আশিস রহমান, অতিথি প্রতিবেদক::
দোয়ারাবাজার উপজেলায় মৌসুমী ফল কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিগত বছরের ন্যায় এবছর কাঠালের আশানুরূপ ফলন হলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কাঠাল বাজারজাত করতে হিমশিম খাচ্ছেন কাঠাল চাষী ও ব্যবসায়ীরা। ফলে ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন চাষীরা।
উপজেলার বোগলা ও লক্ষীপুর ইউনিয়ন এবং সুরমা ইউনিয়েনের টেংরাটিলা, আলীপুর, আজবপুর, গিরিসনগর, টিলাগাও, মহব্বতপুর কাঠাল চাষের জন্য বিখ্যাত। এই এলাকাগুলোতে কোনো ধরনের সরকারি/বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই পারিবারিক ও বানিজ্যিকভাবে কাঠালের চাষ হয়। এখানকার সুমিষ্ট কাঠালের সুনাম রয়েছে জেলা জুড়ে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সুরমা ইউনিয়েনের টেংরাটিলা ও আলীপুর গ্রামের প্রতিটি বসতবাড়ির আঙিনায়, ছোট ছোট টিলা ও রাস্তার পাশে লাগানো আছে সারিবদ্ধ কাঁঠালগাছ। গাছের ঢালে ঢালে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন সাইজের দেশীয় জাতের কাঠাল। গাছে গাছে কাঠালের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ও গাছপাকা কাঠালের রসালো ঘ্রাণ পথচারীদের নজর কাড়ে। ছোট্ট চারা গাছ থেকে শুরু করে মাঝারি ও বড় সাইজের গাছ গুলোতে তাকালে মনে হয় যেন শুধুই কাঁঠালের মিতালী। স্থানীয় চাষী ও ব্যবসায়ীদের কাঠাল সংগ্রহ ও বাজারজাত করনে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। জানা যায়, প্রতিদিন সকালে গাছ থেকে পাকা-আধাপাকা কাঠাল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে এবং দুপুরে উপজেলা ও জেলা সদরের বিভিন্ন হাট-বাজারে নৌকাযোগে কাঠাল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। পরে বাজারে সরবরাহকৃত কাঠাল পাইকারি ও খুচরা দরে ক্রেতাদের নিকট বিক্রয় করা হয়ে থাকে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুকূলে থাকায় এখানকার কাঠালচাষীদের কাঠাল বাজারজাত করণের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। নৌপথে কাঠাল বাজারজাত করণ কম ব্যয়বহুল হলেও এতে সময়ক্ষেপন হওয়ায় ঠিক সময়ে কাঠাল বাজারজাত করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন একাধিক কাঠালচাষী। সময়মতো কাঠাল বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা ও আলীপুরে নৌকাযোগে বিভিন্ন বাজারে কাঠাল সরবরাহ করতে দেখা গেছে। টেংরাটিলার কাঠালচাষী শের মাহমুদ ভূঁইয়া জানান, প্রতি বছরই কাঠালের আশানুরূপ ফলন আসে। এখানকার কাঠালচাষীরা এখনো প্রচারবিমুখ। ব্যয়বহুল এবং নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বৃহত্তর টেংরাটিলার কাঠাল জেলা সদর ও জেলা সদরের বাইরে পাঠানো যাচ্ছেনা। যেকারনে পর্যাপ্ত কাঠাল থাকা স্বত্বেও স্থানীয় বাজারগুলোতে এর চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অন্যান্য এলাকার তুলনায় সস্তায় কাঠাল বিক্রি হওয়ায় কাঠালচাষী ও ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ লাভবান হচ্ছেন না।পার্শ্ববর্তী আলীপুর গ্রামের কাঠাল ব্যবসায়ী কাজল মিয়া বলেন, ‘স্থানীয় সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর-টেংরাটিলার নিকটবর্তী খাসিয়ামারা নদীতে সেতু নেই এবং উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম টেংরাটিলা থেকে আলীপুরগামী রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এই নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আমরা স্থানীয় বাজারের বাইরে উপজেলা ও জেলা সদরের বাজারগুলোতে কাঠাল বাজারজাত করতে পারছিনা।’ কাঠালসহ কৃষিজাত ব্যবসার প্রসারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা ও জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন কাঠালচাষী ও ব্যবসায়ীরা। এব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, উপজেলার টেংরাটিলা, আলীপুর ও আশাপশের এলাকার মাটি কাঠাল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। লাভজনক এ মৌসুমী ফল চাষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সবসময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে। দিন দিন উপজেলাব্যাপী কাঠাল চাষের প্রসার ঘটছে। ভবিষ্যতে বানিজ্যিকভাবে কাঠাল চাষের অধিকতর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন হলে কাঠাল ব্যবসার আরো প্রসার ঘটবে।