বিশেষ প্রতিনিধি::
সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এক অসহায় এতিম কন্যা। আদালত তার সন্তানের পিতৃপরিচয়ের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ রিপোর্টের নির্দেশনা দিলেও পুলিশ চোখের সামনে দাপিয়ে বেড়ানো আসামিকে খুঁজে পাচ্ছেনা। আসামীর কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে উল্টো আদালতে বাদী আপোস করেছেন মর্মে মিথ্যা ও জালিয়াতমূলক আপসনামা জমা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অসহায় বাদী আদালতে নারাজি দিলে আদালত তা গ্রহণ করে একজন পরিদর্শক মর্যাদার অফিসারকে অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। এদিকে সন্তানের পিতৃপরিচয়ের জন্য আদালতে শরণাপন্ন হওয়ায় প্রতিনিয়ত তরুণিকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতার আশির্বাদপুষ্ট অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তার ও পরিবার। এখন তিনি এখানে সেখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রাসেল মিয়া নামক অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী ইউপি চেয়ারম্যান ও একাধিক মামলার আসামী সাহাব উদ্দিন সাহেলের ছোট ভাই। সাহেল নানা অপরাধমূখ কর্মকা-ের কারণে এলাকায় সমালোচিত। কিছুদিন আগে ফেইসবুকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে অবৈধ আব্দারের জন্য প্রায় আধাঘন্টা লাইভ দিয়ে খিস্তিখেফড় করে সমালোচিত হয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন এখন ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক দশক আগে ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের হতদরিদ্র মৃত আনজব আলীর মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় এলাকার দেলোয়ার হোসেন নামক এক যুবকের। এক বছরের মধ্যে এক পুত্র সন্তান জন্মদানের পর স্বামী দেলোয়ার ভরণপোষণ করতে না পেরে পালিয়ে যান। অসহায় ওই তরুণি ছাতক পৌর শহরে এসে মানুষের বাসায় ঝিয়ের কাজ নেন। এই সময় তার পরিচয় হয় উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সাহেলের ছোট ভাই ছাতক পৌর শহরের বাসিন্দা রাসেল মিয়ার সাথে। এক পর্যায়ে রাসেল মিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর রাতে বিয়ের আশ্বাসে অসহায় তরুণির সর্বনাশ করে বখাটে রাসেল। এর কিছুদিন পর আবারও বিয়ের আশ্বাসে তরুণিকে নিয়ে ছাতকের একটি ভাড়া বাসায় ওঠে গোপনে স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই তরুণি অন্তসত্তা হয়ে পরেন। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাসেল মিয়া তরুণির গর্ভপাতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ২০১৫ সালের ১ জুন রাাসেল মিয়া তাকে মারপিট করে ভাড়াটে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়। রাসেল মিয়ার শারিরিক মানসিক নির্যাতনে লাইলি বেগম অসুস্থ হয়ে পড়লে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি বিভাগে রেজি নং-২৪৯/৮৫৮৯৩ তে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিঃ নং ১৫২৭৪ বেড নং-২ এ ভর্তি হওয়ার পর এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এই ছেলের জন্মের পরই সকল ভয়কে পিছনে ফেলে তিনি সন্তানের পিতৃত্বের লড়াইয়ে নামেন। রাসেলের কাছে সন্তানের পিতৃপরিচয় দাবি নিয়ে গেলে সন্ত্রাসী দিয়ে তাকে হুমকি ধমকি দেওয়া হয়।
ওই তরুণি এলাকায় এসে গণমান্য ব্যক্তিবর্গসহ অনেকের কাছে বিচার চান। কিন্তু ছাতক আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতার আশির্বাদপুষ্ট ও প্রভাবশালী ইউপি চেয়ারম্যানের ভাইয়ের কারণে অনেকে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এক পর্যায়ে ওই ওই অসহায় তরুণি ২০১৬ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ২৯৩/২০১৬ নং মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন আছে।
জানা গেছে আদালতে মামলা দায়েরের পর ইউপি চেয়ারম্যান সাহেল ও তার ভাই অভিযুক্ত রাসেল মিয়া তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে আপসের মিথ্যা হলফনামা তৈরি করে আদালতে প্রেরণ করেন। থানা পুলিশ প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এবং বড় অংকের আর্থিক উৎকোচের মাধ্যমে মিথ্যা আপসনামা আদালতে প্রেরণ করেছে বলে বাদীর অভিযোগ। আদালতে দাখিলকৃত মিথ্যে হলফনামার বিষয়টি অবগত হওয়ার পর ওই তরুণি আদালতে নারাজি দাখিল করেন। নারাজির পর আদালত চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন নারাজি গ্রহণ করে মামলাটি পুনতদন্তের নির্দেশ দেন। বিচারক আসামীর বিরুদ্ধে স্বাক্ষীপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা না করায় তদন্ত প্রতিবেদন সন্তোষজন নয় বলে মন্তব্য করে পরিদর্শকের নি¤েœ নয় এমন কর্মকর্তা দিয়ে তদন্তের জন্য ছাতক থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। গত ১৯ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পুলিশ এখনো আদালতের নির্দেশানুসারে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এদিকে গত ১ আগস্ট সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৈকত ভট্টাচার্য্য আসামী রাসেলকে হাজির করে ডিএনও টেস্ট করানোর জন্য ছাতক থানার ওসিকে লিখিত চিঠি দিয়েছেন। আদালত ও মেডিকেল কলেজের আদেশের পরও পুলিশ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো আসামী রাসেলকে খুজে পাচ্ছে না।
মামলার বাদী ওই তরুণি বলেন, আমার সন্তানের পিতা রাসেল মিয়া। সে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করেছে। সন্তান আমার পেটে আসার পর তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এখন পিতার পরিচয় নিয়ে মামলা করায় আমাকে হত্যার হুমকি ধমকি দিচ্ছে। তার ভয়ে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। সে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ডিএনএ টেস্ট করাচ্ছেনা। তিনি বলেন, ডিএনএ টেস্ট করালেই প্রমাণ হয়ে যাবে কে আমার সন্তানের পিতা।
অভিযুক্ত রাসেল মিয়ার মোবাইল ফোনে ৯বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ছাতক থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান বলেন, আসামী রাসেল পালিয়ে গেছে। তাই তাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা তাকে খুজে বের করে ডিএনএ টেস্ট করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাব। পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।