অনলাইন ডেক্স:
কৃষিক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রতিকূল পরিবেশ অঞ্চলের জন্য কৃষি কর্মসূচি গ্রহণ, সংকটাপন্ন অঞ্চলের পানি উত্তোলনের সতর্কতার বিষয় যুক্ত করে নতুন ‘জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আইন ২০১৮-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘আমাদের আগের কৃষিনীতি ২০১৩ সালের। এর মধ্যে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। সেটাকে আরেকটু হালনাগাদ করে নিয়ে আসা হয়েছে। ওটাকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করা হয়েছে। অনেকগুলো বিষয় এখানে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো আগের নীতিতে নেই। এটা বেশ বিস্তারিত ও সমৃদ্ধ। আগের নীতিমালায় ছিল ১৮টি অধ্যায় ও ৬৩টি অনুচ্ছেদ।
সেখানে এখন ২২টি অধ্যায় ও ১০৬টি অনুচ্ছেদ ও উপ-অনুচ্ছেদ হয়েছে। ’
নতুন কৃষিনীতির অধ্যায়গুলো তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘কৃষি উন্নয়নে গবেষণার ১৯টি ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অন্য অধ্যায়গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি উপকরণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ, জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষির পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিশেষ আঞ্চলিক কৃষি, বিশেষায়িত কৃষি, নিরাপদ খাদ্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদন, কৃষি বিপণন, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষিতে যুবশক্তি, কৃষিতে বিনিয়োগ, কৃষি সমবায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষি খাতে শ্রম, সমন্বয় ও সহযোগিতা, বিবিধ বিষয়—এর মধ্যে মেধাস্বত্ব, জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) এগুলো রয়েছে। ’
শফিউল আলম বলেন, আগে যেটা ছিল না, ন্যানো প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়টি এখানে আনা হয়েছে। মান ঘোষিত বীজ উৎপাদন ও নগরকেন্দ্রিক কৃষি সম্প্রসারণ সেবা—এই বিষয়টিও আগে ছিল না। ন্যানো প্রযুক্তিকে গবেষণার বিষয় হিসেবে দেখানো আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ফসলের রোগ, ফসলের জাতভিত্তিক পুষ্টি চাহিদা নির্ণয়, পুষ্টি আহরণক্ষমতা বৃদ্ধিতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ন্যানো সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমির গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এগুলো সবই গবেষণার অংশ। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সেবা, উদ্ভাবনী সম্প্রসারণ প্রযুক্তি, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের বিষয়গুলোও আগে ছিল না, নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশ অঞ্চলের জন্য কৃষি কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়টি একটি অনুচ্ছেদে বিস্তরিত বর্ণনা করা হয়েছে। কৃষি উপকরণের বিষয়টিও নীতিতে সংযোজন করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব।
শফিউল আলম আরো বলেন, সংকটাপন্ন অঞ্চলের পানি উত্তোলনের সতর্কতা অবলম্বনের কোনো ইঙ্গিত ছিল না আগের নীতিতে, এটা নতুনভাবে নিয়ে আসা হয়েছে। কৃষি যন্ত্রপাতির মান পরিবীক্ষণ, দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন ও সেবা প্রদানকারী উদ্যোক্তা গঠন বিষয়টিও নতুন নীতিমালায় সংযুক্ত করা হয়েছে। সামুদ্রিক শৈবাল কৃষির ধারণায় নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, এমন বেশ কিছু জিনিস অন্তর্ভুক্ত করে কৃষিনীতি সমৃদ্ধ করা হয়েছে। আর মন্ত্রিসভার আলোচনায় পাট নিয়ে একটি আলাদা অধ্যায় এখানে সংযোজন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিল, তিসি—এখানে যাতে আসে সেটা নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে।
পরিদপ্তর থেকে অধিদপ্তর হলো শিশু একাডেমি
বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে পরিচালকের বদলে একজন মহাপরিচালক নিয়োগের বিধান রেখে এসংক্রান্ত আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে শফিউল আলম বলেন, ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশের মাধ্যমে শিশু একাডেমি পরিচালিত হচ্ছে। নতুন আইন অনুমোদন পেলে একাডেমির পরিচালনা ও প্রশাসনের দায়িত্ব ন্যস্ত হবে একটি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ওপর। একাডেমি যেসব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কাজ করতে পারবে, বোর্ডও তা পারবে। এই ব্যবস্থাপনা বোর্ড হবে ১৭ সদস্যের। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, শিশু একাডেমিতে এত দিন একজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হতো। নতুন আইন পাস হলে মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। শিল্প, সাহিত্যে অবদান আছে এমন ব্যক্তিরা মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাবেন। সরকারি কর্মকর্তাও মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পেতে পারবেন। তবে কোন কোন শর্তে মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে তা বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে। নতুন আইন পাস হলে ‘সম্মানিত ফেলো’ নামে ফেলোশিপ চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব।