1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
জামালগঞ্জে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা সিলেটে শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসারকে অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর কার্যক্রম ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর দাবিতে মতবিনিময় সুনামগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ বন্যার্তদের সহায়তায় সুনামগঞ্জে শিল্পকলা একাডেমির ব্যতিক্রমী ছবি আঁকার কর্মসূচি জগন্নাথপুরে শিক্ষিকা লাঞ্চিত: দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিলের দাবি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পান্নার মরদেহ হস্থান্তর করলো মেঘালয় পুলিশ কাদের সিদ্দিকী বললেন: বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এক নয় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে : ইউনিসেফ

সুনামগঞ্জ পৌরসভার গোড়া পত্তনের কথা-৩: কল্লোল তালুকদার চপল

  • আপডেট টাইম :: সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮, ৬.৫০ পিএম
  • ৫৮৪ বার পড়া হয়েছে

প্রথম সাধারণ নির্বাচন :
স্থানীয় স্বশাসন (local self-government) ব্যবস্থাকে উন্নয়নের জন্য ব্রিটিশরাজ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে। এ লক্ষ্যে মিউনিসিপ্যালিটি অ্যাক্টও সংশোধনের চিন্তাভাবনা চলতে থাকে। এ সময় আসামের লাট সাহেব অর্থাৎ চিফ কমিশনার Sir Archdale Earle প্রদেশের বিভিন্ন পৌরসভার কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য উদ্যোগী হন। এরই ধারাবাহিকতায় আসে সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচন। ইতোমধ্যে পৌরসভাকে পাঁচটি ওয়ার্ডে ভাগ করাসহ ভোটার তালিকাও প্রণীত হয়।
সামাজিক রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে তখনও ইংরেজপ্রদত্ত উপাধিধারী রায় বাহাদুর, রায় সাহেব, খান বাহাদুর প্রভৃতি অভিজাতগণেরই আধিপত্য। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরাজ তখনও সর্বসাধারণের ভোটাধিকারের বিষয়টি স্বীকার করেনি। ভোটাধিকার ছিল শুধুমাত্র করদাতাগণের (rate-payer)|। একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ প্রদান করলেই কেবল করদাতার মর্যাদা অর্জন করা যেতো। সমাজের উচ্চবিত্তের মানুষেরাই ছিলেন মূলত রেইটপেয়ার। তাই ভোটার সংখ্যাও ছিল সীমিত। তবে পৌরএলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণকেও ল্যাট্রিন ট্যাক্সসহ নির্ধারিত পৌরকর tax দিতে হতো। আইনানুযায়ী রেইট আর ট্যাক্স দুটি ভিন্ন বিষয় ছিল। ট্যাক্সপেয়ারদের ভোটাধিকার ছিল না। সাধারণত নিম্নবিত্তের মানুষেরাই ছিলেন ট্যাক্সপেয়ার। অবশ্য দরিদ্র অপারগ নাগরিকগণ ট্যাক্স প্রদানের দায় হতে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারতেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুযায়ী (sections 95 and 91 of Act III B.C. of 1884) কমিশনারগণ ট্যাক্স প্রদানের দায় হতে আবেদনকারীকে রেহাই দিতে (exemption) পারতেন। উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মে অনুষ্ঠিত পৌর কমিশনারগণের সভার কার্যবিবরণীর ৪নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবেদনকারী কুরপান, পার্বতী প্রস্টিটিউট, অষ্টমী পাটনি ও শশী পাটনিকে ট্যাক্স প্রদানের দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।১৯
আইন অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনে কেবলমাত্র কমিশনার পদের জন্য লড়বেন প্রার্থীগণ। চেয়ারম্যান পদটি তখনও সাব-ডিভিশনাল অফিসারের জন্য নির্ধারিত। এই প্রথম রেইটপেয়ারগণকে পৌর বোর্ডের মোট কমিশনার পদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচিত করার অধিকার দেওয়া হয়। অর্থাৎ মোট ১৩ সদস্যবিশিষ্ট পৌর বোর্ডের চেয়ারম্যান ও চারজন কমিশনার ব্যতীত বাকি আটজন কমিশনার রেইটপেয়ারগণকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে হবে। লক্ষণীয় বিষয় হলো এই যে, উচ্চশিক্ষিত (দুয়েক জন ছাড়া) এবং সমাজের উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন অভিজাত ব্যক্তিগণ তখন কমিশনার পদপ্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিস্ময় জাগে, যখন দেখি রায় সাহেব (রায় বাহাদুর উপাধী সম্ভবত পরবর্তীতে লাভ করেন) অমরনাথ রায়ের মতো উচ্চপদস্থ (High Profile), সংস্কৃতিবান ব্যক্তিত্বও সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কমিশনার পদপ্রার্থী ছিলেন!
