এক.
যে দেশ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য, একটি স্বাধীন দেশে লাল সবুজের পতাকা উড়ানোর জন্য, মুক্তভাবে উচ্চস্বরে কথা বলবার জন্য একনদী রক্তের তৈয়ার হয়েছিলো, একজন শ্রেষ্ঠ কবির শ্রেষ্ঠ কবিতাখানির শ্রেষ্ঠ আহ্বানে বাঙালি মানুষ যেখানে জীবনের বাজি ধরেছিলো- সেই দেশ আজ চরমভাবে বাতিকগ্রস্থ; বাতিকগ্রস্থ সামাজিকব্যধী হয়ে উঠা মাদকের কাছে। আগে যখন আমাদের দেশে খুব সহজে বনফুল পাওয়া যেতো, মাছ পাওয়া যেতো, ঘি পাওয়া যেতো কিংবা খাটি গরুর দুধ পাওয়া যেতো এখন ঠিক তেমনিভাবেই পাওয়া যায় মাদক দ্রব্য। যা মানুষ, পরিবার, সভ্যতা, বিনোদন, খেলাধুলা ও উপাসনাকে গিলে খায়। খেয়ে সাফ করে নয়ে সবকিছু। চাইলে এই প্রবন্ধে কয়েকটি মাদক দ্রব্যের নাম বলতে পারতাম, ইচ্ছে করেই বলছি না। বললে এসব নষ্ট জিনিসের প্রচার হবে। নাম বলে এসব সর্বনাশা দ্রব্যের প্রচার করতে চাইনা আর। পাঠক, এটাকে ছোট্ট একটা প্রতিবাদ হিসেবে ধরে নিতে পারেন। শুধু বলবো এটা সর্বনাশা। সর্বনাশা মানে হচ্ছে সর্ব কিছু নাশ করে যে। এর বেশি বিশ্লেষণ করতে হবে বলে মনে হয় না। এবার আমি আমার মূল আলোচনায় আসি।
দুই.
সম্প্রতি আমাদের দেশে সবচে আলোচনার বিষয় হচ্ছে মাদক দ্রব্য নির্মুল অভিযান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি এ অভিযানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ পালনের । তারা দেশ থেকে মাদক নির্মুলের শপথ গ্রহণ করেছেন। এজন্য তাদের অভিযান ক্ষুরধার বলতে পারেন। অভিযান পরিচালনার সময় মাদকব্যবসায়ীরা তাদের বাধা দেয়। গুলি বিনিময় হয়। এতে মাদক ব্যবসায়ীরা মারা যাচ্ছে। দেশে এ পর্যন্ত শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে হাজার হাজার। ছোট বড় সকল ধরণের ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করছেন তারা। যাদের বিরুদ্ধেই প্রমাণ মিলছে তাদের বিরুদ্ধেই অভিযান হচ্ছে। যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন অথচ ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের আলাদা নামের তালিকাও করা হচ্ছে। আমি এটাকে সম্পূর্ণভাবে ইতিবাচকভাবে দেখবো। ইতিবাচকভাবে দেখবো একারণেই যে, মাদক মরণ নেশা। একজন মানুষ যদি আত্মহত্যা করে তাহলে সে একাই মরলো। আর যদি মাদক সেবন বা বিক্রি করে তাহলে সে একটি পরিবার ও একটি সমাজকে হত্যা করে। এটা মনে রাখা ভালো যে, একজন মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকসেবীর দ্বারা সমাজ কোনো প্রকারে ইতিবাচক কোনো কিছুই আশা করতে পারে না। এটা করলে বোকামি বৈ কিছুই হবে না।
তিন.
এ অভিযানকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান বলবার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিযান বলবো। তাঁর নির্দেশের এই অভিযান বর্তমানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িছে। আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টির বিচারে এই অভিযানের কোনো বিপক্ষদল থাকবার কথা না। ধানক্ষেতে ভালো ফলন পেতে হলে ‘আখামা’ গজিয়ে উঠা আগাছাকে উপরে ফেলতে হবে। তেমনি সমাজ থেকে এদের উপরে ফেলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী একটি ভাষণে এর পরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এভাবেই দেশ এগিয়ে যাবে কামনা আমাদের। বলছিলাম মাদকের কথা। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে লেখাপড়া করেও তারা ততটা জ্ঞান রাখবেন না যতটা জ্ঞান রাখবেন প্রতিটি ভুক্তভোগী পরিবার। আর এইসব পরিবারের ভয়বহতা দেখে বাকীরা নিজের পরিবারকে বাঁচাতে এ অভিযানের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করবেন। এবং এটা করা উচিৎ বলে মনে করি। মাদক নির্মুলে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে আমরা একেকজন যোদ্ধা হয়ে দেশ থেকে মাদক নির্মুলে অবদান রাখতে পারি। দেশ যেদিন মাদকের কড়াল থাবা থেকে মুক্তিপাবে সেদিন বুক ছাপড়িয়ে বলতে তো পারবো আমিও একজন মাদক বিরোধী যোদ্ধা ছিলাম। আর যদি এমনটা না করি আর আমার ছেলে বা ভাই মাদকের ছোবলে পড়ে যায় তখন লুকিয়ে দেয়ালে মাথা ছাপড়ানো ছাড়া কাজ থাকবে না।
চার.
এদেশ থেকে মাদক উঠে যাক্। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সতেরো কোটি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক। শুভ শক্তির জয় হোক। নেশা মুক্ত বাংলাদেশ হোক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে আওয়াজ দেবো শুনবে সারা বিশ্ব। আমরা মাদকহীন জাতি। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক আমাদের। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কারিগরেরা অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি যুদ্ধারাই যেনো হয়ে উঠেন স্বপ্ন দ্রষ্টাদের কারিগর। তাদের হাতে যেনো কারো স্বপ্ন আবার মুখ থুবরে না পড়ে। তাদের হাত থাকা পিস্তলের ট্রিগার যেনো কোনো নিরীহ মানুষের বুক ফোটা না করে। বাঁচতে যেয়ে মারার আড়ালে যেনো বিচার বহির্বুত হত্যাকাণ্ড না হয় সেটা সঙ্গত কারণে আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি। আপনাদের মনে রাখতে হবে, কোনো নিরপরাধ ভাই বা বোন যদি আপনাদের ট্রিগার ছাপা বন্দুকের সামনে পড়ে যান তাহলে কিন্তু মানবতা ভুলণ্ঠিত হবে। মৃত্যু হবে একটি পরিবারের। ইতিহাস রচিত হবে নির্মমতার। এমনটা কাম্য নয়। যেমনটা আমাদের কামনার দ্বীপশিখা জ্বালিয়েছি যদি এমনটা করে দিতে পারেন তাহলে জাতি আপনাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানের আসনে বসিয়ে রাখবে। বেঁচে যাবে কয়েকটি মৃত্যু পথযাত্রী পরিবার। মাদক মুক্ত দেশ হোক, মানবতারও জয় হোক।
শেষ.
সুনামগঞ্জেও বিভিন্ন উপজেলায় এমন অভিযান হচ্ছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জেও অভিযান হচ্ছে; অব্যাহত আছে। এ উপজেলার সাধারণ মানুষ আমার সাথে অবশ্যই একমত পোষণ করবেন যে, আগের তুলনায় মাদকের বিক্রি ও সেবনের পরিমান একেবারেই তলানিতে নেমে এসেছে। তবে একেবারে যে নির্মুল হয়েগেছে তা বলা যায় না। পুলিশ প্রশাসনের সতর্ক অবস্থানে খুব তারাতারি আমরা অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের উপস্থিতিতে মাদকমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করবার স্বপ্ন দেখা অমুলদ হবে বলে আমার মনে হয় না। সেই শ্লোগানটাই বেঁচে উঠুক সার্থক ভাবে। ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরোদ্ধে।’
লেখক: সাংবাদিক