প্রাগ-জ্যোতিষপুরের প্রাগঐতিহাসিক গহ্বর থেকে উঠে এসে এক আলোকিত স্তম্ভ আলো ছড়িয়ে ভিত্তি গাড়লো সাংস্কৃতিক রাজধানী সুনামগঞ্জের শিল্পকলা একাডেমির সবুজ প্রাঙ্গণে। সে আলোক ছটা ছড়িয়ে পড়ুক বাঙ্গালির কর্মকৃতির উৎস এবং ধর্ম,কর্ম,নর্ম ভূমির সীমানায় এবং চিহ্নিত সীমা ছাড়িয়ে উন্মুক্ত আকাশে। বিশ্বজুড়ে।
সেই কোন আদ্যিকাল থেকে উত্তরের খাসিয়া জৈন্তা পাহড়ের রহস্যময় গিরীখাত বেয়ে নেমে আসা স্বচ্ছতোয়াধারা রেনুকা নদী হয়ে বয়ে চলে লাউর রাজ্যের বুকচিরে। সে নদীর তীরে তীরে বঙ্গসংস্কৃতির ঐতিহ্যের চিহ্নসূত্র অংকিত হয়ে আছে বাংলা মহাভারতের আদি রচয়িতা কবি সঞ্জয়সহ আরো অনেক জন্মধন্য জ্ঞানী-গুনীর জন্মগৌরবে। গৌরবময় সে আদি সংস্কৃতির সাথে আমাদের শেকড়ের বন্ধন গ্রথিত হলো ৩০ জুন সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে শিল্পীত মহাকবি সঞ্জয়স্মারক স্তম্ভের শুভ উদ্বোধনে।
কালের অভিঘাতে রেনুকা তার নামটি হারালেও বাংলাকাব্যের আদিধারা প্রাকচৈতন্য যুগ ছুঁয়ে বর্তমান পরিচয় যাদুকাটা নদীর তীর ছাড়িয়ে ছড়িয়ে আছে সুরমা,কালনী,বৌলাই,রক্তি,কংস,সোমেশ্বরীর তীরে তীরে।বৈষ্ণবকবি রাধারমণ,মরমীকবি হাসনরাজা,বাউল শাহ্ আব্দুল করিম,দুরবিন শাহ্’র জন্ম ও কৃতি হাওর পাড়ের গান ও সুরকে জেলা ও দেশের সীমা ছাড়িয়ে পরিব্যপ্ত করেছে বিশ্ব পরিমণ্ডলে।কতশত লোককবি,নাগরিক কবির আকুতিভরা বাণী ও সুর ঢেউ তুলে গ্রামীণ সবুজের ভাঁজে ভাঁজে আর জল জ্যোছনার নগরে। আউল,বাউল,বৈষ্ণব,পীর,ফকিরালী, সুফি,মরমী কত বিচিত্র ভাবধারার মিলিত স্রোত একাকার হয়ে এ জেলার ভাবজগত সমৃদ্ধ করে লোকসংস্কৃতির তীর্থভূমি রূপে পরিচয়কে করেছে উন্মোচিত,সুস্পষ্ট। সাংস্কৃতিক রাজধানীর গৌরব মুকুট তাঁর মস্তকে শোভা পাবে না তো আর কোথায়?
কৃতজ্ঞতা, আমাদের গর্ব শেকড় সন্ধানী গবেষক,পিএসসি’র চেয়ারম্যান বাংলা একাডেমী পদকপ্রাপ্ত কবি ড.মোহাম্মদ সাদিকের প্রতি।মূলত তাঁরই ভাবনাপ্রসূত এবং পরিকল্পিত গৌরব ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন এ সঞ্জয় স্মৃতিস্তম্ভ এবং তাঁর মাধ্যমেই এর শুভ উদ্বোধন।ধন্যবাদ শিল্প ও সুন্দরের নিরন্কুশ অনুরাগী সুযোগ্য জেলা প্রকাশক মোঃ সাবিরুল ইসলামকে, যিনি এক বছরেই সুনামগঞ্জের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হয়ে এর সার্থক উপস্থাপনের নিরলস প্রয়াসী এবং এ স্মারক স্তম্ভের শৈল্পীক রূপায়ন ও উদ্বোধনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে একাগ্র ছিলেন।