অমরনাথ রায় সম্পর্কে খ্যাতিমান সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর অগ্রজ সৈয়দ মুর্তাজা আলী (১৯৪২-৪৪ সালে তিনি সুনামগঞ্জের এসডিও) লেখেন, ‘আমি যখন সুনামগঞ্জে তখন তিনি অবসর জীবন যাপন করছেন। তাঁর মাঝে একাত্মভাবে মিশে ছিল উচ্চশিক্ষা, মার্জিত রুচি ও বিনয়। প্রতœতত্ত্ব ও বৈষ্ণব সাহিত্যে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। তার কোনো কোনো প্রবন্ধ ইউরোপীয় প্রাচ্যতত্ত্ববিদ কর্তৃক প্রশংসিত হয়। ভূতপূর্ব মন্ত্রী মুনাও’ওর আলীর পরিবারের সঙ্গে তাঁর খুব হৃদ্যতা ছিল। মুসলমান অফিসারদের সঙ্গে তিনি মেলামেশা করতেন বলে গোড়া হিন্দুরা তাঁকে পছন্দ করতেন না। তাঁর পরিবার উচ্চশিক্ষিত ও মার্জিত রুচির ছিলেন। তাঁর ভাই এস.এন. রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির কৃতবিদ্য অধ্যাপক ছিলেন। আর একভাই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের অধ্যাপক’।২০

অমরনাথ রায় লোক্যাল বোর্ডেরও চেয়ারম্যান ছিলেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ও প্রথম শ্রেণির অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট। পলাশ পরগণার জমিদার হলেও তাঁর আদি নিবাস ছিল ঢাকার মানিকগঞ্জে। তাঁর আরেক ভাই মন্মথ রায় ছিলেন চিরন্তনী শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন উঁচু মাপের সমঝদার। এই পরিবার সম্পর্কে কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত ‘চল্লিশের দশকের ঢাকা’ গ্রন্থে লেখেন, ‘বীণামন্দির নামে সঙ্গীতযন্ত্রের ছোট একটি দোকানে বসে সঙ্গীতের আড্ডা মন্মথ রায় বা পিলু বাবুকে কেন্দ্র করে। […] পিলুবাবু সিলেট সুনামগঞ্জের জমিদার পরিবারের লোক, যদিও বাড়ি ছিলো ঢাকার মানিকগঞ্জে। সুশিক্ষিত সংস্কৃতিসম্পন্ন এই পরিবারের কয়েকজনই অধ্যাপক ছিলেন। পিলুবাবু সেকালের গ্র্যাজুয়েট।’২১
সুনামগঞ্জের কৃতী সন্তান জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সাহেবের বর্ণনা মতে, তখনকার সময়ে সুনামগঞ্জের প্রধান দুটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের একটি ছিল রায় বাহাদুর অমরনাথের পরিবার এবং অপরটি মাহ্ফুজ আলী সাহেবের বাসা। রায় বাহাদুর সম্পর্কে আজরফ সাহেব স্মৃতিচারণ করে লেখেন, ‘পলাশ পরগনার জমিদার রায় বাহাদুর অমর নাথ রায়ের বাংলোতে সন্ধ্যা সমাগমে জমায়েত হতেন হিন্দু-মুসলামন সকল উন্নত রুচির ভদ্রলোক। সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হতো। সেতার বা এ¯্রাজের আলাপ হতো। তাঁর বাড়িতে থাকতেন ছাত্র-শিক্ষক মিলে প্রায় ত্রিশজন। রায় বাহাদুর ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যে বিরাট পা-িত্যের অধিকারী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাশ করার পর এমএ পর্যন্ত পড়েছিলেন। পরীক্ষা না দিলেও ইংরেজিতে তাঁর জ্ঞান ছিল অনবদ্য। শেক্সপীয়র থেকে বানার্ড শ’র মতো অতি আধুনিক ইংরেজি নাট্যকার কবি বা সাহিত্যিকের রচনা ছিল তাঁর কণ্ঠস্থ। তাঁরা সাত ভাইর মাঝে কেবল মাত্র প্রমথ রায় অসুস্থ হয়ে ডিগ্রি নিতে পারেননি। অপর ছয় ভাই-ই ছিলেন গ্র্যাজুয়েট। তাদের মধ্যে দুইজন ছিলেন পিএইচডি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ভূতপূর্ব অধ্যক্ষ ড. সত্যেন্দ্রনাথ রায় এবং দর্শন বিভাগের ভূতপূর্ব অধ্যক্ষ ড. বিনয়েন্দ্র নাথ রায় হলেন রায় বাহাদুরের কনিষ্ঠ সহোদর।’২২ বর্তমান সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে ভাবতে অবাক লাগে, অতীতে কোন মাপের লোকজন পৌরসভার কমিশনার পদের জন্য নির্বাচনে লড়েছেন এবং কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন!
