গোলাম মোস্তফা রাঙ্গা::
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরেরবাড়ী গ্রামের কৃষক পরিবারে জন্ম মোঃ আসাদুল হাবিবের। তিনি মোঃ ফজলুল হক ও মোছাঃ আয়েশা বেগমের বড় সন্তান। হতাশায় ভূগতে থাকা আসাদুল হাবিব ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ৪৫ হাজার টাকা পুজি নিয়ে বৌদ্দের বাজারে এইস এস টেলিকম এন্ড মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার নামে ব্যবসায় শুরু করেন। এখন তিনি দৈনিক ৩০০ হতে ৬০০ হারে রুজি করে মাসিক আয় প্রায় ১৫ হাজার টাকায় নিয়ে এসেছেন। ২ ভাই ও ১ বোনে মধ্যে আসাদুল সবার বড়। সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় ২০১৩ সালে পাঙ্গারাণী লক্ষ্মীপ্রিয়া স্কুল এন্ড কলেজ এসএসসি পাশ করেই থেমে যায় পড়ালেখার গতি। এইচএসসিতে ভর্তি হলেও সংসারের হাল ধরতে গিয়ে ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া হয়নি আসাদের। শুরু হয় আয়ের উৎস খোঁজার জন্য দৌড় ঝাপ। বাবার যা আছে তাতে হাত লাগিয়েও সংসারের উন্নতি করা যাচ্ছে না। তিনি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ খুজতে থাকেন। উপায় জানা না থাকায় মোবাইল মেকারদের কাছে সার্ভিসিং-এর কাজ শেখার চেষ্টা করেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় সে পেশায় যাওয়া হয়নি আসাদের। হতাশায় যখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলেন আসাদকে। ঠিক তখনিই মীরেরবাড়ীর মোঃ ইয়াকুব আলী খন্দকারের জামাই কুড়িগ্রাম জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক গোলাম মোস্তফা রাঙ্গা তার শ্বশুড়বাড়ী এলাকার হতাশাগ্রস্থ যুবকদের কারিগরী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শ্বশুড় বাড়ীতে ৩২ জন পুরুষ ও ৩২ জন নারীকে ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট হতে ১০ দিন মেয়াদী গ্রামভিত্তিক অস্ত্রবিহীন ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ কাজে লাগায় আসাদুল হাবিব। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিবসের উপজেলা পর্যায়ের অতিথি বক্তাগণের উদ্বুদ্ধকরণ বক্তব্যে অনুপ্রাণীত হয়ে হিসাবরক্ষক গোলাম মোস্তফা রাঙ্গার সহযোগীতায় কুড়িগ্রাম আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোন সেট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের ৩৫ দিন মেয়াদী কোর্স সম্পূন্ন করেন। মোবাইল ফোন সেট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রধান প্রশিক্ষক এমদাদুল হকের অনুপ্রেরণায় এবং সক্রিয় সহযোগীতায় নেমে পড়েন নতুন এক জীবন যুদ্ধে। বৌদ্দের বাজারের ৫০০ টাকা মাসিক ভাড়ায় একটি ঘর নিয়ে খুলে বসে এইস এস টেলিকম এন্ড মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার। পুঁজি অল্প হওয়ায় ছোট্ট পরিসরে শুধু মাত্র সাভির্সিং দিয়েই চলতে তার পেশা। রাজারহাট উপজেলায় আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের শাখা থাকলে সেখান থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসায়ের পরিধি বৃদ্ধি করা যেত। অল্প পুজি হলেও দুঃখ নাই। তিনি এখন দোকান থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে সংসারে আর্থিক সহযোগীতা করতে পেরে খুবেই খুশি। ছোট ভাই বোনদের পড়াশনাও সহযোগীতা করতে পারছেন আসাদ। এখন মন থেকে হতাশা তো গেছেই সেই সাথে বেড়েছে ব্যস্ততা। প্রতিদিনের রুটিনেও এসেছে পরিবর্তন। এখন ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে ভাবার আর সময় নাই। শুধুই সামনে এগিয়েছেন।