কাউসার চৌধুরী::
আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বি.এনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩ মেয়র প্রার্থী স্বশিক্ষিত। ৯ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের আয় সর্বোচ্চ। স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর জামায়াতের আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সর্বোচ্চ ৩৪ মামলার আসামী। বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিমের আয় ৮ প্রার্থীর মধ্যে সর্ব নি¤œ। আর কোন পেশা কিংবা আয় নেই সিপিবি বাসদের প্রার্থী আবু জাফরের। ৯ প্রার্থীর মধ্যে ৫ জনই ব্যবসায়ী। নির্বাচন কমিশনে নিজের স্বাক্ষরিত মেয়র প্রার্থীদের দেয়া হলফনামায় এসকল তথ্য পাওয়া গেছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আলীমুজ্জামান সিলেটের ডাককে বলেছেন, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেয়া হলে কিংবা তথ্য গোপন করলে প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিলের আইন রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মোট আয়ের পরিমাণ ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৪০৩ টাকা। নগরীর ছড়ারপাড় (সুগন্ধা-৬৫) এর বাসিন্দা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ.এস.সি। অতীতে ৪ মামলার আসামী হলেও সকল মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। তিনি বাড়ী, দোকান ভাড়া থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও শেয়ার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ লাখ ১১ হাজার ৪০৩ টাকা আয় করেন। তার মোট ৭ কোটি ৪২ লাখ ৯৪ হাজার ৮০২ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে অস্থাবর ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৯৩ হাজার ৪১২ টাকা এবং স্থাবর ৩ কোটি ৪৫ লাখ ১ হাজার ৩৯০ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫২ টাকা, স্ত্রীর নামে ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা (ব্যাংকে জমাকৃত) ১ কোটি ৫৫ লাখ ৪২ হাজার ৯২৯ টাকা, ও স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৫ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ টাকা, শেয়ার ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের জীপ গাড়ী, নিজের নামে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণ ও স্ত্রীর নামে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার স্বর্ণ, নিজ নামে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ টাকার ও স্ত্রীর নামে ৩৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, নিজ নামে ৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে ৪৬ লাখ ২০ হাজার ৮৫০ টাকার ও স্ত্রীর নামে ৩১ লাখ ৪ হাজার ৮০১ টাকার ৮ ৭ এর পৃ. ১ ক. দেখুন
অকৃষি জমি, নিজ নামে উত্তরাধিকারী সূত্রে প্রাপ্ত ১০ লাখ টাকা দামের যৌথ দু’তলা দালান ও স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৯ টাকার আবাসিক/ বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। এছাড়াও সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, সিলেট সিটি কর্পোরেশন শাখায় বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ৬৮ লাখ ৮০ হাজার ২৮২ টাকা দেনা রয়েছে বলে হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপি’র মনোনীত মেয়র প্রার্থী, দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হলেন স্বশিক্ষিত। নগরীর কুমারপাড়ার (বাসা নং- ১, ব্লক-বি) বাসিন্দা আরিফুল হক চৌধুরীর মোট আয়ের পরিমাণ ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ৪২০ টাকা। তার মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৩৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪২৭ টাকা। তবে স্থাবর সম্পদ হিসেবে জমির পরিমাণ উল্লেখ করলেও তিনি এর দাম হলফনামায় উল্লেখ করেননি। বর্তমানে ৭ মামলার আসামী আরিফুল হক চৌধুরীর পেশা সি.এন.জি ফিলিং স্টেশন ব্যবসায়ী।
হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন, কৃষিখাত থেকে নিজে ৭৬ হাজার ৭২০ টাকা ও নির্ভরশীলদের ৩০ হাজার টাকা, বাড়ী ভাড়া থেকে নিজে ৩ লাখ ১১ হাজার ৪০০ টাকা ও স্ত্রীর ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৫০ হাজার নিজে ও ৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৬২ টাকা স্ত্রী, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র থেকে নিজে ৩ লাখ ২০ হাজার ও স্ত্রী ৪ হাজার ১৩৮ টাকা আয় করেন। এছাড়াও মেয়ের মালিকানাধীন ফ্ল্যাট থেকে আয় করেন ১ লাখ ৮ হাজার টাকা। হলফনামায় ৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করলেও বর্তমানে সুবহানীঘাটস্থ মেসার্স সুরমা সি.এন.জি এন্ড ফিলিং স্টেশন ও সিলেট সদরের ভাটা শ্যামলনগরের আফছা হক চৌধুরী ডেইরি ফার্ম চালু আছে। বাকী ৫টির বর্তমানে কার্যক্রম নেই।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে নগদ ১৯ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৭ টাকা, ৬০৯৬ দশমিক ৪৯ ব্রিটিশ পাউন্ড, ৫৩০৬ দশমিক ১২ ইউ.