নির্বাচনকে ঘিরে জনমনে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। সুনামগঞ্জ পৌরসভার ইতিহাসের প্রথম নির্বাচন বলে কথা! অবশেষে এলো বহু প্রতীক্ষিত সেই নির্বাচন। তারিখ: ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ খ্রি.। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে যথাসময়ে ভোটগ্রহণ ও গণনা সম্পন্ন হয়। নির্বাচন সংক্রান্ত আইনের ২৭নং বিধির নির্ধারিত পদ্ধতিতে ভোটগণনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরপরই পৌরকমিশনারগণ বিশেষ সভায় মিলিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ এবং বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন। নির্বাচনের ফলাফল ছিল নি¤œরূপ:
ওয়ার্ড নং- ১ এবং ২:
নাম প্রাপ্ত ভোট
মুন্সী ফয়েজ আলী ৩৭
বাবু ঈশ্বর চন্দ্র চৌধুরী ৩৩
বাবু গুরুদাস সিংহ ৩২
কালিজয় ভট্টাচার্য্য ১৪
ওয়ার্ড নং- ৩:
রায় সাহেব অমরনাথ রায় ৭৩
লালা বিজয় কুমার দে ৬৬
মৌলভি আব্দুল মজিদ ৩৩
ওয়ার্ড নং- ৪:
বাবু গিরিশ চন্দ্র রায় ৯৩
মুন্সী কাদির বক্স ৮৪
বাবু নরেন্দ্র লাল রায় ৭৯
বাবু অভয়ানন্দ দাস ৪৮
বাবু বিরজা সুন্দর শর্মা ২৬
যদিও ওয়ার্ডসমূহের সীমানা ঠিকঠাকভাবে পাওয়া যায়নি, তবে কোনো কোনো প্রার্থীর বাসার অবস্থানের ভিত্তিতে অনুমান করা যায় যে, ১নং ও ২নং ওয়ার্ড যথাক্রমে ষোলঘর ও হাছননগর। এই দুই ওয়ার্ডের নির্বাচন একত্রে অনুষ্ঠিত হয়। ৩নং ওয়ার্ড উকিলপাড়া, ৪নং ওয়ার্ড বাজার, মোক্তারপাড়া ও আরপিননগর প্রভৃতি এলাকা এবং ৫নং ওয়ার্ড তেঘরিয়া এলাকা। ৫নং ওয়ার্ডে সম্ভবত দেওয়ান গণিউর রেজা একক প্রার্থী ছিলেন। ঐ দিন দুপুর ২ ঘটিকায় পৌর কমিশনারবৃন্দ নির্বাচন সংক্রান্ত নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী উপরিউক্ত ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করেন এবং নিম্নলিখিত প্রার্থীগণকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।২৩ বিজয়ী কমিশনারগণ হলেন:
ওয়ার্ড নং ১+২ : মুন্সী ফয়েজ আলী ও বাবু ঈশ্বরচন্দ্র চৌধুরী।
ওয়ার্ড নং ৩: রায় সাহেব ওমরনাথ রায় ও লালা বিজয় কুমার দে।
ওয়ার্ড নং ৪: বাবু গিরিশচন্দ্র রায়, মুন্সী কাদির বক্স এবং বাবু নরেন্দ্র লাল রায়।
ওয়ার্ড নং ৫: দেওয়ান গণিউর রেজা চৌধুরী।
নব নির্বাচিত ও মনোনীত (nominated) কমিশনারবৃন্দের প্রথম সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৭ এপ্রিল ১৯১৭ খ্রি. তারিখে। নির্বাচিত কমিশনারগণের মধ্যে কেবল লালা বিজয়কুমার দে সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন। মনোনীত তিনজন কমিশনার হলেন মৌলভি মাহ্ফুজ আলী, বাবু ভবানী কিশোর মজুমদার এবং সহকারী সার্জন। সভায় সভাপতিত্ব করেন পৌর চেয়ারম্যান অর্থাৎ এসডিও সাহেব। সভ্যগণ আসন গ্রহণের পর সভাপতির অনুমতি নিয়ে রায় সাহেব অমরনাথ রায় আসাম প্রদেশের চিফ কমিশনার Sir Archdale Earle-এর প্রতি ধন্যবাদ প্রস্তাব আনয়ন করেন। প্রদেশের স্থানীয় স্বশাসন পদ্ধতি সংস্কার এবং বিশেষ করে সুনামগঞ্জ পৌরসভার উন্নতিবিধানে চিফ কমিশনারের তীব্র ব্যাকুলতার জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সভায় প্রস্তাব পাস হয়। কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, না-চাইতেই দুই তৃতীয়াংশ কমিশনার নির্বাচনের অধিকার প্রদান করায় করদাতাগণও (rate payers) লাট সাহেবের প্রশংসা করেন। নির্বাচন পদ্ধতির প্রচলন মিউনিসিপ্যাল পদ্ধতির ইতিহাসে এক নূতন অধ্যায়ের সূচনা বলেও সভ্যগণ মনে করেন। নিম্নে ঐ সভার কার্যবিবরণীর ১নং দফাটি উদ্ধৃত হলো:
