অনলাইন ডেক্স::
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার চার সন্দেহভাজন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব আরও ১০ নারী সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে। গ্রেপ্তার চারজনের সঙ্গে এই ১০ জনকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই নারীরাও আইএসের (ইসলামিক স্টেট) মতাদর্শে বিশ্বাসী। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরস্পর পরিচিত হন এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে উগ্রপন্থী মতাদর্শের দীক্ষা নেন।
এই ১০ জন হলেন সাফিয়া ওরফে সানজিদা ওরফে ঝিনুক, মাইমুনা ওরফে মাহমুদা ওরফে লায়লা, তাসনুভা ওরফে তাহিরা, শায়লা ওরফে শাহিদা, সালেহা ওরফে পুতুল, দিনাত জাহান ওরফে নওমী ওরফে বাণী, তানজিলা ওরফে মুন্নী, আলিয়া ওরফে তিন্নি ওরফে তিতলি, মনিরা জাহান ওরফে মিলি ও সাবিহা ওরফে মিতু।
এসব সন্দেহভাজন নারী জঙ্গির বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেছে র্যাব। মামলাটি তদন্ত করছেন ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহজালাল আলম। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার থাকা চার নারীকে চার দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। গতকাল রিমান্ডের প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা নিজেদের সঙ্গে সাংগঠনিক কাজে যুক্ত নারীদের নাম বলেছেন। তাঁরা কীভাবে একজন আরেকজনের সঙ্গে যুক্ত, কোথায় কার কাছে দীক্ষা নিয়েছেন, সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্ত কর্মকর্তা শাহজালাল আলম বলেন, সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে যে ১০ নারীর নাম পাওয়া গেছে, তাঁদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে তাঁরা মনে করছেন, ১০ জনই উচ্চশিক্ষিত বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ছেন।
১৫ আগস্ট চারজন সন্দেহভাজন নারীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, মুঠোফোন, পেনড্রাইভ, কার্ড রিডার ও ৯০টি জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। র্যা ব বলছে, এসব শিক্ষিত নারীকে উগ্র মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ ও জঙ্গি কাজে ভিড়িয়েছেন মাহমুদুল হাসান ওরফে তানভির নামে এক ব্যক্তি। তাঁকে গত ২১ জুলাই র্যা ব গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী আকলিমা রহমান (মনি), ইশরাত জাহান (মৌসুমি), খাদিজা পারভিন (মেঘলা) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ইসতিসনা আক্তার ঐশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যা বের দাবি, মাহমুদুল হাসান ‘নতুন ধারার জেএমবি’র দক্ষিণাঞ্চলীয় শাখার আমির। তিনি এই চার নারীকে দীক্ষা দিয়েছেন। আর এসব নারী জঙ্গিদের দলনেতা হলেন আকলিমা রহমান।
জানা গেছে বৃহস্পতিবার গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকায় আকলিমাদের বাসায় গেলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁদের মেয়ে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, এটা তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছেন না।
আকলিমার ভাইয়ের স্ত্রী বলেন, আকলিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার কারণে ঢাকার মিরপুরে একটি মেসে সহপাঠীদের সঙ্গে থাকতেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসতেন। বেশ কয়েক দিন আগে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়িতে থাকা অবস্থায় তাঁকে ১৫ আগস্ট রাতে র্যা ব আটক করে নিয়ে যায়। ওই দিন পরিবারের কেউ বুঝতে পারেননি কেন আকলিমাকে আটক করা হয়েছে। গত দুই দিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর দেখে তাঁরা অভিযোগের বিষয়টি জানতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুহীন মাহমুদুল: র্যাব জানায়, জঙ্গিনেতা মাহমুদুল হাসান ফেসবুকে তাজরিয়ান আনহার নামে উগ্র মতাদর্শ প্রচারে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে থাকেন। ফেসবুক পেজে দেখা যায়, প্রায় ৫০০ অনুসরণকারী রয়েছে। কিন্তু তাঁর জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার রশিদপুরে এবং বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁর ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধুর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মাহমুদুল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ২০১৫ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ুর রহমান হলের ২০২ নম্বর কক্ষে আসন বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও তিনি যশোর শহরের কাজীপাড়া কদমতলা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।
ওই সময়ে ২০২ নম্বর কক্ষে থাকতেন এমন একজন প্রাক্তন ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজের বিভাগের কোনো ছাত্রের সঙ্গে মাহমুদুলের বন্ধুত্ব ছিল না। অন্য বিভাগের দুই ছোট ভাই ছিলেন তাঁর প্রিয়। তাঁরা তিনজনই আহলে হাদিসের অনুসারী। ক্যাম্পাসে আহলে হাদিস মসজিদ না থাকায় তাঁরা ক্যাম্পাসে থাকতেন না।’
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুস সাত্তার বলেন, ‘ঠান্ডা ছেলে হিসেবে পরিচিত মাহমুদুল হাসান ক্যাম্পাসের আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পেয়েও থাকেনি। যশোর শহরের কাজীপাড়া এলাকায় বাড়ি ভাড়া করে থাকত।’
দুই বছর আগে মাহমুদুল একবার বাড়ি গিয়েছিলেন। এরপর আর যাননি। ২১ জুলাই র্যা ব টঙ্গী থেকে মাহমুদুলকে গ্রেপ্তার করলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
র্যাব বলছে, মাহমুদুল নবম শ্রেণিতে লেখা-পড়ার সময়ই জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৪ সালের শেষের দিকে সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি ঢাকায় আসেন। মাহমুদুল হাসান প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি। প্রশিক্ষণে ভালো করায় জেএমবি সদস্যদের প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। র্যা বের দাবি, জেএমবি সাম্প্রতিক সময়ে যেসব হত্যাকা- ঘটিয়েছে, তার নীলনকশা তৈরির সঙ্গেও মাহমুদুল জড়িত ছিলেন।