এস ডলার, নিজ নামে ব্যাংকে ৭৯ লাখ ৩৬ হাজার ৯১৩ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১৩ লাখ ১৫ হাজার ২২২ টাকা, নিজ নামে ৬৫ লাখ ৩৬ হাজার ৬০০ টাকার শেয়ার ও ১৩ লাখ ১৫ হাজার ২৭৫ টাকার প্রাইজবন্ড, স্ত্রীর নামে ২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, নিজ নামে ৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকার যানবাহন (সিলেট-গ-১১-২২৩) ও স্ত্রীর নামে ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দামের পিকআপ (সিলেট- ন -১১-০২১৮), নিজ নামে ৩০ হাজার টাকার স্বর্ণ, স্ত্রীর নামে ১ লাখ ১২ হাজার টাকার স্বর্ণ ও মাতা- সন্তানদের ১৫ লাখ টাকার স্বর্ণসহ নির্মিত অলংকার, নিজ নামে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার, স্ত্রীর নামে ৪৫ হাজার টাকার ও মাতা সন্তানদের ৫ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী, নিজ নামে ১ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫০ টাকার ও মাতার নামে ৩ লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে কৃষি জমি ৮ দশমিক ৫৩ একর, অকৃষি জমি ৫ দশমিক ৫৯ একর, স্ত্রীর নামে ০.০৮ একর ও মাতার নামে ০.০৩ একর, ভূমি রয়েছে। নিজ নামে দালান ২টা, সেমিপাকা ৩টা, স্ত্রীর নামে সেমিপাকা ১টা, নিজ নামে একটি ডেইরি ফার্ম ও নির্ভরশীলদের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হলেও এসকল সম্পদের মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও পূবালী ব্যাংক লিঃ স্টেডিয়াম মার্কেট শাখায় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮২ হাজার ২৫০ টাকা ও সিটি ব্যাংক লিমিটেড সিলেট শাখায় আরিফুল হক চৌধুরীর ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩ টাকা দেনা রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়।
নগরীর পায়রা ৮৪/২ (ঝরনারপাড়) এলাকার বাসিন্দা এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের আয় ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। পেশায় আইনজীবী জুবায়েরের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৪ টি মামলা চলমান রয়েছে। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের নগদ অর্থ- রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার কোন দায় দেনা নেই। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তার ০.০৩৮০ একর জমি রয়েছে। এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এল এল বি পাশ।
বিএন.পির বিদ্রোহী প্রার্থী ও নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পদক বদরুজ্জামান সেলিমের মোট আয় ২ লাখ টাকা। নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা ( ৫১ হাজারীবাগ) বদরুজ্জামান সেলিম ¯œাতক পাশ। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৬টি মামলা চলমান রয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী সেলিমের ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা জমা রয়েছে। স্ত্রীর রয়েছে ২২ ভরি স্বর্ণ। নিজের ২ টা এসি, ৪টা ফ্রিজ, ১টি টিভি, ৪টা খা, ২টা চেয়ার, ১ সেট সোফা বলতেই তার অস্থাবর সম্পদ। স্থাবর সম্পদের মধ্যে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত বাড়ী রয়েছে যাতে তিনি ৬ অংশের মধ্যে ১ অংশের মালিক। তার কোন দেনা নেই।
সিপিবি বাসদের মেয়র প্রার্থী আবু জাফর নগরীর শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা। স্বশিক্ষিত জাফরের কোন পেশা যেমন নেই তেমনি আয়ও নেই। হলফনামায় তিনি নিজেকে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী বলে উল্লেখ করেন। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও স্থাবর সম্পদের মধ্যে ০.০৭৭৫ একর ভূমিতে স্থাপিত দু’তলা ভবনের কথা হলফনামায় উল্লেখ করেন
ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন খান নগরীর মজুমদারপাড়ার (সোনালী-১১৫) বাসিন্দা। ডি.এফ.এম পাশ মোয়াজ্জেম খানের আয় ১১ লাখ ২০ হাজার ৬২৪ টাকা। তিনি দক্ষিণ সুরমার নর্থইস্টি মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনায় যুক্ত। অবস্থাবর সম্পদ হিসেবে তার রয়েছে নগদ ২০ হাজার টাকা, ব্যাংকে ১ লাখ, ৪০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৩০ হাজার টাকার আসবাবপত্র এবং স্থাবর সম্পদ হিসেবে ২০০ শতাংশ কৃষি জমি রয়েছে।
জল্লারপাড়ের (শাপলা-১০) বাসিন্দা, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোঃ এহছানুল হক তাহের দাখিল পাশ। ব্যবসায়ী তাহেরের আয় ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তার রয়েছে নগদ ৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ২০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি স্বর্ণ ও ৫ লাখ টাকা, নিজ নামে ২ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ১ লাখ টাকার আসবাবপত্র ও ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যবসার মূলধন রয়েছে। স্থাবর সম্পদ রয়েছে যৌথ মালিকানার ১৪ শতক ভূমি।
শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা মুক্তাদির হোসেন তাপাদারের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ.এস.সি পাশ। পেশায় ফল ব্যবসায়ী মুক্তাদিরের আয় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার নগদ ১ লাখ টাকা ও ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকাই হলো সম্পদ।
মেয়র প্রার্থী কাজী জসিম উদ্দিন ‘মাইকিং কাজে নিয়োজিত’ বলে নিজের পেশা উল্লেখ করেন। স্বশিক্ষিত জসিমের চাকুরী থেকে আয় ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। তার রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ২ হাজার, ১০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হলফনামা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে সম্পাদনের পর মনোনয়ন পত্রের সাথে জমা দেয়া হয়। ভোটাররা যাতে প্রার্থী সম্পর্কে জানতে পারেন এজন্যে হলফনামা নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।