1. On the Commissioners taking their seats. Rai Saheb Amar Nath Roy, with the permission of the chairman moved the following resolutions:
(i) That the commissioners of the Sunamganj Municipality in meeting assembled, place on record their profound sense of gratitude to the Hon’ble Sir Archdale Earle for His Honour keen solicitude for the advancement of local self-govt. in the province in general and for the welfare of this municipality in particular, of which His Honour has given yet another proof by conferring on the rate payers of the Sunamganj Municipality the right to elect of their commissioners – a great boon which the rate payers appreciate all the more in as much as they got it without having had even to ask for the same. 24
অমরনাথ রায়ের এই প্রস্তাব সমর্থন করেন বাবু ভবানীকিশোর মজুমদার এবং সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। পাসকৃত রেজুলেশনের একটি কপি চিফ কমিশনারের ব্যক্তিগত সহকারীর নিকট প্রেরণ করা হয়। রায় সাহেবের প্রস্তাবটি সভার কার্যবিবরণীতে রেকর্ডভুক্ত করা হয়। চিফ কমিশনারের উদ্দেশে কার্যবিবরণীর ৫৬ পৃষ্ঠায় রেকর্ডকৃত অমরনাথ রায়ে বক্তব্যটি নিম্নে উদ্ধৃত হলো:
““ Sir, before we late up the days’ business, I beg to move a resolution which I am sure will have your hearty support.
Under the beneficent administration of the present Chief Commissioner, local self-government in the province has turned a new leaf in its History – and proofs of the fact are to be formed in the enactment of a very progressive piece in of legislation in the shape of the local Self-government Act, in the introduction of the elective system in several municipalities and in the increase in the number of municipalities with elected commissioners may reasonably hope that proposed municipal legislation which is now in the making will be even a more liberal measure then the local Self-government Act itself.”25
এই সভাতেই ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণীর ৫৮ পৃষ্ঠার ৪নং দফায় তা লিখিত আছে। নির্বাচনের পদ্ধতিটিও বেশ সহজ-সরল। পৌর-চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পদে রায় সাহেব অমরনাথ রায়ের নাম প্রস্তাব করেন। মৌলভি মাহ্ফুজ আলী এই প্রস্তাব সমর্থন করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়।
উল্লেখ্য, সুরমা উপত্যকা সম্মিলনীর ঐতিহাসিক ৬ষ্ঠ অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল সুনামগঞ্জে। শ্রীমতি সরোজিনী নাইডু সভানেত্রী ও জগন্নাথপুরের পাইলগাঁও এর জমিদার ব্রজেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী অভর্থনা সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯২৪ সালের ২২-২৩ আগস্ট এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের সঙ্গে পৌরকমিশনার মুন্সী ফয়েজ আলীর নামটিও জড়িয়ে আছে। কেবল সুনামগঞ্জে নয়, সমগ্র সুরমা উপত্যকায় ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সম্মিলনীর এই অধিবেশনটি ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এই অধিবেশনের মাধ্যমেই সুরমা উপত্যকা সম্মিলনীর সকল কার্যক্রম কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণাধীনে নেওয়া হয় এবং সুরমা উপত্যকায় ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দালন ক্রমশ জোরদার হতে থাকে।
