে কৃষকরা ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও ধান দিতে পারবেন না। ফলে মাঠ পর্যায়ের খাদ্য বিভাগ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বরাদ্দ বাড়ানোর যে আবেদন করেছিলেন তার জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানিয়েছেন অনেকে।
কৃষকরা জানান, মওসুমে স্থানীয় বাজারে ধানের মূল্য কম থাকে। এ কারণে সরকার কর্তৃক ক্রয়ককৃত ধানের মূল্য বেশি থাকায় সরকারকে ধান দিতে প্রস্তুত থাকেন। গত কয়েক বছর ধরে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহও তৈরি হয়েছে। কিন্তু এবার অল্প বরাদ্দের কারণে হতাশ কৃষকরা। কৃষকরা জানান, হাওরে বর্তমানে ধানের দাম ৬-৭শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই তুলনায় সরকারি মূল্য ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দর নির্ধারণ করায় অনেক কৃষকই গুদামে ধান দিতে আগ্রহী। কিন্তু সরকারি ধান সংগ্রহের অল্প বরাদ্দের কারণে হতাশ কৃষকরা। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে তারা সরকারকে ধান দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। যে কারণে কৃষকরাও বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে অধিক পরিমাণে ধান নেওয়ার জন্য মানববন্ধন, স্মারকলিপি দিয়েছে হাওর বাচাও সুনামগঞ্জ বাচাও আন্দোলন ও ক্ষেত মজুর সমিতি। দুটি সংগঠন বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়ে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, সরকারি ঘোষণায় আমরা হতাশ। কৃষকরা এবার সরকারকে ধান দিতে আগ্রহী হলেও সরকার বরাদ্দ করেছে একেবারে কম। তাই কৃষকরা ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও সরকারকে গুদামে ধান দিতে পারবেন না। এ কারণে স্থানীয় ফড়িয়ারা কৃষকের প্রয়োজন বুঝে আগেই অল্পমূল্যে তাদের ভাড়ার খালি করে নিজেরা ধান সংগ্রহ করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধানসংগ্রহের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছি। তাছাড়া বরাদ্দ বাড়িয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান দ্রুত সংগ্রহ করার জন্যও বলেছি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মোস্তফা বলেন, আমরা বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি। এখনো এ ব্যাপারে কোন সাড়া পাইনি। তবে গতকাল শুক্রবার আমরা জামালগঞ্জে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেছি। শিগ্রই প্রতিটি উপজেলা থেকে বরাদ্দকৃত ধান সংগ্রহ করা হবে।