মোহাম্মদ কাজল::
আমি তো ২২ বার লাইসেন্স দেখিয়েছি,আপনারা কেন লালবাতি অমান্য করছেন?
“নিরাপদ সড়ক চাই” এর আন্দোলনকারীরা,কথা গুলো আপনাদের কে বলছি।
সেদিন আপনাদের আন্দোলনের উৎসবে আমারও ডিউটি ছিল।আপনারা সতস্ফুর্ত ভাবে মানুষকে আটকাচ্ছেন,কাগজ দেখছেন,সেলফি তুলছেন,লাইভে দেখাচ্ছেন।
আমার লাইসেন্স দেখতে পেরে সবাই হাততালি দিয়েছেন,
আমার সাথেও সেলফি তুলেছেন।সব শেষে মনে হলো,এটা একটা সেলফি উৎসব!!
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি দেখলেই তাকে আটকচ্ছেন,তাদের লাইসেন্স দেখছেন।
আমিও একদিনে মোট ২২ বার লাইসেন্স দেখিয়েছি।
আচ্ছা ধরুন,ডাক্তার চিকিৎসা দিতে অনিয়ম করছে,তখন কি করবেন,নিজেই অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্ব নেবেন?
পাইলট বিমান চালাতে অনিয়ম করেছে,নিজেই ককপিটে বসে যাবেন?
লেবু বেশি চাপলে তিতা রস বের হয়।রশি বেশি টানলে ছিড়ে যায়! অনেক হয়েছে তাই ঘরে ফেরার সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছে।
আমি একজন “নিরাপদ সড়ক চাই” এর একনিষ্ট কর্মী হিসাবে বলতে চাই, আন্দোলন স্বার্থক!
পুলিশের লোকেরা অনেক কটুবাক্য সহ্য করেছে।
নির্লজ্বের মত নিজের ছেলে মেয়ের বয়সীদের দ্বারা নিগৃহীত হয়েও, নিরব থেকেছিল। তাতেও যদি দেশের মানুষের জীবন নিরাপদ হয়,সেটা মানুষের স্বপ্নেরই অংশ।
শিশুদের কমান্ড মেনে গাড়ি চালাচ্ছে বয়োজ্যেষ্ঠরা।
আইনে না থাকলেও,অচেনা মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে গাড়ির মূল্যবান কাগজ। নিজের সম্মানের ভয়ে,শিশুদের সম্মান দেখিয়ে রাস্তায় চলাচল করেছেন অনেক গুরুজন।
ইতিহাসেও অনেক গুলো দৃষ্টান্ত যোগ হয়েছে।
মানুষ মেনেছে ট্রাফিক শৃংখলা।আপনারা দেখিয়েছেন জাতিকে। প্রশংসায় ভেসেও ছিলেন।কিছু প্লেকার্ডের অশ্লীল ভাষা,পুলিশ ও প্রশাসন কে প্রতিপক্ষ ভাবা ছাড়া আপনাদের আন্দোলন পেয়েছিল অকুন্ঠ সমর্থন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
নিহত ছাত্রছাত্রীদের সহপাঠীরা চলাচলের জন্য পেয়েছেন ৪ টি বাস।
সরকার আইনের সংশোধন সহ মেনে নিয়েছেন সকল দাবি।
সংশোধিত সড়ক নিরাপত্তা অাইনে যা থাকছে,তা পরিবহন শ্রমিক কেন,আমরা যারা অপেশাদার চালক আছি, তাদের জন্যও এক কঠিন বার্তা।
সবাইকে সাবধান হওয়া ছাড়া, সতর্ক হওয়া ছাড়া এই আইনে বিকল্প কিছু নেই।আইন পাশ হলে,আন্দোলনের প্রয়োজন নেই,এমনিতেই সড়কের নিরাপত্তা ৮০ ভাগ নিশ্চিত হয়ে যাবে।
পরিবহন মালিক, শ্রমিক আইনের বাস্তবায়ন মেনে নিয়েছেন।যারা যদি সত্যিই “নিরাপদ সড়ক চান” তাদেরকে বলছি,
থেমে যাওয়ার লালবাতি অনেক আগেই জ্বলেছিল।
ঘরে ফিরার সবুজ সংকেত চলমান।
আপনাদের কোমলমতি হৃদয়ের কাছে আহ্বান,একটি স্বার্থক আন্দোলনকে ব্যার্থ করে দিবেন না।
আমরা নিরাপদ সড়ক চাই।সড়কে মানুষের জীবন নিরাপদ হোক।
লেখক:পুলিশ কর্মকর্তা।
(লেখকের ফেইসবুক টাইম লাইন থেকে নেওয়া)