সম্মিলনী উপলক্ষ্যে দৃষ্টিনন্দন ও বৃহদায়তনের একটি সভামঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল। এ ধরনের মঞ্চ সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক ইতিহাসে সম্ভবত এটিই প্রথম। মঞ্চটি তৈরি করা হয়েছিল ষোলঘর নিবাসী পৌরকমিশনার মুন্সী ফয়েজ আলী সাহেবের বসতবাড়ির প্রাঙ্গণে। তৎকালীন সাপ্তাহিক জনশক্তি ও মাসিক কমলা পত্রিকা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সম্মিলনীর সংবাদ প্রকাশ করে। মাসিক কমলা পত্রিকা সম্মিলনীর বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখে, ‘সম্মিলনীর প্রথম অধিবেশন আরম্ভ হইল ৩টায়। আমরা বহু পূর্ব্ব হইতে সেই বিস্তৃত মণ্ডপে অধীরহৃদয়ে সভানেত্রী মহোদয়ার অপেক্ষা করিতে লাগিলাম। সেই বৃহৎ মণ্ডপ ছিল লোকে লোকারণ্য। মণ্ডপের সম্মুখে মৃদু-তরঙ্গোচ্ছ্বাসিত ভাদ্রের ভরানদী সুরমা, অপর তীরে সুনীল অম্বরে মাথা ঠেকাইয়া পর্ব্বতশ্রেণী, আর ভিতরে অগণিত উন্মুখহৃদয়Ñ সে দৃশ্য শুধু সভানেত্রীরই মত কবির বর্ণনীয়।২৬ সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী এ-জাতীয় রাজনৈতিক সম্মিলনী নিজ বসতবাড়ির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হতে দেওয়া, সেই সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। সরকারের বিরাগভাজনের জন্য তা-ই যথেষ্ট। এ-কথা জেনেও মুন্সী ফয়েজ আলী বিনা দ্বিধায় তাতে সম্মত হয়েছিলেন।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার সঙ্গে মুন্সী ফয়েজ আলী দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন। তাছাড়া আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের সময় যখন পৌরসভাকে পুনরায় টাউন কমিটিতে রূপান্তরিত করা হয়, তখন তাঁর পুত্র আবু হানিফা আহমদ (নবাব মিয়া)ও দীর্ঘদিন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ফয়েজ আলী সাহেবের পৌত্র প্রয়াত অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর জাহানুর পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে জনাব জাহানুর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অবশ্য তিনি জয়লাভ করতে পারেননি। (চলবে)
তথ্যসূত্র:
19. Resolution Book of Sunamganj Municipality, 1915-1921; Proceedings of a meeting of the Commissioners of the Sunamganj Municipality held on 23rd May 1915; Page: 5
২০. সৈয়দ মুর্তাজা আলী, আমাদের কালের কথা, উৎস প্রকাশন, ঢাকা, ২০০৯ খ্রি.; পৃ. ১৯৭
২১. কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত ও সরদার ফজলুল করিম, চল্লিশের দশকের ঢাকা, সাহিত্য প্রকাশ, জানুয়ারি ১৯৯৪ খ্রি.; পৃ. ৭১
২২. দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, আত্মজীবনী, উৎস প্রকাশন, ঢাকা, আগস্ট ২০০৭ খ্রি.পৃ. ৪৪
23. Ibid, Proceedings of an extraordinary meeting of the commissioners held on 22.02.1917 at 2 P.M. under rule of the elections rules; page: 49-50
24. Ibid, Proceedings of a meeting of the Commissioners held on 17.4.17; page: 55
25. Ibid, Proceedings of a meeting of the Commissioners held on 17.4.17; page: 56
২৬. কমলা, মাসিক পত্রিকা, ১ম বর্ষ, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যা, আশ্বিন ও কার্তিক ১৩৩১ বঙ্গাব্দ, পৃ. ৩৩২।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!