বিশেষ প্রতিনিধি::
বাঙ্গালির লৌকিক দেবী মনসাকে পূজা দিতে নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন দুর্গম হাওরের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। হাওরের পানিবন্দী গ্রামের পূজারিরা বরাবরের মতো এবারও বিভিন্ন স্থান থেকে দেবী মনসার প্রতিমা এনেছেন। প্রায় মাস খানেক সময় ধরে হাওরের গ্রামে গ্রামে পদ্মপূরাণ পাঠ করে দেবীর আগমণী বার্তা প্রচার করেছেন নারী ও পুরুষেরা। আজ শুক্রবার এই পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিমা শিল্পীরা তুলির কারু কাজ শেষ করে গতকাল বৃহষ্পতিবার চক্ষু দান করে দেবী মূর্তিকে পূজার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করেছেন।
পূজার্থীরা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে তুলনামূলক হাওর এলাকার গ্রামগুলোতে হিন্দু সম্প্রদায়ের তুলনামূলক বেশি নিম্নবর্গের লোকজন যুগ যুগ ধরে এই পূজা সাড়ম্বর উৎসবের মাধ্যমে সম্পন্ন করেন। সুরেলা কণ্ঠে নারীরা মনসামঙ্গল বা পদ্মপূরাণ পাঠ করেন মাসকাল সময়। এই সময়ে সম্পন্ন করেন নানা আচারাদি। পূজার আগের দিন সংযম পালন করেন নারীরা। পূজার দিন উপবাস করেন।
সুনামগঞ্জের হাওর উপজেলা দিরাই, শাল্লা, তাহিরপুর, জামালগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলায় প্রতি বছর মনসার পূজা দেয়া হয়। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শেষ দিন এই পুজার আয়োজন করা হয়। মনসা দেবিকে অর্ঘ্য দিতে ভক্তরা দুধ, কলা, সরা, ঘটসহ নানা উপাচার সংগ্রহ করেন। অনেকে মন্দিরে এবং অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও পুজা সম্পন্ন করেন।
হাওরের প্রবীণ লোকজন জানান, শ্রাবণ মাসের শেষ সংক্রান্তিতে মনসা দেবীর পূজা অর্চনা করে আসছেন হাওরের হিন্দু সম্প্রদায়ের নি¤œবর্গের লোকজন। শ্রাবণ মাসের শুরুতেই প্রতিটি পরিবারের নর-নারীরা পদ্মপুরাণ পাঠের মাধ্যমে মনসা দেবীর আগমনী বার্তা দেন। আসর পেতে ওই সময় পদ্মপুরাণ পাঠ হয়। এতে ছেলে মেয়েরাসহ বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ অংশ নেন।
শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের সংস্কৃতিকর্মী জয়ন্ত সেন বলেন, মনসা আমাদের লৌকিক দেবী। হাওর ভাটির নিম্নবর্গের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তুলনামূলক বেশি নিয়মিত তাকে পুজা দেন। আমাদের হাওরের অসহায় মানুষজন দুর্যোগে দুর্ভোগে তাকে পুজা দিয়ে সান্তনা খুজেন। এবারও আমাদের উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মনসা দেবি বা বিষরী পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার সূর্যের গাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পলি রায় বলেন, ভিন্নরকম আবহে হাওরের নারীরা মনসাপূজা পালন করেন। একটি মাস পদ্মপুরাণ নিয়ে ব্যস্ততায় থাকেন তারা। নানা আচার ও ব্রত পালন করে দেবিকে খুশি করেন। এবারও বরাবরের মতো দেবীকে অর্ঘ্য দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা।