মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার::
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দোয়ারাবাজারের বরসহ একই পরিবারের ৭জন নিহতের ঘটনায় উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজন হারানোর বেদনায় কান্নার রোল পড়েছে নিহতদের পরিবারে।
গত বৃহষ্পতিবার বিকালে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের মুকিরগাও গ্রাম থেকে বিয়ে করার উদ্দ্যেশ্যে নোয়াখালী যাওয়ার পথে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর থানার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের বটেরতল এলাকায় বর সহ যাত্রীবাহী নোহা গাড়ীটি পৌছা মাত্র অপর প্রান্তথেকে মালবাহী ট্রাক ও নোহার মুখোমুখি সংঘর্ষে বর, শিশু ও নারীসহ ৭জন নিহতের ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার বিকালে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ বাড়ীতে নিয়ে আসা হলে চারিদিকে স্বজন হারানোদের কান্নায় গ্রামের বাতাসভারী হয়ে ওঠে। মৃত তিন পুত্রের সারিবদ্ধ লাশ জড়িয়ে হতভাগিনী মা তাজিরুন নেছা সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে বিলাপ করতে থাকেন। বার বার জ্ঞান হারিয়ে মা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পাড়া প্রতিবেশীও তখন হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকেন।
নিহতরা হলেন, উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের মুকির গাও গ্রামের মৃত জমির আলীর ছেলে আনসার আলী (বর)(২৬), তার আপন ভাই (গাড়ী চালক) আমীর আলী(৩৫) ও আরব আলী (২০), ভগ্নিপতি ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের মিরাস আলী (৩৫)। বরের নিকাটতœীয়র স্ত্রী তিন সন্তানের জননী পারভীন আক্তার(২৭) ও তার শিশু কন্যা জাহানারা বেগম (৫), ফুফাতো ভাই আনফর আলী (২৬) ঘটনাস্থলেই মৃত’্যরকোলে ঢলে পড়েন তারা। অপর দিকে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বরের আপন চাচা একই গ্রামের আব্দুল খালেক ও ফকির আলী কে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত বর হাফিজ আনসার আলী নোয়াখালির একজি মসজিদে গত তিন বছর যাবৎ ইমামতি করে আসছেন সেই সুবাধে আনছার আলীর বিয়ে টিকটাক হয় সেখানে। তার দুই ভাই আগেই গিয়েছিলেন কনের বাড়িতে শারী ওসর্ণালঙ্কার নিয়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রওয়ানা হয়ে রাতে রাতে সেখানে পৌছে পরের দিন শুক্রবার বিয়ের দিন ধায্য ছিল। সেই আশা আর পুরন হলোনা তাদের।
বিয়ে বাড়ি পৌচার আগেই একই পরিবারের ৭ জন মৃত্যোর কোলে ডলে পড়েন।
এদিকে নিহত বরের আপন দুই ভাই কে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় নিজ বাড়ীতে জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হবে। অন্য নিহতদের মধ্যে বরের অপর ভাই গাড়ী চালক আমীর আলী মৌলভীবাজারের শ্রী মঙ্গলে, ভগ্নিপতি মিরাস আলী কে ছাতকের মির্জাপুরে, নিকটাতœীয় পারভীন আক্তার ও তার শিশু কন্যা জাহানারা বেগমের লাশ পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে দাফন করা হবে।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি সুশীল রঞ্জন দাস বলেছেন, তিনজনের লাশ বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়েছে অন্যদের লাশ নিজ নিজ বাড়ীতে দাফন সম্পন্ন করা হবে।
এদিকে মর্মান্তি সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৭ জনের নিহতের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ উপজেলার সর্বত্র এখন শোকের ছায়া নেমে পড়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। ছাতক-দোয়ারাবাজার সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের সাবেক সংসদস সদস্য ও জেলা জাপা’র সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ মাস্টার, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, দোয়ারাবাজার উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, যুগ্ন আহবায়ক সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক, জেলা জাপা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ,ন,ম অহিদ কনা মিয়া, জাতীয়পার্টির কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা জাপা’র সভাপতি আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর আলম, দোয়ারাবাজার প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নিহতদের রুহের আতœার মাগফেরাত কামনা সহ শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।