২১ জুলাই, শনিবার। ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদী উদ্যানে রচিত হলো নতুন ইতিহাস। যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম দিয়েছিলেন “বাংলাদেশ” নামক রাষ্ট্রের, সেই রাষ্ট্রেই খুনী মোশতাক-জিয়া চক্রের হাতে জাতির পিতাকে স্ব-পরিবারে প্রাণ দিতে হয়েছিল কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণের আগেই। ওরা ভেবেছিল জাতির পিতা এবং তাঁর পুত্রদের শেষ করে দিলেই সব শেষ হয়ে যাবে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট পরিকল্পনামাফিক সবই তারা করেছিল এমন কি ৩রা নভেম্বর জেল খানায় হত্যা করেছিল জাতীয় চার নেতা কে। খুশিতে টগবগ করা খুনী পশুগুলো তখনো ভাবেনি জাতির জনকের দুই কন্যা জীবিত আছেন। হয়তো ভেবেছিল মেয়ে মানুষ আর কি বা করতে পারে। আওয়ামী লীগ কে ধুলিসাৎ করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে তান্ডব চালিয়েছিল বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনীতিক দলের উপর। ইতিহাস বিকৃত করার খেলায় এত বেশী মত্ত ছিল যে, মেজর ডালিম কে দিয়ে শেখ কামালের নামে কুৎসা রটনা করতে গিয়ে নিজের স্ত্রীকে বাজার দরে বিক্রী করেছে, মার্কেট পাবার আশায়। রাজাকার -আলবদর-আলশামস দের পূর্নবাসন করে, মন্ত্রী বানিয়ে, স্বাধীন বাংলার রক্তাক্ত পতাকা পুনরায় রক্তাক্ত করেছে। স্বাধীনতার মূল্যবোধ বোঝার আগেই বিকৃত করেছে স্বাধীনতার চেতনা। কিছু স্বার্থবাদী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতাকে মোহে আবৃষ্ট করে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধ কে। বাকশাল এর অপব্যাখ্যা দিয়ে পুরো সিস্টেমটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তার ফায়দা নিয়ে “গণসংহতির” নাম করে প্রতিষ্ঠা করে বেঈমানীর জাতীয়বাদী চেতনা। কিন্তু ইতিহাস বার বার ফিরে আসে এবং নিজেই শাস্তি দেয়। যে মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শোনার পরে বলেছিল “সো হোয়াট” সেই জেনারেল জিয়ার বিভৎস লাশও খোঁজে পাওয়া যায়নি। জিয়ার পতনে স্বৈরতন্ত্র আবারও তার বিষাক্ত থাবায় আছন্ন করে প্রিয় বাংলাদেশ কে। যে বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াবার কথা সেই বাংলাদেশ মাথা নিচু করে বিশ্ব দরবারে বারে বারে নিজের অবস্থান জানান দেয়।
১৯৮১ সালের ১৭ মে তারিখে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসলেন তখনও বাংলাদেশ ভাবেনি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াবে। কারণ তখনও তিনি জননেত্রী, দেশরতœ, ভাষাকন্যা হয়ে উঠেন নি। তখনও যে তিনি যুদ্ধে নামেন নি। দলের পরিস্থিতি, দেশের পরিস্থিতি সব মিলিয়ে বাধ্য করে যুদ্ধে নামতে। দল গোছান, আন্দোলনে সামিল হন। সারা বাংলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত নিরলসভাবে ছুটতে থাকেন। পুণঃপ্রতিষ্ঠা পায় আওয়ামী লীগ। এ যে প্রিয় অনুভুতির নাম, এ যে প্রিয় বাংলাদেশের সমার্থক। ভাষা আন্দোলন থেকে আজ পর্যন্ত যত আন্দোলন হয়েছে সবকিছুর নেতৃত্বদানকারী সংগঠন। অনেক ত্যাগ এর বিনিময়ে স্বৈরাচার বিদায় হয়। গণতান্ত্রিকধারা প্রতিষ্টা পায়। কিন্তু ক্যান্টনম্যান্টওয়ালা এবং পাকি সমর্থক নাপাকী’রা পুনরায় গ্রাস করার চেষ্ঠা করে। সব কিছুকে ডিঙ্গিয়ে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রপরিচালনায় আসে আওয়ামী লীগ। ততদিনে শেখ হাসিনা জননেত্রী হয়ে গেছেন, হয়েছেন আওয়ামী লীগ সহ সবার প্রিয় আশ্রয়স্থল। পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানি বন্ঠন, মাতৃভাষার স্বীকৃতি, খাদ্য, বিদ্যৎু সহ সর্বত্র স্বপ্ন দেখা আরম্ব হয়। এ স্বপ্ন জাতির জনকের স্বপ্ন। ভাষা কন্যা, দেশরতœ বলতে থাকে বাংলার জনগণ। কিন্তু ২০০১ এ আবার নীতিতে আপোষ না করায় ছন্দ পতন। নাপাকী’রা আবার ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ২১ আগস্ট গেনেড হামলা চালিয়ে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল বাংলাদেশ কে। কিন্তু পারে নি। ১/১১ আসে। বন্দী করা হয় জাতির স্বপ্নসারথীকে। আন্দোলন-সংগ্রামে মুক্ত হন এ দেশের স্বপ্নসারথী। ২০০৮ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন সাথে সাথে চলে তার সফল বাস্তবায়ন।
আজ বাংলাদেশ শেখ হাসিনার কারণে স্বপ্ন দেখে এবং বিশ্বাস করে আপনি পেরেছেন, আপনিই পারবেন। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন, বিদ্যৎু উৎপাদন হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক কে আঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের টাকায় কিভাবে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হয় তা আজ বিশ্ব জানে। আজ কোন জায়গায় নেই বাংলাদেশ? সমুদ্রসীমা অর্জন, মহাকাশ বিজয়, মেট্রোরেল, পায়রা সমুদ্র বন্দর, ফোর লেন রাস্তা, ছিটমহল বিনিময় …। কোনটা রেখে কোনটা বলবো? স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নতি তো আপনিই করেছেন, জিডিপি বৃদ্ধি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কিংবা পৃথিবীর তৃতীয় সৎ প্রধানমন্ত্রী। মানবতার আদর্শ উদাহরণ স্থাপন করে হয়েছেন মাদার অব হিউম্যানিটি, উইমেন লিডারশীপ এওয়ার্ড কিংবা ডি-লিট !!
আজ ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদী উদ্যানের প্রিয় মঞ্চে, নেতা-কর্মীর ভীড়ে জাতির জনকের আত্না তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে কিভাবে উনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন উনার রক্তের উত্তরাধিকার। জাতির জনকের আত্না কি তা দেখে দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন নাকি সেই বিখ্যাত তর্জনী উঁচিয়ে বজ্রকন্ঠে বলছেন “বাংলাদেশ; মাথা তুলে দাঁড়াও”।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির জনকের প্রিয় বাংলাদেশ যে মাথা তুলে দাঁড়াতে শিখে গেছে এবং ধীরে ধীরে তা অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে।