স্টাফ রিপোর্টার::
স্মৃতি রাণী নাথ (৬৫)। সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা শত্রুমর্দন এলাকার নিভৃতচারী একজন ধামাইল শিল্পী ও শিক্ষক। তাকে বলা হয় ধামাইলের জীবন দায়িনী। গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী প্রবীণ এই ধামাইল শিল্পী দিনভর নতুন প্রজন্মের কিশোরীদের ধামাইলের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। প্রায় ৩০ জন কিশোরী তার কাছ থেকে ধামাইলের বন্দনা, জলভরা, রূপ, বাঁশি, কুঞ্জ, মিলনসহ ধামাইলের নানা বিষয় হাতে কলমে শিখেছেন। স্মৃতি রাণী নাথের মতো ধামাইলের প্রশিক্ষকদের সমন্বয়ে ধামাইলের ব্যতিক্রমধর্মী এই কর্মশালা উপভোগ করেছেন নতুন প্রজন্মের ধামাইল শিল্পীরা। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের রামকৃষ্ণ আখড়া প্রাঙ্গনে হাওরপাড়ের ধামাইল নামক একটি সংগঠন দিনব্যাপী ব্যতিক্রমধর্মী এই কর্মশালার আয়োজন করে।
হাওরপাড়ের ধামাইল (হাপাধা) সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি হাওরাঞ্চলের সাংস্কৃতিক সম্পদ ধামাইলের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। হাওরের স্থানীয় উৎসবগুলোতে নিয়মিত ধামাইলের আসর বসানো হচ্ছে। তবে আধুনিক নানা নৃত্য ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে ধামাইল আড়াল পড়ে যাচ্ছে। হাওরাঞ্চলের জনপ্রিয় ব্যতিক্রমধর্মী এই নৃত্য ফিরিয়ে আনতে প্রবীণ শিল্পীদের দিয়ে নবীণ শিল্পীদের ধামাইল প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩০জন শিক্ষার্থীরা ধামাইলের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। প্রথম বারের মতো ধামাইলের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েছে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। আগামী শুক্রবার সিলেট শহরে কর্মশালায় অংশ নেওয়া এই শিক্ষার্থীরা বিশেষ একটি অনুষ্ঠানে ধামাইল পরিবেশন করবে।
ধামাইল কর্মশালায় প্রশিক্ষণ প্রদান করেন প্রবীণ ধামাইল শিল্পী স্মৃতি রাণী নাথ, হাওরপাড়ের ধামাইল’র সভাপতি সজল সরকার, সাধারণ সম্পাদক বিমান তালুকদার, নিগার সাদিয়া, রেখা সরকার, যতীন্দ্র দেব নাথ প্রমুখ।
হাপাধার সভাপতি সজল সরকার বলেন, হাওরের ঐতিহ্য হলো ধামাইল নৃত্য। এই ঐতিহ্য এখন হারানোর পথে। সাধারণ মানুষের প্রাণের স্পন্দন ধামাইলের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হাপাধা কাজ করছে। হাওরের প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে ধামাইলের পুরনো শিল্পীদের খুজে তাদের দিয়ে নতুনদের শেখানো হচ্ছে। আজকের এই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা আগামী শুক্রবার সিলেটে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ধামাইল পরিবেশন করবে।